বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে বারবার প্রযুক্তিগত ত্রুটি, সময়সূচি ভঙ্গ ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। জাতীয় এয়ারলাইন্সটির সেবার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
যাত্রীদের আস্থা হারাচ্ছে বিমান
বিদেশি যাত্রীরা বিমানের সেবা নিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন, আর বাংলাদেশিদের মধ্যেও আস্থা কমছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি হুমায়ুন কবির বলেন, “প্রতি বছরই চেষ্টা করি বাংলাদেশে যাওয়ার, কিন্তু বিমানে যাত্রা করি না নানা কারণে। শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, কর্মীদের আচরণও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরে কর্মীদের ব্যবহার প্রবাসী যাত্রীদের প্রতি প্রায়ই শীতল ও অমমতাপূর্ণ।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম ফারহাদ উল্লাহ বলেন, “আমি বিমানের ফ্লাইট সেবার মান নিয়ে ততটা চিন্তিত নই, কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে খুব ভয় পাই। বিমানের অবশ্যই সেবার মান উন্নত করতে হবে, নাহলে ভাবমূর্তি আর ফিরবে না।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও দক্ষ জনবল
বিমান খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বিমান কেনা বা লিজ নেওয়ার আগে দক্ষ পাইলট, প্রকৌশলী ও কেবিন ক্রু তৈরি এবং ব্যবস্থাপনা সংস্কার জরুরি।
তাদের মতে, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা দূর না করলে বিমান আরও বড় সংকটে পড়বে। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “যথেচ্ছভাবে বা আমলাতান্ত্রিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে না। অভিজ্ঞ, দক্ষ ও ব্যবসায়িকভাবে প্রশিক্ষিত লোকদের হাতে ব্যবস্থাপনা দিতে হবে।”
সম্প্রতি বিমানের প্রযুক্তিগত ত্রুটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ছোট আঞ্চলিক বিমানের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বড় উড়োজাহাজের তুলনায় ছোট আঞ্চলিক বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক কম, তাই সেগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বিমানের বহরে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল বা দেরি হচ্ছে। শুধু গত এক মাসেই অন্তত নয়টি বিমান দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছে। যদিও বড় দুর্ঘটনা হয়নি, তবুও বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও যাত্রীসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে বিমান দুটি নতুন বিমান লিজ নিচ্ছে এবং নতুন কেনার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন বিমান কেনার সিদ্ধান্ত
সরকার ইতিমধ্যেই মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ও শুল্ক সহজীকরণের কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি।
বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমের মতামত
বিমানের সাবেক বোর্ড সদস্য ও বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বহর বাড়ানোর আগে বিমানের ব্যবস্থাপনা সংস্কার করতে হবে। তার মতে, বিমানের সংকট শুধু উড়োজাহাজের অভাবে নয়, দক্ষ জনবলের ঘাটতিই আসল সমস্যা।
তিনি বলেন, “প্রথমে সংগঠনকে স্থিতিশীল করতে হবে, তারপর সম্প্রসারণ ভাবতে হবে।”
তার মতে, বিদেশি পাইলট, প্রকৌশলী বা কেবিন ক্রু আনতে গেলে মাসে প্রতি জনের জন্য প্রায় ১০ হাজার ডলার খরচ হবে। তাই দেশীয় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।
তিনি নিয়োগে স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধেও সতর্ক করেন এবং যোগ্যদের নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ছোট বিমানের গুরুত্ব
ওয়াহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দীর্ঘপাল্লার রুট মাত্র চার-পাঁচটি, অথচ ছোট রুট বেশি। তাই ছোট আঞ্চলিক বিমান বেশি উপযোগী ও সাশ্রয়ী। আটটি বড় বিমানের দামে বারোটি ছোট বিমান কেনা সম্ভব। বোয়িং ৭৩৭ এ জন্য উপযুক্ত, আর বড় রুটে ৭৭৭ বা ৭৮৭ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পুরনো বিমানের কারণেই ঘন ঘন ত্রুটি হচ্ছে, তাই নিয়মিত মান নিয়ন্ত্রণ ও কঠোর তদারকি বাড়ানো দরকার।
বিমানের বর্তমান বহর
বর্তমানে বিমানের বহরে ১৯টি উড়োজাহাজ আছে। এর মধ্যে ১৪টি মার্কিন বোয়িং এবং ৫টি কানাডার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০। বোয়িং বহরে রয়েছে ৪টি ৭৩৭-৮০০, ৪টি ৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার এবং ২টি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার।
বিমানকে দুরবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কৌশল ও দক্ষ জনশক্তির আহ্বান
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:০৫:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 34
জনপ্রিয় সংবাদ




















