৪০ বছরের পর নারীদের শরীরে নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে, হরমোনের ওঠানামা হয়, এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে। এই সময়ের খাদ্যতালিকায় দুধকে একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ধরা হয়, কারণ দুধে থাকা ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন ও পটাশিয়াম শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি ও সুরক্ষা দেয়।
প্রতিদিন দুধের সঠিক পরিমাণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে, ৪০ বছরের পর প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রায় ৮০০–১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এই চাহিদা পূরণে দিনে এক থেকে দেড় গ্লাস (২৫০–৩০০ মিলি প্রতিটি) দুধ যথেষ্ট। অর্থাৎ, প্রায় ৫০০ মিলি দুধ প্রতিদিন একজন নারীর জন্য উপকারী।
যদি কেউ দুধ খেতে না পারেন, তবে দুধের বিকল্প হিসেবে দই, পনির, বাদাম দুধ, সয়াবিন দুধ বা অন্যান্য ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে।
হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারিতা
৪০ বছরের পর নারীদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভাঙার প্রবণতা বেড়ে যায়। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি হাড়কে মজবুত করে এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত দুধ পান করলে হাড় ক্ষয়ের গতি ধীর হয় এবং বয়সজনিত ব্যথা কিছুটা কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দুধ
অনেক নারীর ৪০ বছরের পর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। দুধে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের সোডিয়াম ভারসাম্য বজায় রাখে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা হ্রাস পায়।
স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য দুধ
দুধে থাকা ভিটামিন বি১২ এবং ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও স্নায়ু দুর্বলতার ঝুঁকি তৈরি হয়। নিয়মিত দুধ পান করলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং অনিদ্রা বা অস্থিরতার সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. দুধ প্রোটিনসমৃদ্ধ, যা পেশি শক্তিশালী রাখে।
২. দুধ শরীরকে দীর্ঘসময় পরিপূর্ণতার অনুভূতি দেয়, ফলে অকারণ খিদে কম লাগে।
৩. দুধের ভিটামিন এ ত্বক ও চোখের জন্য উপকারী।
বিশেষ সতর্কতা
- • যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতায় ভোগেন,তাদের ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ বা উদ্ভিজ্জ দুধ (বাদাম, সয়া বা ওটস দুধ) গ্রহণ করা উচিত।
- • ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের স্কিমড বা লো-ফ্যাট দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- • অতিরিক্ত দুধ (প্রতিদিন ১ লিটারের বেশি) খেলে ওজন বৃদ্ধি বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডা. ফারজানা রহমান বলেন,
“নারীদের জন্য ৪০ বছরের পর হাড়ের যত্ন নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। প্রতিদিন আধা লিটার দুধ বা সমপরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তবে যাদের হজমে সমস্যা হয়, তাদের বিকল্প খাবার থেকে ক্যালসিয়াম নেওয়া উচিত। পাশাপাশি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করাও গুরুত্বপূর্ণ।”
৪০ বছরের পর নারীদের প্রতিদিন দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। দিনে আধা লিটার বা দেড় গ্লাস থেকে দুই গ্লাস দুধ যথেষ্ট। এটি হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং বয়সজনিত নানা সমস্যার ঝুঁকি কমায়।