মানিকগঞ্জের জীবনযাত্রা ও কৃষিকে বহুদিন ধরে চালিত করে চলা গাজিখালী নদী এখন দখল, ভরাট ও দূষণে ক্ষয়ে যাচ্ছে। একসময় নদীপথ হয়ে এটি ছিল স্থানীয় বাণিজ্য, পরিবহন ও সংস্কৃতির কেন্দ্র; আজ সেই জীবনীশক্তি হারিয়ে অন্তত সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের তাগিদ ছাড়া পরিস্থিতি বদলানো মুশকিল।
গাজিখালী মূলত মানিকগঞ্জ সদর ও ঘিওর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল; ধলেশ্বরী ও স্থানীয় খালগুলোর সঙ্গে সংযোগ করে এটি বর্ষা-শুকনো দুই মৌসুমে কৃষি ও জলনিড়াচলকে সমর্থন করত। নদীর পুরনো গতিপথ ফিরে এলে স্থানীয় জলবায়ু ও সেচ ব্যবস্থায় সুবিধা আসতে পারে।
নদীর পানির ওপর নির্ভর করে ধান, পাট, তিলসহ বহু ফসল চাষ হতো; তীরবর্তী জেলেরা ছোট নৌকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন। নৌপথ বন্ধ হলে ফসল পরিবহন, মাছ ধরা ও গ্রামীণ হাটবাজারগুলোর কার্যক্রম সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাণিজ্য ও পরিবহন ক্ষতি
একসময় গাজিখালী ছিল ঘিওর, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদরের পণ্যের রফতানির এক গুরুত্বপূর্ণ পথ। নাব্যতা কমে নৌচলাচল স্থবির হওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতি আর গতিশীলতা হারাচ্ছে।
নদীর পাড়ে অনুষ্ঠিত হতো মেলা, নৌকাবাইচ ও লোকজ অনুষ্ঠান—এগুলো গ্রামীণ সামাজিক বন্ধন গড়ে তুলত। প্রবীণরা তাদের শৈশবের নৌকা-ভিত্তিক স্কুলযাত্রা ও বর্ষার খেলার কথা স্মরণ করেন—এগুলো এখন স্মৃতিতেই রয়ে গেছে।
ভরাট, দখল ও দূষণের ফলে নদীর পানি প্রবাহ রুক্ষ হয়েছে; ফলত সেচ সংকট, মাছের প্রজাতি হ্রাস এবং বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা বেড়েছে। কিছু স্থানে জমি তৈরির কারণে নদীর প্রাকৃতিক গতিপথ বদলে গেছে।

স্থানীয় জনগণ, গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা বলছেন—সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন ও দখলমুক্তকরণ করলে গাজিখালী পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। প্রয়োজন সঠিক রোডম্যাপ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয় ও সম্প্রদায়ভিত্তিক সংরক্ষণ কর্মসূচি।
স্থানীয়রা মনে করে গাজিখালী নামটি ‘গাজী’ সম্প্রদায়ের বসতির সঙ্গে যুক্ত—অথবা স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির নামে হয়তো নামকরণ। প্রবীণদের বর্ণনা নদীর সমাজ-সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















