সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন
চীনের তিয়ানজিন শহরে ২০২৫ সালের এসসিও সম্মেলনে একসঙ্গে হাসিমুখে বসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এটি শক্তি প্রদর্শনের প্রতীক হলেও প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চীনের মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাড়তে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক।
শিরোনাম বক্তৃতায় শি’র দৃষ্টিভঙ্গি
নিজের মূল বক্তৃতায় শি জিনপিং “গ্লোবাল সাউথ”-এর জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিশন তুলে ধরেন। এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা প্রভাবের চ্যালেঞ্জ। এ প্রস্তাবের কেন্দ্রে রয়েছে শক্তি ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা বাড়ানো। বিশেষভাবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে চীন।

সবুজ শক্তির উচ্চাভিলাষ
চীনের এই প্রতিশ্রুতি অস্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট। কাজাখস্তানের মতো দেশে বিশাল খালি জমি রয়েছে যেখানে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাউদার্ন পাওয়ার গ্রিড ও জিসিএল-এর মতো প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এ অঞ্চলে নতুন প্রকল্প চালু করেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হলো এক ধরনের “সবুজ শক্তি করিডোর” গড়ে তোলা, যা তিব্বত বা উজবেকিস্তানের মতো জ্বালানি সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিদ্যুৎ-ক্ষুধার্ত বাজারে সস্তা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারবে।
বাণিজ্যিক সাফল্য ও নতুন ব্যাংকের পরিকল্পনা
শুধু পরিকল্পনাই নয়, বাণিজ্যিক সম্পর্কও বাড়ছে। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে মধ্য এশিয়ার পাঁচ দেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্য ১০.৪% বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছিল চীনা রপ্তানি, যেখানে যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল প্রধান পণ্য। একই সঙ্গে শি নতুন একটি এসসিও উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব দেন। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এ বছর চীন ২ বিলিয়ন ইউয়ান (২৮০ মিলিয়ন ডলার) বিনামূল্যের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মার্কিন ডলারের বিকল্প শক্তি হিসেবে ইউয়ান
চীনের এসব উদ্যোগ আসলে মার্কিন ডলারের প্রভাবকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা। ২০২৩ সালে উজবেকিস্তানে ৫০০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পে চীনা কোম্পানি বিনিয়োগ করে এবং বিদ্যুৎ চুক্তি ইউয়ানে নিষ্পত্তি হয়। ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি ইউয়ানভিত্তিক লেনদেনও সাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
এভাবে “ইলেক্ট্রো-ইউয়ান” ধারণা শক্তিশালী হবে, যেভাবে ১৯৭০-এর দশকে তেলের ব্যবসা মার্কিন ডলারে নিষ্পত্তি হওয়ায় ‘পেট্রোডলার’ বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের প্রাধান্য স্থাপন করেছিল। যদি সবুজ বিদ্যুৎ লেনদেনে ইউয়ান ব্যবহার শুরু হয়, তবে এটি বিশ্বকে নেট-শূন্য জ্বালানি ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চীনা মুদ্রার বৈশ্বিক অবস্থান শক্ত করবে। পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে এটি হবে শি জিনপিংয়ের সবচেয়ে বড় জয়।
প্রেক্ষাপট
- ২০টিরও বেশি দেশের নেতা, যেমন ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি, ১ সেপ্টেম্বর তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে অংশ নেন।
- শি ঘোষণা দেন যে এসসিও দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানি, সবুজ শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে তিনটি বড় সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম গঠন করবে চীন।

- তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরে এসসিও দেশগুলোর সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিটিতে ১ কোটি কিলোওয়াট বাড়ানো হবে।
- একই বক্তৃতায় শি নতুন এসসিও উন্নয়ন ব্যাংক গঠনের আহ্বান জানান।
মধ্য এশিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনের বিনিয়োগ ও ইউয়ানভিত্তিক বাণিজ্যের প্রসার শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্ব মুদ্রা ব্যবস্থায় ডলারের প্রভাব কমানোর পাশাপাশি চীনের “সবুজ শক্তি” ও “ইলেক্ট্রো-ইউয়ান” কৌশলকে জোরদার করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















