তুলা রপ্তানির বড় পতন
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানি চীনে প্রায় ৯০% হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান ও তুরস্কের মতো দেশগুলোতে রপ্তানি বেড়েছে, বিশেষ করে ভিয়েতনামে রপ্তানি প্রায় তিনগুণ হয়েছে। এই পরিবর্তন মূলত মার্কিন শুল্ক আরোপ এবং পোশাক উৎপাদনের কেন্দ্র সরে যাওয়ার প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন শুল্ক নীতি ও এর প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এপ্রিল মাসে চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন, যা ১৪৫% এ পৌঁছায়। পরবর্তী আলোচনার পর মে মাসে তা কমিয়ে ৩০%-এ নামানো হয়। তবুও ভবিষ্যৎ বাণিজ্য আলোচনার অনিশ্চয়তা চীননির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

উৎপাদন কেন্দ্রের পরিবর্তন
গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদন ধীরে ধীরে চীন থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সরে যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে সস্তা শ্রমের কারণে এই দেশগুলোতে আকর্ষণ বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা ও শুল্ক আশঙ্কা এ প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও অন্যদের সুবিধা
ওয়াশিংটন ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক ৪৬% থেকে ২০%-এ এবং পাকিস্তানের ওপর ২৯% থেকে ১৯%-এ নামিয়েছে। ফলে এই দেশগুলো তুলা আমদানির ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে চীন থেকে সরে যাওয়া প্রবণতা অব্যাহত থাকায় মার্কিন তুলার রপ্তানি দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রানশিপমেন্ট ও ঝুঁকি
মার্কিন কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে, কিছু চীনা পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়। ভিয়েতনামে চীনা সুতা ও কাপড় ব্যবহার করে তৈরি পোশাক কখনও ট্রানশিপমেন্ট হিসেবে ধরা পড়তে পারে। তবে ভিয়েতনামে তুলা আমদানির বড় বৃদ্ধি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সেখানে স্থানীয় কাঁচামাল উৎপাদন বাড়ছে।
চীনের কৌশল
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদ থেকেই বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে। তুলার পাশাপাশি সয়াবিন ও ভুট্টার ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা রয়েছে। ২০২৪ সালে ব্রাজিল ছিল চীনের সবচেয়ে বড় তুলা রপ্তানিকারক দেশ, এবং এই প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
উৎপাদন ও মূল্য পরিস্থিতি
২০২৪ সালে জুলাই শেষ হওয়া অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ১ কোটি ১৯ লাখ বেল তুলা রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১% বেশি। চীনে রপ্তানি কমলেও অন্য বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ২০ লাখ বেল রপ্তানির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তবে তুলার দাম দুর্বল। নিউইয়র্কের মানদণ্ডমূলক ফিউচারস মঙ্গলবার প্রতি পাউন্ডে ৬৬ সেন্টে স্থির ছিল, যা বছরের শুরুতে ৬৯ সেন্ট ছিল।

রাজনৈতিক প্রভাব
জাপান কটন ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের নোবুও ওশিমো বলেন, “পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেক, আর টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদা কখন পুনরুদ্ধার হবে তা বলা কঠিন।”
মার্কিন দক্ষিণাঞ্চল, যেখানে তুলা উৎপাদন বেশি হয়, দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির ঘাঁটি। যদি শুল্ক নীতি রপ্তানি কমিয়ে বা দাম নামিয়ে তুলা চাষিদের ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে ২০২৬ সালের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য এটি সমস্যা হতে পারে। ফলে তিনি বাণিজ্য আলোচনায় সঙ্গীদের ওপর তুলা ও অন্যান্য কৃষিপণ্য কেনার চাপ বাড়াতে পারেন।
ভারতের পদক্ষেপ
ভারত আগস্ট মাসে অস্থায়ীভাবে তুলার শুল্ক সরিয়ে নিয়েছে, যা মার্কিন তুলা আমদানি বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতের পোশাক শিল্পকে সহায়তা করবে এবং একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















