০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ‘কিছুটা কম’, বাস্তবে তবু বিপুল অর্থনৈতিক ঝুঁকি তোমার ফোন একটি নেশা নয়, এটি একটি পরকালের দরজা এআই ডেটা সেন্টারের দৌড়ে ক্রুশিয়াল ব্র্যান্ড বন্ধ করছে মাইক্রন ইতালির স্বপ্ন নড়ে উঠল: সিসিলি-মেসিনা সেতু প্রকল্পে আদালতের না–এর পর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে এশিয়ার সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শনী, চীনের শক্তি দেখানো না ঝুঁকির নতুন ধাপ?” পোকেমন-এর বিবর্তন: খেলার মাঠ থেকে বৈশ্বিক ঘটনা আপনার সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা কিভাবে করবেন থাইল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতির হার নভেম্বর মাসে আবার নেতিবাচক ভারতীয় রুপির ফরওয়ার্ড রেট বৃদ্ধি: সুদ কমানোর আশা কমে যাওয়া ও তারল্য সংকটে বাজারে চাপ

কাবুলের মানুষের কাছে  পানি স্বর্ণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ 

কাবুলে পানি এখন সবচেয়ে বড় সংকট। শহরের ছয় মিলিয়ন বাসিন্দা ২০৩০ সালের মধ্যে পানির সম্পূর্ণ অভাবে পড়তে পারেন। বৃষ্টিপাত ও বরফ গলার পরিমাণ কমে গেছে, নিয়ন্ত্রণহীন কূপ খননের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির মজুত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা সরকারের নেই, আর মানুষ একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে পানির জন্য।

পানির জন্য লড়াই

একটি মসজিদের কলের সামনে পানির লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমান কারিমি। তিনি অভিযোগ করেন, “তুমি চারটা ক্যান নিয়ে আসো আর লাইনে কাট দাও।” তিনি প্রতিবেশীর হাত থেকে পাইপ ছিনিয়ে নিজের বালতি ভর্তি করতে থাকেন। এই ঘটনাই দেখাচ্ছে কাবুলের পানিসংকট কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে

মার্কিন দাতব্য সংস্থা মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুল হয়তো প্রথম আধুনিক রাজধানী শহর হতে চলেছে, যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাবে। পানির ভাণ্ডার যতটুকু পুনরায় পূরণ হচ্ছে, তার দ্বিগুণ হারে তা খালি হয়ে যাচ্ছে। তালেবান প্রশাসন অর্থাভাবে আশেপাশের বাঁধ বা নদী থেকে পানি আনার মতো উদ্যোগ নিতে পারছে না।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিকল্পনার অভাব

গত ২৫ বছরে কাবুলের জনসংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। শহরজুড়ে নতুন বাসাবাড়ি, কারখানা ও গ্রিনহাউস তৈরি হচ্ছে, আর সেগুলোও অবাধে ভূগর্ভস্থ পানি তুলছে। আগে নদী ও বরফ-গলা পানি নির্ভর শহরটি এখন ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।

সারা দেশে পানিসংকট

জাতিসংঘ বলছে, প্রতিবছর অন্তত সাত লাখ আফগান জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে (বিশেষ করে খরা) স্থানচ্যুত হন। ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের এক-তৃতীয়াংশের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতারা কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ ও পাইপলাইন প্রকল্পে অর্থায়ন করলেও ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এগুলো প্রায় সবই থেমে গেছে।

পরিস্থিতি জরুরি পর্যায়ে

পানি বিশেষজ্ঞ নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, “দুই দশক ধরে কাবুলে পানির সমস্যা ছিল, কিন্তু কখনো গুরুত্ব পায়নি। এখন কূপ শুকিয়ে যাচ্ছে, পরিস্থিতি জরুরি।”

বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা

২০২১ সালের এক মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কেবল ২০ শতাংশ কাবুলবাসীর পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি মেলে। সেটিও এখন প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। অনেক সরকারি সংস্থাও পানি ট্যাংকারের ওপর নির্ভর করছে। চীনা তৈরি তিনচাকার ভ্যান ও সোভিয়েত আমলের ট্রাক দিয়ে শহরে প্রতিদিন হাজার হাজার গ্যালন পানি সরবরাহ করা হয়। যারা কিনতে পারে না, তারা মসজিদের কূপ কিংবা ধনী মানুষের দান-খয়রাতের ওপর নির্ভর করে। সন্ধ্যা নামলে শহরের গলি ও পাহাড়ি রাস্তায় দেখা যায় হলুদ ক্যান ভর্তি ঠেলাগাড়ি।

মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রাম

হাজি মুহাম্মদ জাহির, সাবেক সিটি কাউন্সিল প্রধান, বলেন, তার কূপ বহু আগে শুকিয়ে গেছে, সরকারি পাইপলাইনও তিন দিনে একবার পানি দেয়। তিনি বলেন, “সরকারকে শহরটিকে বাঁচাতে হবে, কিন্তু টাকা কোথায়?” ২০২১ সালের পর দেশে চারটি বাঁধ নির্মিত হলেও সেগুলো থেকে শহরে পানি আনার মতো অর্থ নেই। পাশের পাঞ্জশির উপত্যকা থেকেও পাইপলাইন প্রকল্প ঝুলে আছে। বিদেশি দাতা ও বিনিয়োগকারীরা অর্থ দিচ্ছে না। আফগানিস্তানের পানি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাতিউল্লাহ আবিদ স্বীকার করেছেন, “আমাদের প্রকল্প বড়, কিন্তু আমরা অর্ধেক অর্থই জোগাড় করতে পারি।”

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

মসজিদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আতিফা কাজিমি কয়েক আফগানি দিয়ে ক্যান ভর্তি করলেন। তারপর ঠেলাগাড়ি ঠেলে আধা ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলেন। তাঁর কাছাকাছি মসজিদেও একটি কূপ ছিল, কিন্তু সেটি ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে।

কাবুলের মানুষ এখন প্রতিদিন লড়ছে বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা—পানির জন্য। শহরটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

কাবুলের মানুষের কাছে  পানি স্বর্ণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ 

১০:০০:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

কাবুলে পানি এখন সবচেয়ে বড় সংকট। শহরের ছয় মিলিয়ন বাসিন্দা ২০৩০ সালের মধ্যে পানির সম্পূর্ণ অভাবে পড়তে পারেন। বৃষ্টিপাত ও বরফ গলার পরিমাণ কমে গেছে, নিয়ন্ত্রণহীন কূপ খননের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির মজুত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা সরকারের নেই, আর মানুষ একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে পানির জন্য।

পানির জন্য লড়াই

একটি মসজিদের কলের সামনে পানির লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমান কারিমি। তিনি অভিযোগ করেন, “তুমি চারটা ক্যান নিয়ে আসো আর লাইনে কাট দাও।” তিনি প্রতিবেশীর হাত থেকে পাইপ ছিনিয়ে নিজের বালতি ভর্তি করতে থাকেন। এই ঘটনাই দেখাচ্ছে কাবুলের পানিসংকট কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে

মার্কিন দাতব্য সংস্থা মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুল হয়তো প্রথম আধুনিক রাজধানী শহর হতে চলেছে, যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির ভাণ্ডার শেষ হয়ে যাবে। পানির ভাণ্ডার যতটুকু পুনরায় পূরণ হচ্ছে, তার দ্বিগুণ হারে তা খালি হয়ে যাচ্ছে। তালেবান প্রশাসন অর্থাভাবে আশেপাশের বাঁধ বা নদী থেকে পানি আনার মতো উদ্যোগ নিতে পারছে না।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিকল্পনার অভাব

গত ২৫ বছরে কাবুলের জনসংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। শহরজুড়ে নতুন বাসাবাড়ি, কারখানা ও গ্রিনহাউস তৈরি হচ্ছে, আর সেগুলোও অবাধে ভূগর্ভস্থ পানি তুলছে। আগে নদী ও বরফ-গলা পানি নির্ভর শহরটি এখন ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।

সারা দেশে পানিসংকট

জাতিসংঘ বলছে, প্রতিবছর অন্তত সাত লাখ আফগান জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে (বিশেষ করে খরা) স্থানচ্যুত হন। ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের এক-তৃতীয়াংশের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতারা কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ ও পাইপলাইন প্রকল্পে অর্থায়ন করলেও ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এগুলো প্রায় সবই থেমে গেছে।

পরিস্থিতি জরুরি পর্যায়ে

পানি বিশেষজ্ঞ নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, “দুই দশক ধরে কাবুলে পানির সমস্যা ছিল, কিন্তু কখনো গুরুত্ব পায়নি। এখন কূপ শুকিয়ে যাচ্ছে, পরিস্থিতি জরুরি।”

বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা

২০২১ সালের এক মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কেবল ২০ শতাংশ কাবুলবাসীর পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি মেলে। সেটিও এখন প্রায় অচল হয়ে পড়ছে। অনেক সরকারি সংস্থাও পানি ট্যাংকারের ওপর নির্ভর করছে। চীনা তৈরি তিনচাকার ভ্যান ও সোভিয়েত আমলের ট্রাক দিয়ে শহরে প্রতিদিন হাজার হাজার গ্যালন পানি সরবরাহ করা হয়। যারা কিনতে পারে না, তারা মসজিদের কূপ কিংবা ধনী মানুষের দান-খয়রাতের ওপর নির্ভর করে। সন্ধ্যা নামলে শহরের গলি ও পাহাড়ি রাস্তায় দেখা যায় হলুদ ক্যান ভর্তি ঠেলাগাড়ি।

মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রাম

হাজি মুহাম্মদ জাহির, সাবেক সিটি কাউন্সিল প্রধান, বলেন, তার কূপ বহু আগে শুকিয়ে গেছে, সরকারি পাইপলাইনও তিন দিনে একবার পানি দেয়। তিনি বলেন, “সরকারকে শহরটিকে বাঁচাতে হবে, কিন্তু টাকা কোথায়?” ২০২১ সালের পর দেশে চারটি বাঁধ নির্মিত হলেও সেগুলো থেকে শহরে পানি আনার মতো অর্থ নেই। পাশের পাঞ্জশির উপত্যকা থেকেও পাইপলাইন প্রকল্প ঝুলে আছে। বিদেশি দাতা ও বিনিয়োগকারীরা অর্থ দিচ্ছে না। আফগানিস্তানের পানি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাতিউল্লাহ আবিদ স্বীকার করেছেন, “আমাদের প্রকল্প বড়, কিন্তু আমরা অর্ধেক অর্থই জোগাড় করতে পারি।”

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

মসজিদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আতিফা কাজিমি কয়েক আফগানি দিয়ে ক্যান ভর্তি করলেন। তারপর ঠেলাগাড়ি ঠেলে আধা ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলেন। তাঁর কাছাকাছি মসজিদেও একটি কূপ ছিল, কিন্তু সেটি ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে।

কাবুলের মানুষ এখন প্রতিদিন লড়ছে বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা—পানির জন্য। শহরটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।