০২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপনার মুখের জন্য ‘বিউটি ব্রোকার’: মেলিন্ডা ফারিনার গল্প

সৌন্দর্যের জগতে নতুন এক নাম

মেলিন্ডা ফারিনা, যিনি এখন “বিউটি ব্রোকার” নামে পরিচিত, বয়স ৪৪। একসময় তিনি ছিলেন ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। গত এক দশকে প্লাস্টিক সার্জারির জগতে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।

যেমন ধরুন—আপনি বয়সের কারণে গলার চামড়া ঝুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। ইনস্টাগ্রামে হঠাৎ দেখলেন পুনরুজ্জীবিত ক্রিস জেনারকে। তিনি প্রকাশ্যে বললেন, বিখ্যাত সার্জন স্টিভেন এম. লেভিন তাঁর ফেসলিফট করেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। এ অবস্থায় মানুষ প্রায়ই মেলিন্ডা ফারিনার শরণাপন্ন হন।

বিউটি ব্রোকারের কাজ

ফারিনা নিজে সার্জারি করেন না। বরং তিনি ক্লায়েন্টদের সঠিক সার্জনের সঙ্গে যুক্ত করেন। তাঁর এক ঘণ্টার পরামর্শ ফি প্রায় ৭৫০ ডলার, যেখানে তাঁর আটজন সহযোগীর ফি শুরু হয় ৩৫০ ডলার থেকে। তিনি শুধু পরামর্শই দেন না, সার্জারির পরবর্তী যত্ন থেকে শুরু করে মেডিকেল ভাষা সহজ করে বোঝানো পর্যন্ত নানা কাজও সামলান।

সার্জারির চাহিদা কেন বাড়ছে

একসময় ধারণা ছিল ইনজেকশন আর লেজার চিকিৎসাই বয়স কমানোর সেরা উপায়। কিন্তু এখন আবার ফেসলিফট, নাক ও চোখের সার্জারির দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এর একটি বড় কারণ ওজন কমানোর ওষুধ যেমন ওজেমপিক বা উইগোভি, যা ত্বক ঢিলে করে দেয়। সামাজিক মাধ্যমে এসব সার্জারির ছবি ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ আরও আগ্রহী হচ্ছে।

খ্যাতি, সমালোচনা ও বিতর্ক

ফারিনা গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করেন। অনেক সেলিব্রিটির সঙ্গে তাঁর চুক্তি থাকে এনডিএর মাধ্যমে। তবে তিনি সরবভাবেই শিল্পের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। কয়েকজন ডাক্তারকে খোলাখুলিভাবে ‘ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগ করেছেন, যার কারণে মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখিও হয়েছেন।

২০১৩ সালে বেভারলি হিলসের সার্জন রাফি হভসেপিয়ান অভিযোগ করেছিলেন যে, ফারিনা তাঁকে রোগী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখেননি। পরে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসা হয়। আবার ২০১৯ সালে বিখ্যাত কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট সাইমন অরিয়ানকে তিনি ‘প্রতারক’ বলায় তাঁর সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়ান।

ব্যক্তিগত জীবন ও পটভূমি

ফারিনা নিউইয়র্কের এক সাধারণ পরিবারে বড় হয়েছেন। মা হাসপাতালের ওয়েলনেস সেন্টার চালাতেন, বাবা ছিলেন নির্মাণশ্রমিক। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন পড়াশোনা করলেও স্নাতক শেষ করতে পারেননি। শুরুতে কাজ করেন কসমেটিক ডেন্টিস্ট ল্যারি রোজেনথালের সঙ্গে, সেখান থেকেই তাঁর পরামর্শদাতা হওয়ার অনুপ্রেরণা আসে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান “বিউটি ব্রোকারস ইনকরপোরেটেড” শুরুতে ডাক্তারদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে কাজ চালাত। এখন তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেন না, বরং কেবল ক্লায়েন্টদের থেকে ফি নেন।

সেলিব্রিটি ক্লায়েন্ট ও প্রভাব

গুইনেথ প্যালট্রোর পডকাস্টে তিনি অংশ নিয়েছেন, যেখানে ফিলার ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। সার্জারি বিষয়ক বড় বড় কনফারেন্সেও তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর নাম ঘিরে যত বিতর্কই থাকুক, সেলিব্রিটিরা যখন নিজেদের সার্জারির কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, তখনও ফারিনার মতো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজনীয়তা অটুট আছে।

বিতর্কিত ‘ম্যাজিক পোষণ’ মামলা

ডেমি মুরের সিনেমা দ্য সাবস্ট্যান্স মুক্তির পর গুঞ্জন ওঠে তিনি ফেসলিফট করিয়েছেন। এক ইনফ্লুয়েন্সার দাবি করলে ফারিনা সেটিকে ভুয়া প্রচারণা বলে সমালোচনা করেন। এ নিয়ে আবার তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়। এমনকি ফারিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে উপহার ও সুবিধা নেন। তবে তিনি বলেন, এসব ছিল ব্যবসার নতুন মডেলের পরীক্ষামূলক প্রয়াস, যা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

সমালোচক, ভক্ত ও ভবিষ্যৎ

ফারিনা মানেন, এই ব্যবসা এখনও পুরুষতান্ত্রিক, যেখানে তাঁর মতো নারী মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান জটিল। সমালোচনা আছে, আবার সমর্থনও আছে। কেউ তাঁকে অতিরিক্ত প্রভাবশালী মনে করেন, আবার কেউ বলেন তিনি শিল্পের জন্য অপরিহার্য।

ডাক্তার স্কট হোলেনবেক, যিনি আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনসের প্রেসিডেন্ট, বলেছেন—তিনি ফারিনাকে না চিনলেও এ ধরনের পরামর্শকরা মূলত মার্কেটিংয়ের কাজ করছেন, এতে আপত্তি নেই।

তবে সমালোচকরা বলেন, যেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে, সেটিই একদিন তাঁর পতনের কারণ হতে পারে। ফারিনা অবশ্য এখনো এমন প্রমাণ দেখেন না। যেমন ক্রিস জেনার ফেসলিফটের কথা প্রকাশ করার পর তাঁর ইনবক্সে ৭০০-র বেশি অনুসন্ধান আসে।

আপনার মুখের জন্য ‘বিউটি ব্রোকার’: মেলিন্ডা ফারিনার গল্প

১০:০০:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

সৌন্দর্যের জগতে নতুন এক নাম

মেলিন্ডা ফারিনা, যিনি এখন “বিউটি ব্রোকার” নামে পরিচিত, বয়স ৪৪। একসময় তিনি ছিলেন ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট। গত এক দশকে প্লাস্টিক সার্জারির জগতে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।

যেমন ধরুন—আপনি বয়সের কারণে গলার চামড়া ঝুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত। ইনস্টাগ্রামে হঠাৎ দেখলেন পুনরুজ্জীবিত ক্রিস জেনারকে। তিনি প্রকাশ্যে বললেন, বিখ্যাত সার্জন স্টিভেন এম. লেভিন তাঁর ফেসলিফট করেছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়া সহজ নয়। এ অবস্থায় মানুষ প্রায়ই মেলিন্ডা ফারিনার শরণাপন্ন হন।

বিউটি ব্রোকারের কাজ

ফারিনা নিজে সার্জারি করেন না। বরং তিনি ক্লায়েন্টদের সঠিক সার্জনের সঙ্গে যুক্ত করেন। তাঁর এক ঘণ্টার পরামর্শ ফি প্রায় ৭৫০ ডলার, যেখানে তাঁর আটজন সহযোগীর ফি শুরু হয় ৩৫০ ডলার থেকে। তিনি শুধু পরামর্শই দেন না, সার্জারির পরবর্তী যত্ন থেকে শুরু করে মেডিকেল ভাষা সহজ করে বোঝানো পর্যন্ত নানা কাজও সামলান।

সার্জারির চাহিদা কেন বাড়ছে

একসময় ধারণা ছিল ইনজেকশন আর লেজার চিকিৎসাই বয়স কমানোর সেরা উপায়। কিন্তু এখন আবার ফেসলিফট, নাক ও চোখের সার্জারির দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এর একটি বড় কারণ ওজন কমানোর ওষুধ যেমন ওজেমপিক বা উইগোভি, যা ত্বক ঢিলে করে দেয়। সামাজিক মাধ্যমে এসব সার্জারির ছবি ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ আরও আগ্রহী হচ্ছে।

খ্যাতি, সমালোচনা ও বিতর্ক

ফারিনা গোপনীয়তা বজায় রেখে কাজ করেন। অনেক সেলিব্রিটির সঙ্গে তাঁর চুক্তি থাকে এনডিএর মাধ্যমে। তবে তিনি সরবভাবেই শিল্পের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। কয়েকজন ডাক্তারকে খোলাখুলিভাবে ‘ভুল চিকিৎসার’ অভিযোগ করেছেন, যার কারণে মামলা-মোকদ্দমার মুখোমুখিও হয়েছেন।

২০১৩ সালে বেভারলি হিলসের সার্জন রাফি হভসেপিয়ান অভিযোগ করেছিলেন যে, ফারিনা তাঁকে রোগী পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখেননি। পরে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসা হয়। আবার ২০১৯ সালে বিখ্যাত কসমেটিক ডার্মাটোলজিস্ট সাইমন অরিয়ানকে তিনি ‘প্রতারক’ বলায় তাঁর সঙ্গে আইনি বিরোধে জড়ান।

ব্যক্তিগত জীবন ও পটভূমি

ফারিনা নিউইয়র্কের এক সাধারণ পরিবারে বড় হয়েছেন। মা হাসপাতালের ওয়েলনেস সেন্টার চালাতেন, বাবা ছিলেন নির্মাণশ্রমিক। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে কিছুদিন পড়াশোনা করলেও স্নাতক শেষ করতে পারেননি। শুরুতে কাজ করেন কসমেটিক ডেন্টিস্ট ল্যারি রোজেনথালের সঙ্গে, সেখান থেকেই তাঁর পরামর্শদাতা হওয়ার অনুপ্রেরণা আসে।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান “বিউটি ব্রোকারস ইনকরপোরেটেড” শুরুতে ডাক্তারদের নেটওয়ার্ক তৈরি করে কাজ চালাত। এখন তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেন না, বরং কেবল ক্লায়েন্টদের থেকে ফি নেন।

সেলিব্রিটি ক্লায়েন্ট ও প্রভাব

গুইনেথ প্যালট্রোর পডকাস্টে তিনি অংশ নিয়েছেন, যেখানে ফিলার ব্যবহারের বিরূপ প্রভাব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। সার্জারি বিষয়ক বড় বড় কনফারেন্সেও তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর নাম ঘিরে যত বিতর্কই থাকুক, সেলিব্রিটিরা যখন নিজেদের সার্জারির কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, তখনও ফারিনার মতো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজনীয়তা অটুট আছে।

বিতর্কিত ‘ম্যাজিক পোষণ’ মামলা

ডেমি মুরের সিনেমা দ্য সাবস্ট্যান্স মুক্তির পর গুঞ্জন ওঠে তিনি ফেসলিফট করিয়েছেন। এক ইনফ্লুয়েন্সার দাবি করলে ফারিনা সেটিকে ভুয়া প্রচারণা বলে সমালোচনা করেন। এ নিয়ে আবার তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়। এমনকি ফারিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি ডাক্তারদের কাছ থেকে উপহার ও সুবিধা নেন। তবে তিনি বলেন, এসব ছিল ব্যবসার নতুন মডেলের পরীক্ষামূলক প্রয়াস, যা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।

সমালোচক, ভক্ত ও ভবিষ্যৎ

ফারিনা মানেন, এই ব্যবসা এখনও পুরুষতান্ত্রিক, যেখানে তাঁর মতো নারী মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান জটিল। সমালোচনা আছে, আবার সমর্থনও আছে। কেউ তাঁকে অতিরিক্ত প্রভাবশালী মনে করেন, আবার কেউ বলেন তিনি শিল্পের জন্য অপরিহার্য।

ডাক্তার স্কট হোলেনবেক, যিনি আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনসের প্রেসিডেন্ট, বলেছেন—তিনি ফারিনাকে না চিনলেও এ ধরনের পরামর্শকরা মূলত মার্কেটিংয়ের কাজ করছেন, এতে আপত্তি নেই।

তবে সমালোচকরা বলেন, যেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে, সেটিই একদিন তাঁর পতনের কারণ হতে পারে। ফারিনা অবশ্য এখনো এমন প্রমাণ দেখেন না। যেমন ক্রিস জেনার ফেসলিফটের কথা প্রকাশ করার পর তাঁর ইনবক্সে ৭০০-র বেশি অনুসন্ধান আসে।