০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ‘কিছুটা কম’, বাস্তবে তবু বিপুল অর্থনৈতিক ঝুঁকি তোমার ফোন একটি নেশা নয়, এটি একটি পরকালের দরজা এআই ডেটা সেন্টারের দৌড়ে ক্রুশিয়াল ব্র্যান্ড বন্ধ করছে মাইক্রন ইতালির স্বপ্ন নড়ে উঠল: সিসিলি-মেসিনা সেতু প্রকল্পে আদালতের না–এর পর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে এশিয়ার সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শনী, চীনের শক্তি দেখানো না ঝুঁকির নতুন ধাপ?” পোকেমন-এর বিবর্তন: খেলার মাঠ থেকে বৈশ্বিক ঘটনা আপনার সন্তানদের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা কিভাবে করবেন থাইল্যান্ডের মুদ্রাস্ফীতির হার নভেম্বর মাসে আবার নেতিবাচক ভারতীয় রুপির ফরওয়ার্ড রেট বৃদ্ধি: সুদ কমানোর আশা কমে যাওয়া ও তারল্য সংকটে বাজারে চাপ

জাপানের আকাজাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল: আমেরিকান চাল কিনতে বাধ্য করার হোয়াইট হাউস পরিকল্পনায় টোকিওর প্রতিবাদ

সফর বাতিলের পেছনের কারণ

জাপানের প্রধান শুল্ক আলোচক রিওসি আকাজাওয়া যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে তার ওয়াশিংটন সফর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে জাপানকে বেশি পরিমাণ আমেরিকান চাল কিনতে বাধ্য করার পরিকল্পনা যুক্ত হওয়ার খবর।

জাপান তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, অন্য একটি দেশের প্রেসিডেন্ট জাপান সরকারের করণীয় নির্ধারণ করতে পারে না।

জাপানের অবস্থান ও আপত্তি

আমেরিকার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ওই আদেশে জাপানি কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ও থাকতে পারে। কিন্তু জাপান জানিয়েছে, জুলাই মাসে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে জাপানকে নিজের শুল্ক কমাতে বাধ্য করা হয়নি। তাই এই পদক্ষেপকে তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

আকাজাওয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখনও কয়েকটি বিষয় কর্মপর্যায়ে আলোচনা করা দরকার। সেই আলোচনার মধ্যেই আমি সফর বাতিল করেছি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাইয়ের চুক্তি ও অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি

জুলাইয়ের শেষদিকে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশে নামাতে একমত হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ কমানোর ঘোষণা দেন, তাতে গাড়ি আমদানির শুল্ক ছাড় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখনো সেই সংক্রান্ত কোনো নির্বাহী আদেশ জারি হয়নি। জাপান দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে।

আকাজাওয়ার আশা ছিল এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক হ্রাসের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। কিন্তু দুই পক্ষের অবস্থানে বড় ধরনের ফারাক থাকায় তিনি সফর বাতিল করেন। বর্তমানে জাপানি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

আলোচনায় বিভ্রান্তি ও যোগাযোগ সমস্যা

আকাজাওয়া জাপানের আলোচনার নেতৃত্ব দেন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার অংশ নেন।

জাপান প্রধানত লুটনিকের সঙ্গেই বেশি আলোচনা করেছে, যাকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। আকাজাওয়া লুটনিকের সঙ্গে ১৫ বার এবং বেসেন্টের সঙ্গে ৭ বার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু গ্রিয়ারের সঙ্গে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে, সর্বশেষ মে মাসে। জুলাইয়ে যখন ট্রাম্প ও আকাজাওয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, তখন লুটনিক ও বেসেন্ট উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু গ্রিয়ার ছিলেন না। জাপানের কিছু কর্মকর্তা মনে করছেন, গ্রিয়ারের অনাগ্রহই বর্তমান অচলাবস্থার একটি কারণ।

৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ইস্যু

বাতিল হওয়া সফরে আকাজাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যৌথ নথিতে স্বাক্ষরের কথা ছিল। এতে জাপান যে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার কাঠামো নির্ধারণ করা হতো। নথিটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এতে দুই পক্ষের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধও ছিল না।

আমেরিকা এই নথি চাইছিল প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে। জাপান সম্মত হয়েছিল, তবে শর্ত ছিল বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমানোর নির্বাহী আদেশ দেবে।

বিনিয়োগ নিয়ে ভিন্ন দাবি

বিনিয়োগ ইস্যুতে দুই দেশের বর্ণনায় পার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার নির্দেশে এই ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। কিন্তু জাপানের পক্ষ বলছে, এটি আসলে একটি কাঠামো, যেখানে বিনিয়োগ ছাড়াও ঋণ ও সরকারি প্রতিষ্ঠান-সমর্থিত ঋণ নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একটি যৌথ নথি এসব অসঙ্গতি দূর করতে পারত।

সফর বাতিলের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে চলমান শুল্ক আলোচনা নতুন করে জটিল করে তুলেছে। মূল বিতর্ক হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্র কি তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জাপানকে কৃষিপণ্য কেনা ও শুল্ক কমানোর মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে কি না। জাপানের আপত্তি স্পষ্ট: এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ।

এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট আরও গভীর হচ্ছে, এবং আলোচনায় অচলাবস্থা কাটাতে উভয় পক্ষকে আরও কূটনৈতিক নমনীয়তা দেখাতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপের যেসব দেশ রুশ গ্যাস বাদ দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে

জাপানের আকাজাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল: আমেরিকান চাল কিনতে বাধ্য করার হোয়াইট হাউস পরিকল্পনায় টোকিওর প্রতিবাদ

০৩:২৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

সফর বাতিলের পেছনের কারণ

জাপানের প্রধান শুল্ক আলোচক রিওসি আকাজাওয়া যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে তার ওয়াশিংটন সফর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে জাপানকে বেশি পরিমাণ আমেরিকান চাল কিনতে বাধ্য করার পরিকল্পনা যুক্ত হওয়ার খবর।

জাপান তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, অন্য একটি দেশের প্রেসিডেন্ট জাপান সরকারের করণীয় নির্ধারণ করতে পারে না।

জাপানের অবস্থান ও আপত্তি

আমেরিকার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ওই আদেশে জাপানি কৃষিপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ও থাকতে পারে। কিন্তু জাপান জানিয়েছে, জুলাই মাসে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে জাপানকে নিজের শুল্ক কমাতে বাধ্য করা হয়নি। তাই এই পদক্ষেপকে তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

আকাজাওয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখনও কয়েকটি বিষয় কর্মপর্যায়ে আলোচনা করা দরকার। সেই আলোচনার মধ্যেই আমি সফর বাতিল করেছি।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।

জুলাইয়ের চুক্তি ও অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি

জুলাইয়ের শেষদিকে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশে নামাতে একমত হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ কমানোর ঘোষণা দেন, তাতে গাড়ি আমদানির শুল্ক ছাড় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখনো সেই সংক্রান্ত কোনো নির্বাহী আদেশ জারি হয়নি। জাপান দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে।

আকাজাওয়ার আশা ছিল এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক হ্রাসের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। কিন্তু দুই পক্ষের অবস্থানে বড় ধরনের ফারাক থাকায় তিনি সফর বাতিল করেন। বর্তমানে জাপানি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে কর্মপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

আলোচনায় বিভ্রান্তি ও যোগাযোগ সমস্যা

আকাজাওয়া জাপানের আলোচনার নেতৃত্ব দেন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার অংশ নেন।

জাপান প্রধানত লুটনিকের সঙ্গেই বেশি আলোচনা করেছে, যাকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। আকাজাওয়া লুটনিকের সঙ্গে ১৫ বার এবং বেসেন্টের সঙ্গে ৭ বার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু গ্রিয়ারের সঙ্গে মাত্র তিনবার কথা হয়েছে, সর্বশেষ মে মাসে। জুলাইয়ে যখন ট্রাম্প ও আকাজাওয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, তখন লুটনিক ও বেসেন্ট উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু গ্রিয়ার ছিলেন না। জাপানের কিছু কর্মকর্তা মনে করছেন, গ্রিয়ারের অনাগ্রহই বর্তমান অচলাবস্থার একটি কারণ।

৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ইস্যু

বাতিল হওয়া সফরে আকাজাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যৌথ নথিতে স্বাক্ষরের কথা ছিল। এতে জাপান যে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার কাঠামো নির্ধারণ করা হতো। নথিটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এতে দুই পক্ষের মধ্যে তেমন কোনো বিরোধও ছিল না।

আমেরিকা এই নথি চাইছিল প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে। জাপান সম্মত হয়েছিল, তবে শর্ত ছিল বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমানোর নির্বাহী আদেশ দেবে।

বিনিয়োগ নিয়ে ভিন্ন দাবি

বিনিয়োগ ইস্যুতে দুই দেশের বর্ণনায় পার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার নির্দেশে এই ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। কিন্তু জাপানের পক্ষ বলছে, এটি আসলে একটি কাঠামো, যেখানে বিনিয়োগ ছাড়াও ঋণ ও সরকারি প্রতিষ্ঠান-সমর্থিত ঋণ নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। একটি যৌথ নথি এসব অসঙ্গতি দূর করতে পারত।

সফর বাতিলের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে চলমান শুল্ক আলোচনা নতুন করে জটিল করে তুলেছে। মূল বিতর্ক হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্র কি তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জাপানকে কৃষিপণ্য কেনা ও শুল্ক কমানোর মতো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে কি না। জাপানের আপত্তি স্পষ্ট: এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ।

এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট আরও গভীর হচ্ছে, এবং আলোচনায় অচলাবস্থা কাটাতে উভয় পক্ষকে আরও কূটনৈতিক নমনীয়তা দেখাতে হবে।