০৬:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
গ্রাহক সুরক্ষায় বৈশ্বিক স্বীকৃতি: ‘সিপিসি গোল্ড’ অর্জন করল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের প্রতি যৌন হয়রানি: নারী সহিংসতা নিয়ে নতুন বিতর্ক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে আপিলের শুনানি ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষে ধ্বংসস্তূপের মাঝে জীবন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে স্থগিত পাঁচ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন গাজীপুরে অভিযান: সাবেক ছাত্রদল নেতা এনামুলসহ ৭ জন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতীফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে নির্বাচনের আগের পরিবেশ এখনো নাজুক: আইআরআই টাইফুন কালমায়গির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে ১১৪ জনের মৃত্যু, ঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর

ম্যাকেরেল মাছ: এক আলাদা স্বাদ, কিছু রেসিপি

ম্যাকেরেল মাছ সমুদ্রজাত মাছের একটি জনপ্রিয় প্রজাতি, যা সারা বিশ্বে সুপরিচিত। এটি মূলত পেলাজিক মাছ, মানে গভীর সমুদ্রের মাঝামাঝি স্তরে দল বেঁধে চলাফেরা করে। ম্যাকেরেলের শরীর লম্বাটে, সরু এবং মসৃণ আঁশে আবৃত। পিঠে সবুজাভ বা নীলচে রঙের দাগ থাকে এবং পাশে থাকে গাঢ় দাগের সারি। দ্রুত সাঁতার কাটতে সক্ষম এই মাছের মাংস সুস্বাদু, তেলসমৃদ্ধ এবং প্রোটিনে ভরপুর।

কোথায় পাওয়া যায়

ম্যাকেরেল সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় সমুদ্র অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর—তিন মহাসাগরেই এর বিস্তৃতি রয়েছে। বঙ্গোপসাগরেও এর ভালো উপস্থিতি আছে, যা বাংলাদেশের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় জেলেরা প্রায়ই ধরেন। ভারতের আন্দামান উপকূল, কেরালা ও গোয়া অঞ্চলেও এ মাছ প্রচুর ধরা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ম্যাকেরেল স্থানীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

জীবনচক্র ও অভ্যাস

ম্যাকেরেল মাছের জীবনকাল সাধারণত ৪ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত হয়। এরা সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রজনন করে। স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ স্পার্ম ছেড়ে পানিতে নিষেক ঘটে। ডিম থেকে লার্ভা, তারপর ফ্রাই এবং ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মাছ হয়।
ম্যাকেরেল সাধারণত দল বেঁধে চলে এবং ছোট মাছ, প্ল্যাঙ্কটন ও সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা দিনে সমুদ্রের ওপরে এবং রাতে কিছুটা নিচে অবস্থান করে।

স্বাদ ও জনপ্রিয়তা

ম্যাকেরেল মাছ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মাংসে উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এর স্বাদে এক ধরনের মিষ্টি ভাব আছে, আর তেলে ভরপুর হওয়ায় রান্নার পর রসালো হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের রান্নায় ম্যাকেরেল

বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যাকেরেল ভাজা, তরকারি ও ভুনা আকারে খাওয়া হয়। সাধারণত সরিষার তেল, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে ঝাল ঝোল তৈরি হয়। গ্রিল বা ভুনাও বেশ জনপ্রিয়।

রেসিপি ১: ম্যাকেরেল মাছের ঝাল ঝোল (বাংলাদেশি ধাঁচে)
উপকরণ: মাছের টুকরা, সরিষার তেল, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ, মরিচ গুঁড়ো, লবণ, টমেটো, কাঁচা মরিচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ধুয়ে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিন।
২. কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো ভেজে মসলা তৈরি করুন।
৩. হলুদ, মরিচ গুঁড়ো ও লবণ দিয়ে কষান।
৪. সামান্য পানি দিয়ে ঝোল বানিয়ে ভাজা মাছ দিন।
৫. কাঁচা মরিচ ফেলে ঢেকে দিন। গরম ভাতে পরিবেশন করুন।

রেসিপি ২: ম্যাকেরেল ভুনা (ভারতীয় ধাঁচে)
উপকরণ: মাছ, নারকেল কোরানো, শুকনো মরিচ, আদা, রসুন, গরম মসলা, তেল।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ লবণ-হলুদ দিয়ে মেরিনেট করুন।
২. নারকেল, মরিচ, আদা-রসুন বাটা করে মসলা তৈরি করুন।
৩. তেলে মসলা কষিয়ে মাছ দিয়ে ভুনুন।
৪. ঘন ভুনা তৈরি হলে ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রান্নায় ম্যাকেরেল

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ম্যাকেরেল ভিন্ন স্বাদে রান্না হয়। সাধারণত লেবু, লেমনগ্রাস, নারকেল দুধ, সয়া সস ও ফিশ সস ব্যবহার করা হয়।

রেসিপি ৩: থাই স্টাইল ম্যাকেরেল কারি
উপকরণ: ম্যাকেরেল টুকরা, নারকেল দুধ, লেমনগ্রাস, কাফির লাইম পাতা, কারি পেস্ট, ফিশ সস, মরিচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. নারকেল দুধ গরম করে তাতে কারি পেস্ট দিন।
২. লেমনগ্রাস ও কাফির লাইম পাতা ফেলে সুগন্ধ তৈরি করুন।
৩. মাছ দিয়ে ফিশ সস ও মরিচ মিশিয়ে রান্না করুন।
৪. ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেসিপি ৪: মালয়েশিয়ান সাম্বাল ম্যাকেরেল
উপকরণ: মাছ, লাল মরিচ বাটা, পেঁয়াজ, রসুন, তেঁতুলের রস, তেল।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ভেজে আলাদা রাখুন।
২. মরিচ বাটা, রসুন, পেঁয়াজ ভেজে সাম্বাল পেস্ট তৈরি করুন।
৩. তেঁতুলের রস মিশিয়ে কষান।
৪. ভাজা মাছ ফেলে সামান্য নাড়ুন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ম্যাকেরেল শুধু একটি মাছ নয়, বরং এক বৈশ্বিক খাদ্য ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া পর্যন্ত নানা দেশে এটি মানুষের স্বাদ-রসনার অপরিহার্য খাবার। এর পুষ্টিগুণ ও বৈচিত্র্যময় রন্ধনপ্রণালি একে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মাছ হিসেবে স্থান দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রাহক সুরক্ষায় বৈশ্বিক স্বীকৃতি: ‘সিপিসি গোল্ড’ অর্জন করল ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স

ম্যাকেরেল মাছ: এক আলাদা স্বাদ, কিছু রেসিপি

১০:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

ম্যাকেরেল মাছ সমুদ্রজাত মাছের একটি জনপ্রিয় প্রজাতি, যা সারা বিশ্বে সুপরিচিত। এটি মূলত পেলাজিক মাছ, মানে গভীর সমুদ্রের মাঝামাঝি স্তরে দল বেঁধে চলাফেরা করে। ম্যাকেরেলের শরীর লম্বাটে, সরু এবং মসৃণ আঁশে আবৃত। পিঠে সবুজাভ বা নীলচে রঙের দাগ থাকে এবং পাশে থাকে গাঢ় দাগের সারি। দ্রুত সাঁতার কাটতে সক্ষম এই মাছের মাংস সুস্বাদু, তেলসমৃদ্ধ এবং প্রোটিনে ভরপুর।

কোথায় পাওয়া যায়

ম্যাকেরেল সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় সমুদ্র অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর—তিন মহাসাগরেই এর বিস্তৃতি রয়েছে। বঙ্গোপসাগরেও এর ভালো উপস্থিতি আছে, যা বাংলাদেশের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় জেলেরা প্রায়ই ধরেন। ভারতের আন্দামান উপকূল, কেরালা ও গোয়া অঞ্চলেও এ মাছ প্রচুর ধরা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ম্যাকেরেল স্থানীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

জীবনচক্র ও অভ্যাস

ম্যাকেরেল মাছের জীবনকাল সাধারণত ৪ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত হয়। এরা সাধারণত গ্রীষ্মকালে প্রজনন করে। স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ স্পার্ম ছেড়ে পানিতে নিষেক ঘটে। ডিম থেকে লার্ভা, তারপর ফ্রাই এবং ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ মাছ হয়।
ম্যাকেরেল সাধারণত দল বেঁধে চলে এবং ছোট মাছ, প্ল্যাঙ্কটন ও সামুদ্রিক প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা দিনে সমুদ্রের ওপরে এবং রাতে কিছুটা নিচে অবস্থান করে।

স্বাদ ও জনপ্রিয়তা

ম্যাকেরেল মাছ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর মাংসে উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এর স্বাদে এক ধরনের মিষ্টি ভাব আছে, আর তেলে ভরপুর হওয়ায় রান্নার পর রসালো হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের রান্নায় ম্যাকেরেল

বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যাকেরেল ভাজা, তরকারি ও ভুনা আকারে খাওয়া হয়। সাধারণত সরিষার তেল, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ ও রসুন দিয়ে ঝাল ঝোল তৈরি হয়। গ্রিল বা ভুনাও বেশ জনপ্রিয়।

রেসিপি ১: ম্যাকেরেল মাছের ঝাল ঝোল (বাংলাদেশি ধাঁচে)
উপকরণ: মাছের টুকরা, সরিষার তেল, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ, মরিচ গুঁড়ো, লবণ, টমেটো, কাঁচা মরিচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ধুয়ে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিন।
২. কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো ভেজে মসলা তৈরি করুন।
৩. হলুদ, মরিচ গুঁড়ো ও লবণ দিয়ে কষান।
৪. সামান্য পানি দিয়ে ঝোল বানিয়ে ভাজা মাছ দিন।
৫. কাঁচা মরিচ ফেলে ঢেকে দিন। গরম ভাতে পরিবেশন করুন।

রেসিপি ২: ম্যাকেরেল ভুনা (ভারতীয় ধাঁচে)
উপকরণ: মাছ, নারকেল কোরানো, শুকনো মরিচ, আদা, রসুন, গরম মসলা, তেল।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ লবণ-হলুদ দিয়ে মেরিনেট করুন।
২. নারকেল, মরিচ, আদা-রসুন বাটা করে মসলা তৈরি করুন।
৩. তেলে মসলা কষিয়ে মাছ দিয়ে ভুনুন।
৪. ঘন ভুনা তৈরি হলে ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রান্নায় ম্যাকেরেল

থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ম্যাকেরেল ভিন্ন স্বাদে রান্না হয়। সাধারণত লেবু, লেমনগ্রাস, নারকেল দুধ, সয়া সস ও ফিশ সস ব্যবহার করা হয়।

রেসিপি ৩: থাই স্টাইল ম্যাকেরেল কারি
উপকরণ: ম্যাকেরেল টুকরা, নারকেল দুধ, লেমনগ্রাস, কাফির লাইম পাতা, কারি পেস্ট, ফিশ সস, মরিচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. নারকেল দুধ গরম করে তাতে কারি পেস্ট দিন।
২. লেমনগ্রাস ও কাফির লাইম পাতা ফেলে সুগন্ধ তৈরি করুন।
৩. মাছ দিয়ে ফিশ সস ও মরিচ মিশিয়ে রান্না করুন।
৪. ভাতের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেসিপি ৪: মালয়েশিয়ান সাম্বাল ম্যাকেরেল
উপকরণ: মাছ, লাল মরিচ বাটা, পেঁয়াজ, রসুন, তেঁতুলের রস, তেল।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. মাছ ভেজে আলাদা রাখুন।
২. মরিচ বাটা, রসুন, পেঁয়াজ ভেজে সাম্বাল পেস্ট তৈরি করুন।
৩. তেঁতুলের রস মিশিয়ে কষান।
৪. ভাজা মাছ ফেলে সামান্য নাড়ুন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ম্যাকেরেল শুধু একটি মাছ নয়, বরং এক বৈশ্বিক খাদ্য ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া পর্যন্ত নানা দেশে এটি মানুষের স্বাদ-রসনার অপরিহার্য খাবার। এর পুষ্টিগুণ ও বৈচিত্র্যময় রন্ধনপ্রণালি একে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মাছ হিসেবে স্থান দিয়েছে।