০৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প ট্রাম্পের কৃষিপণ্য শুল্ক ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে পারে ভারতের রপ্তানি ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৭৮৮ রোগী দিল্লি–ঢাকা অংশীদারত্বে ওষুধ শিল্পের গুরুত্ব

জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুর্বল অবস্থানে

বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক চিত্রে আশার পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। সরকারি হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাস্তব জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৯৭ শতাংশ। এ সময়ে মাথাপিছু আয় ও অর্থনীতির আকার উভয়ই বেড়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ, আর রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তবে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন কমে যাওয়ায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্থরতার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৯৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা বা ০.৭২ শতাংশ। অথচ এর আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) লেনদেনের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৫৪ শতাংশ। চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমেছে সর্বোচ্চ ১৯.৩৩ শতাংশ, বিপরীতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৩১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রচলিত লেনদেন কমলেও ডিজিটাল চ্যানেলে কার্যক্রম বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, লেনদেন কমার পেছনে প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা এবং সর্বোপরি মানুষের ব্যাংকিং সিস্টেমে আস্থার ঘাটতি। এর ফলে অনানুষ্ঠানিক খাত বা ইনফরমাল ইকোনমি আরও প্রসারিত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী নয়। আইএমএফ চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে ৩.৮ শতাংশ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শুরুতে ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও পরে তা কমিয়ে ৫.৪ শতাংশে নামিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা ধারাবাহিকভাবে পূর্বাভাস কমিয়ে সর্বশেষ মাত্র ৩.৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫.৭ শতাংশ হবে বলে তাদের ধারণা।

সরকারি হিসাব আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও, ব্যাংক লেনদেনের পতন অর্থনীতির ভেতরে দুর্বলতা তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাগজে-কলমে প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বাড়লেও বাস্তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যথেষ্ট গতি পাচ্ছে না।

নীতিনির্ধারকদের মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে।

অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার দুর্বল অবস্থানে থাকলেও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেলে স্থিতিশীলতার পথে ফেরার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯)

জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুর্বল অবস্থানে

০২:২৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক চিত্রে আশার পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। সরকারি হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাস্তব জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৯৭ শতাংশ। এ সময়ে মাথাপিছু আয় ও অর্থনীতির আকার উভয়ই বেড়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ, আর রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তবে ব্যাংকিং খাতে লেনদেন কমে যাওয়ায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্থরতার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৯৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা বা ০.৭২ শতাংশ। অথচ এর আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) লেনদেনের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৫৪ শতাংশ। চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমেছে সর্বোচ্চ ১৯.৩৩ শতাংশ, বিপরীতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৩১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রচলিত লেনদেন কমলেও ডিজিটাল চ্যানেলে কার্যক্রম বাড়ছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, লেনদেন কমার পেছনে প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা এবং সর্বোপরি মানুষের ব্যাংকিং সিস্টেমে আস্থার ঘাটতি। এর ফলে অনানুষ্ঠানিক খাত বা ইনফরমাল ইকোনমি আরও প্রসারিত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী নয়। আইএমএফ চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে ৩.৮ শতাংশ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শুরুতে ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও পরে তা কমিয়ে ৫.৪ শতাংশে নামিয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তারা ধারাবাহিকভাবে পূর্বাভাস কমিয়ে সর্বশেষ মাত্র ৩.৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫.৭ শতাংশ হবে বলে তাদের ধারণা।

সরকারি হিসাব আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা বেশি হলেও, ব্যাংক লেনদেনের পতন অর্থনীতির ভেতরে দুর্বলতা তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাগজে-কলমে প্রবৃদ্ধির সংখ্যা বাড়লেও বাস্তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যথেষ্ট গতি পাচ্ছে না।

নীতিনির্ধারকদের মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে।

অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার দুর্বল অবস্থানে থাকলেও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেলে স্থিতিশীলতার পথে ফেরার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে।