নতুন পদক্ষেপের প্রস্তুতি
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই-থ্রি বা E3 নামে পরিচিত) বৃহস্পতিবার ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। তবে তারা আশা করছে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলে কঠোর পদক্ষেপ স্থগিত রাখা হতে পারে। চারজন কূটনীতিক এই তথ্য জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক আলোচনার পটভূমি
মঙ্গলবার ইরানের সঙ্গে E3 আলোচনা করেছে, যাতে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি আবার আলোচনায় আনা যায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় আছে, এরপর আর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সুযোগ থাকবে না।
তবে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, আলোচনায় ইরান যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তাই ইউরোপীয় দেশগুলো ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামে পরিচিত নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত, যা সম্ভবত বৃহস্পতিবারই কার্যকর হতে পারে।
পশ্চিমাদের অভিযোগ ও ইরানের অবস্থান
পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ছাড়িয়ে অস্ত্র তৈরির পথে এগোচ্ছে। তবে তেহরান জোর দিয়ে বলছে, তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না।
জাতিসংঘের প্রক্রিয়া শুরু হলে ৩০ দিনের মধ্যে ইরানের আর্থিক, ব্যাংকিং, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে। এ প্রসঙ্গে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেন, “জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি জমা দেওয়ার পরই আসল আলোচনা শুরু হবে।”
ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া ও তেহরানের হুমকি
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্ন্যাপব্যাক চালু করা এখনো ই-থ্রির জন্য একটি কার্যকর বিকল্প। তবে ব্রিটিশ ও ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাত্ক্ষণিক মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে, ইরান সতর্ক করে বলেছে—নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা হলে তারা “কঠোর জবাব” দেবে।
জাতিসংঘ পরিদর্শকদের ভূমিকা
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর জুন মাসে সহযোগিতা বন্ধ করলেও সম্প্রতি জাতিসংঘের পরমাণু বিশেষজ্ঞরা ইরানে ফিরেছেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কী পরিমাণে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্বীকার করেছেন, নজরদারি পুরোপুরি পুনরায় শুরু করার বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।
ছাড়ের শর্ত
E3 দেশগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, যদি ইরান পূর্ণমাত্রায় জাতিসংঘ পরিদর্শন শুরু করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তবে ছয় মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা যেতে পারে। এর আওতায় ইরানের মজুদ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের হিসাবও নিতে হবে, যা হামলার পর যাচাই করা হয়নি।
ইউরেনিয়াম মজুদ নিয়ে উদ্বেগ
IAEA জানিয়েছে, ইরান ইতিমধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি। হামলার আগেই তারা পর্যাপ্ত উপাদান সংগ্রহ করেছিল, যা আরও পরিশোধিত হলে ছয়টি পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর জন্য যথেষ্ট।
তবে বাস্তবে অস্ত্র বানাতে সময় লাগবে এবং IAEA এখনো এমন কোনো প্রমাণ পায়নি যে ইরান রাষ্ট্র হিসেবে সমন্বিতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালাচ্ছে।
আলোচনার সম্ভাবনা
জুন মাসের আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফা আলোচনা করেছিল। মঙ্গলবার E3-এর সঙ্গে বৈঠকে ইরান কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা আলোচনায় ফিরতে পারে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে শর্ত রাখা হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে যে আলোচনার সময় কোনো সামরিক হামলা হবে না।
ইউরোপের উদ্যোগে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০১:৪২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- 31
জনপ্রিয় সংবাদ




















