গত কয়েক সপ্তাহের প্রচণ্ড গরম, অল্প বৃষ্টি ও ভয়াবহ দাবানলে নোভা স্কশিয়া ও নিউ ব্রান্সউইক প্রদেশ সরকার জরুরি ব্যবস্থা নেয়। বনভূমি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, আগুন জ্বালানো ও বিভিন্ন কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। এসব সিদ্ধান্ত সারা কানাডায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘায়িত দাবানল মৌসুম মোকাবেলায় সরকার ও জনগণের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য।
‘আগুন সবসময় রাজনৈতিক’
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এরিক কেনেডি বলেন, আগুনের ইতিহাস সবসময় রাজনৈতিক ছিল। কোন আগুন নেভানো হবে, কোনটিকে উপেক্ষা করা হবে, কোন সম্পদ রক্ষা পাবে এবং কোথায় অর্থ ব্যয় করা হবে—এসব সিদ্ধান্ত মূলত মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারকে কেন্দ্র করে।

কঠোর পদক্ষেপ ও জনঅসন্তোষ
নোভা স্কশিয়া ও নিউ ব্রান্সউইক সরকার ক্রাউন ল্যান্ড ও জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত করে। ফলে হাঁটা, সাইকেল চালানো, মাছ ধরা, ক্যাম্পিং ও এটিভি চালানো নিষিদ্ধ হয়। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়।
লুইসডেলের জুলিসা স্টুয়ার্ট বলেন, কেউ সিগারেট খেয়ে ফেলতে পারে—এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু শুধু হাঁটা বা কুকুর নিয়ে ঘোরা কি সত্যিই বিপজ্জনক?
একজন সেনা অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক, জেফ ইভেলি, খোলাখুলিভাবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন এবং তাকে ২৮ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। তিনি আদালতে এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি কানাডিয়ান কনস্টিটিউশন ফাউন্ডেশনও এই প্রাদেশিক নিষেধাজ্ঞা আইনি লড়াইয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সমর্থন ও বিরোধিতা
রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নর্থ স্টার পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান ফ্রেড ডেলোরি বলেন, নোভা স্কশিয়ার অধিকাংশ মানুষ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছে। সরকারের কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জনগণ ও প্রদেশের সুরক্ষাই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। তবে অনেক সমালোচনা আসছে প্রদেশের বাইরের মহল থেকে, যারা এটিকে স্বাধীন চলাফেরায় হস্তক্ষেপ বা সরকারের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ হিসেবে দেখছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি
নিউ ব্রান্সউইকে বনাঞ্চলে শিল্প কার্যক্রম স্থগিত থাকায় কাঠ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েন। নিউ ব্রান্সউইক ফেডারেশন অব উডলট ওনার্সের সভাপতি রিক ডুসেট জানান, তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন, তবে এতে বড় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কাজ না থাকায় অনেকেই বিল পরিশোধ করতে পারছেন না।
ধীরে ধীরে শিথিলতা
আগস্ট ১০ থেকে বন্ধ থাকা নিউ ব্রান্সউইকের ক্রাউন ল্যান্ড ৩১ আগস্ট আবার খুলে দেওয়া হয়। কিছু শহরে পার্ক ও ট্রেইল খুলে দেওয়া হলেও প্রদেশজুড়ে আগুন জ্বালানো এখনো নিষিদ্ধ। নোভা স্কশিয়াতেও একইভাবে বার্ন ব্যান চলছে এবং ক্রাউন ল্যান্ডে প্রবেশে সীমাবদ্ধতা বজায় আছে, কারণ আনাপোলিস কাউন্টিতে এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার লড়াই চলছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
এরিক কেনেডি সতর্ক করে বলেন, সাময়িক শিথিলতা মানেই সমাধান নয়। দাবানল এখন প্রতি বছরই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য গ্রহণযোগ্য নিষেধাজ্ঞা হয়তো মানুষ মেনে নেবে, কিন্তু টানা কয়েক সপ্তাহের জন্য একই নিয়ম কার্যকর রাখা কঠিন হবে। তাই সৃজনশীল সমাধানের প্রয়োজন।
প্রযুক্তি নয়, মানুষের সমস্যা
কেনেডি মনে করেন, দাবানল শুধু প্রযুক্তি দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। এটি মানুষের মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে জড়িত। মানুষকে বোঝানো জরুরি কেন এসব নিয়ম প্রয়োগ করা হচ্ছে। শুধু নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া কার্যকর নয়। স্থানীয়ভাবে আস্থা তৈরি করতে হবে এবং বিকল্পভাবে নিরাপদ আউটডোর কার্যক্রম চালু করার উপায় খুঁজতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দাবানল শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। সরকারকে স্বচ্ছ ও মানবিক যোগাযোগ বজায় রেখে জনগণকে সাথে নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় প্রতি বছরই এ বিতর্ক নতুন করে সামনে আসবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















