বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং হাসপাতালে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও আবহাওয়া
দীর্ঘ সময় গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া, আবার হঠাৎ প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতা এডিস মশার জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আগে যেখানে ডেঙ্গু মূলত বর্ষা মৌসুমে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।

নগরায়ন ও জলাবদ্ধতা
পরিকল্পনাহীন নগরায়ন, অপর্যাপ্ত নিকাশি ব্যবস্থা এবং নির্মাণাধীন ভবন বা ছাদে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করছে। শহরের উচ্চ জনঘনত্ব মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মশকনিধন কার্যক্রমের দুর্বলতা
ফগিং বা লার্ভাসাইড ছিটানো হলেও তা যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশার এক বড় অংশ এ ধরনের ওষুধের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। ফলে প্রচলিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড, স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব, দ্রুত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার ঘাটতি এবং গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসা সুবিধার সীমাবদ্ধতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। রোগীরা দেরিতে চিকিৎসা পেলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।

প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও জনসম্পৃক্ততার অভাব
স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম চালালেও তা সবসময় বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হয় না। দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব এর অন্যতম কারণ। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো জনগণকে কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করা। অথচ পরিবারভিত্তিক উদ্যোগেই অনেকাংশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সমাধানের পথ
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া কোনো সমাধান নেই। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যখাতে জরুরি প্রস্তুতি, নগর ব্যবস্থাপনায় টেকসই পদক্ষেপ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ—এই চারটি স্তম্ভকে কেন্দ্র করে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় ডেঙ্গু আগামী দিনে দীর্ঘস্থায়ী মহামারিতে রূপ নিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















