বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রাকে সংবিধান আদালত বরখাস্ত করেছে। মাত্র এক বছরের শাসনকাল শেষে দেওয়া এই রায় দেশটির অস্থির রাজনীতি ও দুর্বল অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
এরপর অন্তর্বর্তীকালীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাই ও বর্তমান মন্ত্রিসভা। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্ট বৈঠকে বসবে। তবে এর সময় নির্ধারণ করবেন স্পিকার। সংবিধানে এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ নেই।
ক্ষমতার নতুন সমীকরণ
এই রায় আবারও রাজনৈতিক দরকষাকষির নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রক্রিয়াটিতে মূল ভূমিকা পালন করবেন বরখাস্ত হওয়া নেত্রীর পিতা ও প্রভাবশালী সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা। ৭৬ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী-রাজনীতিক ফেউ থাই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। তবে নানা স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ জোট
বর্তমান জোট সরকারের আসনসংখ্যার ব্যবধান মাত্র সাত, যা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য পরিবর্তনই ফেউ থাই ও শিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে এখনো পাঁচজন যোগ্য রয়েছেন।
ফেউ থাই থেকে একমাত্র প্রার্থী ৭৭ বছর বয়সী সাবেক বিচারমন্ত্রী চাইকাসেম নিতিসিরি। তিনি শান্ত-স্বভাবের হলেও দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
ভুমজাইথাই দলের আনুতিন চার্নভিরাকুলও সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি গত জুনে পেতংটার্নের জোট থেকে সরে দাঁড়ান।
অন্যদের মধ্যে আছেন জ্বালানি মন্ত্রী পিরাপান সলিরাথাভিভাগা, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী জুরিন লাকসনাওয়িসিত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা। বর্তমানে প্রায়ুথ রাজপরিবারের উপদেষ্টা, যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হতে হলে প্রার্থীর কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদের সমর্থন নিয়ে ভোটে দাঁড়াতে হবে এবং ৪৯২ জন সাংসদের মধ্যে অন্তত ২৪৭ ভোট পেতে হবে। যদি কোনো প্রার্থী ব্যর্থ হন, প্রক্রিয়াটি সময়সীমাহীনভাবে পুনরাবৃত্তি হবে।
থাকসিনের প্রভাব
ফেউ থাইয়ের জন্য চাইকাসেমকে প্রধানমন্ত্রী করা অনেকটাই নির্ভর করছে থাকসিন শিনাওয়াত্রার অবস্থানের ওপর। রক্ষণশীল শক্তির সঙ্গে তার পুরোনো দ্বন্দ্ব থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে ‘কম ক্ষতিকর’ হিসেবে দেখা হতে পারে। তবে তার প্রভাব কমে গেলে আগাম নির্বাচনের পথও খুলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রগতিশীল ও জনপ্রিয় পিপলস পার্টি শক্তিশালী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এ দলটি রক্ষণশীল ও সামরিক অভিজাত শ্রেণির স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চিত্র
অভিজ্ঞতার অভাব থাকায় চাইকাসেমকে অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হতে পারে। তবে তিনি সংস্কার কার্যকর করা বা দুর্বল অর্থনীতিকে সচল করার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারবেন না—এমন শঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতিও মন্দার ফাঁদে পড়তে পারে।
অন্যদিকে, ভুমজাইথাইয়ের আনুতিন যদি প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন, তবে তাকে পূর্ব জোটসঙ্গী ও পিপলস পার্টির সমর্থন চাইতে হবে। ওই দল আগাম নির্বাচনের শর্তে তার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছে।
আরেকটি সম্ভাবনা হলো সমঝোতার রাজনীতি, যেখানে প্রায়ুথকে আবারও সামনে আনা হতে পারে। তবে তাতে তাকে শত্রুপক্ষ ফেউ থাইয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীর পদে অনিশ্চয়তা দেশটিকে রাজনৈতিক দরকষাকষি ও অস্থিরতার গভীরে ঠেলে দিয়েছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে অর্থনীতিতেও। শেষ পর্যন্ত ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে শিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক টিকে থাকা এবং থাইল্যান্ডের আগামী দিনের দিকনির্দেশনা।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত, এরপর কী?
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১১:১২:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
- 42
জনপ্রিয় সংবাদ




















