গন্ডা সিং ওয়ালা ও সিধনাইয়ে ভয়াবহ বন্যা
ফ্লাড ফোরকাস্টিং ডিভিশন (এফএফডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, গন্ডা সিং ওয়ালায় (সতলজ নদী) ৩ লাখ ১৯ হাজার কিউসেক এবং সিধনাই (রাভি নদী) এলাকায় ১ লাখ ৫৭ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।
চেনাব নদীতেও প্রচুর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মারালা হেডওয়ার্কসে ৪ লাখ ৬৩ হাজার কিউসেক এবং খানকি হেডওয়ার্কসে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কিউসেক পানির প্রবাহ ধরা পড়েছে।
পাঞ্জাবে নৌকা–ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা
পাঞ্জাব সরকার ‘ক্লিনিকস অন বোটস’ নামে বিশেষ উদ্যোগ চালু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে আটকে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ডাক্তার, ওষুধ এবং চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বন্যাদুর্গতদের পানিবাহিত রোগ ও সংক্রমণের চিকিৎসা করা।

সিন্ধুতে প্রস্তুতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
সিন্ধু প্রদেশের পিডিএমএ মহাপরিচালক সৈয়দ সালমান শাহ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মানুষের জীবন রক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং গবাদিপশু ও ফসলের সুরক্ষা সরকারের অগ্রাধিকার।
ডব্লিউএফপি আশ্বাস দিয়েছে যে তারা খাদ্য সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রমে সিন্ধু সরকারের পাশে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বেইজিং থেকে ফোনে এনডিএমএ চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইনাম হায়দার মালিককে দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণকে রাভি, চেনাব ও সতলজ নদীর পানিস্তর সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক করা জরুরি।

সিন্ধুতে উদ্ধার কার্যক্রম
সিন্ধুতে রেসকিউ ১১২২ দল সক্রিয়ভাবে মানুষ সরিয়ে নিচ্ছে। সুক্কুর জেলায় এক অভিযানে ২১ জনকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। অন্য অভিযানে আরও ৩৪ জনকে সরানো হয়েছে।
সিন্ধু সরকারের নির্দেশে প্রতিটি এলাকায় জরুরি সাড়া দানের দল মোতায়েন করা হয়েছে।
পাঞ্জাবে ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া
রেসকিউ ১১২২ জানিয়েছে, পাঞ্জাবে এখন পর্যন্ত ২ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নৌকার সংখ্যা বাড়িয়ে ১,৫০০ করা হয়েছে। মোট ৩ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ এবং প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও ত্রাণ কার্যক্রম
মুলতান ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, এখনো কলেরা বা গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। ২৫টি ত্রাণকেন্দ্র ও ২৮টি ফিল্ড হাসপাতাল সক্রিয় আছে।
ত্রাণকেন্দ্রে শিশু খাদ্য ও দুধও সরবরাহ করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ
বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন মেরামত চলছে। লাহোর ও আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৭টি ফিডারের মধ্যে ৩১টি পুনরায় সচল হয়েছে। ফয়সালাবাদ অঞ্চলে ৭৬টির মধ্যে ১৮টি ফিডার পুনরায় চালু হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ও গভর্নরের উদ্যোগ
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও পাঞ্জাব গভর্নর সারদার সেলিম হায়দার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন। কার্তারপুরে নিরাপদ পানীয় জলের জন্য একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে।
আবহাওয়া ও সতর্কতা
এনডিএমএ জানিয়েছে, ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিন্ধুতে প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। নাগরিকদের নদীর পাড় ও নিচু এলাকা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তাদের মতে, ভারতের হিমাচল প্রদেশ এবং কাশ্মীর থেকে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়ে সতলজ, রাভি ও চেনাব দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করছে।

ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি
পাঞ্জাব রিলিফ কমিশনার জানিয়েছেন, বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৩ জন মারা গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৩ লাখের বেশি। প্রায় ১৩ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮ লাখ পশুও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুনর্বাসন পরিকল্পনা
মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ বলেছেন, শুধু অস্থায়ী ত্রাণ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্গঠন ও স্থায়ী ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সরকার কাজ করবে।
রাজনৈতিক সমালোচনা
পিটিআই নেতা সালমান আকরাম সরকারের বিদেশ সফর ও ‘দৃষ্টির অভাব’ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, হাজার হাজার একর জমি পানিতে ডুবে আছে অথচ বাস্তবে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে না।

সামগ্রিক চিত্র
পাঞ্জাবে ৩,৩০০ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪০০-এর বেশি ত্রাণ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩৮৫টি পশুচিকিৎসা শিবির চালু করা হয়েছে। মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গুর আশঙ্কায় আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গভর্নর পাঞ্জাব ঘোষণা করেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি ও পশুর ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং বিদ্যুৎ বিল ছয় মাসের জন্য মওকুফ করার প্রস্তাব তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলবেন।
এই ভয়াবহ বন্যা পাকিস্তানের কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















