সৌদি আরব এক নতুন ধরনের বাজি ধরেছে—যেমন একসময় তেল অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছিল, এবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দেশের পর্যটন খাতে সেই ভূমিকা রাখবে বলে তারা আশা করছে।
ফুটবলের বাইরে কৌশল
২০২২ সালে রোনালদোর আল নাসরে যোগদান শুধু একটি ফুটবল ট্রান্সফার ছিল না। এটি ছিল একটি জাতীয় কৌশলের সূচনা—ক্রীড়া ও বিনোদনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের টানা, দেশের ভাবমূর্তি পাল্টানো এবং ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য পূরণে গতি আনা।
সৌদি সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাতকে জিডিপির ১০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যেখানে বর্তমানে এর অংশ মাত্র ৩ শতাংশ। এজন্য তারা ক্রীড়া, সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক উৎসব ও বিলাসবহুল অভিজ্ঞতার মতো নানা আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিবছর লাখো পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা করছে।
রোনালদোর প্রভাব
রোনালদোর রিয়াদে আগমনেই সৌদি ফুটবলের মর্যাদা বেড়ে যায়। আল নাসরের হয়ে তার অভিষেক ম্যাচ স্টেডিয়াম ভরাট করে, সৌদি প্রো লিগের সম্প্রচার চুক্তি বাড়ায় এবং ক্লাবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটি কোটি নতুন অনুসারী যোগ করে।
এখন ভক্তরা শুধু তার খেলা দেখতেই নয়, বরং রিয়াদ ও জেদ্দায় ভ্রমণ করে নতুন আকর্ষণগুলোও ঘুরে দেখছে। তার পরপরই করিম বেনজেমা, নেইমার, এন’গোলো কঁতের মতো তারকারা আসলেও রোনালদো এখনো প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। সৌদি ফুটবলকে বিশ্বমঞ্চে ধরে রাখতে তারকাখ্যাতি কাজে লাগানো হচ্ছে।
পর্যটকের জন্য সাজানো ক্যালেন্ডার
সৌদি আরবের নতুন উন্মোচিত UNREAL ক্যালেন্ডার দেখাচ্ছে কিভাবে রোনালদোর জনপ্রিয়তাকে সারা বছরব্যাপী বিনোদনমুখী আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।
- • রিয়াদে WTA ফাইনালস, জেদ্দায় ফর্মুলা ওয়ান, এবং ATP নেক্সট জেন ফাইনালস।
- • সঙ্গীত উৎসব—MDLBEAST সাউন্ডস্টর্ম ও আজিমুথ।
- • আলউলার সাংস্কৃতিক আয়োজন, যেখানে ঐতিহ্যবাহী ট্যুর থেকে শুরু করে মরুভূমির পোলো পর্যন্ত রয়েছে।
- • মৌসুমি উৎসব—রিয়াদ সিজন ও জেদ্দা সিজন, যা শহরগুলোকে কনসার্ট, ফ্যাশন ও খাদ্যকেন্দ্রিক উৎসবে রূপান্তর করছে।
পরিকল্পনাটা স্পষ্ট: এক ম্যাচ দেখার জন্য দর্শনার্থীকে টেনে আনা, এরপর কনসার্ট, সমুদ্রসৈকতের উৎসব বা ঐতিহ্যবাহী অভিজ্ঞতায় তাদের ধরে রাখা।
কেন গুরুত্বপূর্ণ
রোনালদো সৌদি আরবকে এমন এক জিনিস দিচ্ছেন যা শুধু অর্থ দিয়ে কেনা যায় না—বিশ্বজুড়ে মনোযোগ। তিনি এক আন্তর্জাতিক দরজা খুলে দিচ্ছেন, যাতে সৌদি বৈশ্বিক ফুটবল আলোচনার অংশ হয়ে উঠছে।
- • এখন বিদেশি দর্শকরাও ম্যাচের টিকিট কিনছে।
- • ট্যুর প্যাকেজগুলো আল নাসরের ম্যাচকে কেন্দ্র করে সাজানো হচ্ছে।
- • হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিমানসংস্থাগুলো উপকৃত হচ্ছে, কারণ দর্শনার্থীরা ক্রীড়ার সঙ্গে বিনোদন মিলিয়ে বেশি দিন অবস্থান করছে।
উচ্চ ঝুঁকির বাজি
তবে এই পথ ঝুঁকিমুক্ত নয়। তারকা খেলোয়াড়দের আনতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। পর্যটন বৃদ্ধির জন্য কেবল তারকাখ্যাতি নয়, অবকাঠামো, যাতায়াত সুবিধা এবং দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতাও জরুরি। কিন্তু সৌদি নেতৃত্বের বিশ্বাস, রোনালদোই সেই প্রভাবক যিনি পরিবর্তন আনতে পারেন।
যদি তিনি ভক্তদের মহাদেশ পেরিয়ে তাকে দেখতে উড়োজাহাজে চড়তে রাজি করাতে পারেন, তবে হয়তো তিনি তাদের সৌদি আরবের অন্যান্য সৌন্দর্যও আবিষ্কারে আগ্রহী করে তুলবেন।