০৯:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
স্পার্ম ব্যাংকে ‘শেষ ভরসা’, বিলুপ্তির কিনারায় চিতাবাঘের জিন রক্ষার লড়াই ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ‘কিছুটা কম’, বাস্তবে তবু বিপুল অর্থনৈতিক ঝুঁকি তোমার ফোন একটি নেশা নয়, এটি একটি পরকালের দরজা এআই ডেটা সেন্টারের দৌড়ে ক্রুশিয়াল ব্র্যান্ড বন্ধ করছে মাইক্রন ইতালির স্বপ্ন নড়ে উঠল: সিসিলি-মেসিনা সেতু প্রকল্পে আদালতের না–এর পর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে এশিয়ার সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শনী, চীনের শক্তি দেখানো না ঝুঁকির নতুন ধাপ?” পোকেমন-এর বিবর্তন: খেলার মাঠ থেকে বৈশ্বিক ঘটনা আপনার সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা কিভাবে করবেন থাইল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতির হার নভেম্বর মাসে আবার নেতিবাচক

ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

FILE PHOTO: Model of natural gas pipeline, EU and Russia flags, July 18, 2022. REUTERS/Dado Ruvic/Illustration/File Photo

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধ করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা সব সদস্যদেশকে সমানভাবে প্রভাবিত করবে না। কারণ বিভিন্ন দেশে গ্যাসের ওপর নির্ভরতার মাত্রা ভিন্ন এবং বিকল্প উৎসে দ্রুত সরবরাহ বদলানোর সক্ষমতাও সমান নয়।

হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া–সহ কিছু দেশ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে, কারণ তাদের অর্থনীতি বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে গ্যাসনির্ভর এবং তারা এলএনজি আমদানির সুবিধা নিতে পারে না, যেহেতু দেশগুলো সমুদ্রবন্দরহীন।

ইইউ-র চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে আগামী কয়েক মাসে আরও বিরোধ দেখা দিতে পারে এবং কিছু সংশোধনও হতে পারে। ইইউ কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে এ বিষয়ে আইন পাস করা যাবে।

নিচে ইউরোপের সবচেয়ে গ্যাসনির্ভর দেশগুলো এবং সাম্প্রতিক আমদানি প্রবণতা ব্যাখ্যা করা হলো, যা সম্ভাব্য বিরোধের ক্ষেত্রগুলো স্পষ্ট করে।

মোট জ্বালানি প্রয়োজন
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে গ্যাসনির্ভরতার মাত্রা ব্যাপকভাবে ভিন্ন।

উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি মহাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসভোক্তা হলেও জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাসের অংশীদারিত্বের দিক থেকে তার অবস্থান অষ্টম।

ইতালি ইউরোপে গ্যাসনির্ভরতায় শীর্ষে। ২০২৪ সালে তাদের মোট জ্বালানির ৩৮% এসেছে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে—এনার্জি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী।

যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি ও নেদারল্যান্ডস গ্যাসনির্ভরতার হিসেবে পরবর্তী স্থানে রয়েছে। মোট ছয়টি প্রধান ইউরোপীয় দেশ তাদের জ্বালানির কমপক্ষে ৩০% গ্যাস থেকে পায়। তাই সরবরাহ কমানোর নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায়।

বিকল্প সরবরাহে রূপান্তরের সহজতা
যদিও গ্যাসনির্ভর শীর্ষ ১০টি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে ৯টি দেশ সমুদ্রবন্দরযুক্ত, যেখানে এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার করে আমদানি বাড়ানো সম্ভব।

হাঙ্গেরি সম্পূর্ণ স্থলবেষ্টিত হওয়ায় সেখানে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ অসম্ভব, যা রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ার ইইউ নির্দেশনার প্রতি তাদের কঠোর বিরোধের অন্যতম কারণ।

স্লোভাকিয়ার অবস্থাও কাছাকাছি—তাদের মোট জ্বালানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ গ্যাস থেকে আসে এবং একই ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা হাঙ্গেরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইইউ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।

ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া ও রোমানিয়ার মতো মধ্য ইউরোপের অন্যান্য গ্যাসনির্ভর দেশগুলোর জন্যও রুশবহির্ভূত গ্যাস পাওয়া ব্যয়বহুল, কারণ এলএনজি আমদানি বন্দর অনেক দূরে এবং বিকল্প পাইপলাইন সংযোগ সীমিত।

এলএনজির উচ্চমূল্য
সমুদ্রবন্দর থাকা দেশগুলোও রুশ গ্যাসের বদলে এলএনজি ব্যবহার করতে গেলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

রুশ গ্যাস খুব কম দামে সরবরাহ হয়েছে তা নয়, কিন্তু আমদানিকৃত এলএনজির তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে সস্তা।

শিল্পখাতের অনুমান অনুযায়ী রুশ পাইপলাইন গ্যাসের দাম সাধারণত ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৬ থেকে ৮ ডলার। বিপরীতে ইউরোপে আমদানিকৃত এলএনজির দাম ১২ থেকে ১৫ ডলার—অর্থাৎ প্রায় ৫০% বেশি।

যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার কারণে ইউরোপে এলএনজির দাম কিছুটা কমেছে, যা মূল্য ব্যবধান সংকুচিত করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রশ্ন
রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস স্থায়ীভাবে বাদ দিতে হলে ইউরোপকে বৃহৎ পরিমাণে এলএনজি আমদানিকারক অবস্থায় থাকতে হবে।

২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইউরোপের এলএনজি আমদানি ২৮৪ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়েছে—কেপলার তথ্য অনুযায়ী—যা রেকর্ড এবং ২০২৪ সালের তুলনায় ২৩% বেশি।

এই দ্রুত চাহিদা বৃদ্ধিতে এলএনজি রপ্তানিকারকদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার প্রতি আশাবাদ তৈরি হয়েছে। অনেক দেশ ভবিষ্যতে রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে, ধারণা করছে ইউরোপের এলএনজির চাহিদা আরও বাড়বে।

তবে ২০২৫ সালের আমদানি পরিমাণ ২০২৩ সালের রেকর্ড মাত্রার তুলনায় মাত্র ০.৩% বেশি—যা প্রশ্ন তোলে, এত উচ্চ আমদানির ধারাবাহিকতা কতটা স্থায়ী।

গত পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১% বেড়েছে, আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদন ১৫% কমেছে—এমবারের তথ্য অনুযায়ী।

আগামী দশকে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এলএনজির মোট চাহিদা সীমিত হতে পারে, এমনকি রুশ গ্যাস সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হলেও।

স্বল্পমেয়াদে গ্যাস এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পপ্রক্রিয়ায় ইউরোপের জন্য অপরিহার্য। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও বহু ইউরোপীয় ইউটিলিটি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাস ছাড়া চলতে পারবে না এবং জোরপূর্বক সরবরাহ বন্ধের বিরোধিতা করবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্পার্ম ব্যাংকে ‘শেষ ভরসা’, বিলুপ্তির কিনারায় চিতাবাঘের জিন রক্ষার লড়াই

ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

০৮:০০:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি বন্ধ করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা সব সদস্যদেশকে সমানভাবে প্রভাবিত করবে না। কারণ বিভিন্ন দেশে গ্যাসের ওপর নির্ভরতার মাত্রা ভিন্ন এবং বিকল্প উৎসে দ্রুত সরবরাহ বদলানোর সক্ষমতাও সমান নয়।

হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া–সহ কিছু দেশ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে, কারণ তাদের অর্থনীতি বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে গ্যাসনির্ভর এবং তারা এলএনজি আমদানির সুবিধা নিতে পারে না, যেহেতু দেশগুলো সমুদ্রবন্দরহীন।

ইইউ-র চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে আগামী কয়েক মাসে আরও বিরোধ দেখা দিতে পারে এবং কিছু সংশোধনও হতে পারে। ইইউ কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ২০২৬ সালের শুরুর দিকে এ বিষয়ে আইন পাস করা যাবে।

নিচে ইউরোপের সবচেয়ে গ্যাসনির্ভর দেশগুলো এবং সাম্প্রতিক আমদানি প্রবণতা ব্যাখ্যা করা হলো, যা সম্ভাব্য বিরোধের ক্ষেত্রগুলো স্পষ্ট করে।

মোট জ্বালানি প্রয়োজন
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে গ্যাসনির্ভরতার মাত্রা ব্যাপকভাবে ভিন্ন।

উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি মহাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসভোক্তা হলেও জ্বালানি মিশ্রণে গ্যাসের অংশীদারিত্বের দিক থেকে তার অবস্থান অষ্টম।

ইতালি ইউরোপে গ্যাসনির্ভরতায় শীর্ষে। ২০২৪ সালে তাদের মোট জ্বালানির ৩৮% এসেছে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে—এনার্জি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী।

যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, হাঙ্গেরি ও নেদারল্যান্ডস গ্যাসনির্ভরতার হিসেবে পরবর্তী স্থানে রয়েছে। মোট ছয়টি প্রধান ইউরোপীয় দেশ তাদের জ্বালানির কমপক্ষে ৩০% গ্যাস থেকে পায়। তাই সরবরাহ কমানোর নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায়।

বিকল্প সরবরাহে রূপান্তরের সহজতা
যদিও গ্যাসনির্ভর শীর্ষ ১০টি ইউরোপীয় দেশের মধ্যে ৯টি দেশ সমুদ্রবন্দরযুক্ত, যেখানে এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার করে আমদানি বাড়ানো সম্ভব।

হাঙ্গেরি সম্পূর্ণ স্থলবেষ্টিত হওয়ায় সেখানে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ অসম্ভব, যা রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ার ইইউ নির্দেশনার প্রতি তাদের কঠোর বিরোধের অন্যতম কারণ।

স্লোভাকিয়ার অবস্থাও কাছাকাছি—তাদের মোট জ্বালানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ গ্যাস থেকে আসে এবং একই ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা হাঙ্গেরির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইইউ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।

ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া ও রোমানিয়ার মতো মধ্য ইউরোপের অন্যান্য গ্যাসনির্ভর দেশগুলোর জন্যও রুশবহির্ভূত গ্যাস পাওয়া ব্যয়বহুল, কারণ এলএনজি আমদানি বন্দর অনেক দূরে এবং বিকল্প পাইপলাইন সংযোগ সীমিত।

এলএনজির উচ্চমূল্য
সমুদ্রবন্দর থাকা দেশগুলোও রুশ গ্যাসের বদলে এলএনজি ব্যবহার করতে গেলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

রুশ গ্যাস খুব কম দামে সরবরাহ হয়েছে তা নয়, কিন্তু আমদানিকৃত এলএনজির তুলনায় এটি উল্লেখযোগ্যভাবে সস্তা।

শিল্পখাতের অনুমান অনুযায়ী রুশ পাইপলাইন গ্যাসের দাম সাধারণত ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ৬ থেকে ৮ ডলার। বিপরীতে ইউরোপে আমদানিকৃত এলএনজির দাম ১২ থেকে ১৫ ডলার—অর্থাৎ প্রায় ৫০% বেশি।

যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার কারণে ইউরোপে এলএনজির দাম কিছুটা কমেছে, যা মূল্য ব্যবধান সংকুচিত করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রশ্ন
রাশিয়ার পাইপলাইন গ্যাস স্থায়ীভাবে বাদ দিতে হলে ইউরোপকে বৃহৎ পরিমাণে এলএনজি আমদানিকারক অবস্থায় থাকতে হবে।

২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ইউরোপের এলএনজি আমদানি ২৮৪ বিলিয়ন ঘনমিটার ছাড়িয়েছে—কেপলার তথ্য অনুযায়ী—যা রেকর্ড এবং ২০২৪ সালের তুলনায় ২৩% বেশি।

এই দ্রুত চাহিদা বৃদ্ধিতে এলএনজি রপ্তানিকারকদের বিনিয়োগ পরিকল্পনার প্রতি আশাবাদ তৈরি হয়েছে। অনেক দেশ ভবিষ্যতে রপ্তানির সক্ষমতা বাড়াতে চাইছে, ধারণা করছে ইউরোপের এলএনজির চাহিদা আরও বাড়বে।

তবে ২০২৫ সালের আমদানি পরিমাণ ২০২৩ সালের রেকর্ড মাত্রার তুলনায় মাত্র ০.৩% বেশি—যা প্রশ্ন তোলে, এত উচ্চ আমদানির ধারাবাহিকতা কতটা স্থায়ী।

গত পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১% বেড়েছে, আর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদন ১৫% কমেছে—এমবারের তথ্য অনুযায়ী।

আগামী দশকে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এলএনজির মোট চাহিদা সীমিত হতে পারে, এমনকি রুশ গ্যাস সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হলেও।

স্বল্পমেয়াদে গ্যাস এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পপ্রক্রিয়ায় ইউরোপের জন্য অপরিহার্য। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও বহু ইউরোপীয় ইউটিলিটি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাস ছাড়া চলতে পারবে না এবং জোরপূর্বক সরবরাহ বন্ধের বিরোধিতা করবে।