গবেষণায় নতুন দিগন্ত
ক্যালিফোর্নিয়ার একদল রসায়নবিদ হঠাৎ করেই আবিষ্কার করেছেন, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় লেজার ছাড়া দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব হতে পারে। এর ফলে জনপ্রিয় ল্যাসিক (LASIK) সার্জারির বিকল্প হিসেবে এক নতুন, কম ব্যয়বহুল ও ক্ষতবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ল্যাসিকের সীমাবদ্ধতা
ল্যাসিক হলো এক ধরনের দ্রুত লেজার সার্জারি, যেখানে কর্নিয়ার (চোখের স্বচ্ছ সামনের স্তর) টিস্যুর কিছু অংশ কেটে ফেলে তার বাঁক সংশোধন করা হয়। এর মাধ্যমে কাছের ও দূরের দৃষ্টি সমস্যা এবং অ্যাস্টিগমাটিজমের সমাধান হয়। তবে এতে স্থায়ীভাবে টিস্যু নষ্ট হয় এবং শুকনো চোখ, রাতের আলোতে ঝাপসা দেখা সহ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া, পাতলা কর্নিয়া বা অন্য ঝুঁকি থাকলে অনেকেই এই সার্জারির জন্য উপযুক্ত নন।
নতুন পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক কৌশল
অক্সিডেন্টাল কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইরভাইনের গবেষকরা রাসায়নিকভাবে কর্নিয়ার গঠন বদলানোর একটি প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন।
- ক্ষুদ্র এক বৈদ্যুতিক প্রবাহ দিয়ে কর্নিয়ার পিএইচ কমানো হয়, ফলে তা অম্লীয় হয়ে কোলাজেন কাঠামো শিথিল হয়ে যায় এবং নরম হয়ে ওঠে।
- এরপর কর্নিয়ার ওপর কাঙ্ক্ষিত বাঁকের একটি প্লাটিনাম লেন্স বসানো হয়। কর্নিয়া নরম হয়ে সেই বাঁকে নিজেকে মানিয়ে নেয়।
- পিএইচ পুনরুদ্ধার করলে কর্নিয়া নতুন আকৃতিতে স্থায়ীভাবে শক্ত হয়ে যায়।

পরীক্ষার ফলাফল
গবেষকরা এই প্রক্রিয়া খরগোশের চোখে লবণাক্ত দ্রবণে পরীক্ষা করেন।
- ১২টির মধ্যে ১২টি চোখ সফলভাবে লেন্সের বাঁক অনুযায়ী আকৃতি নেয়।
- এর মধ্যে ১০টি ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে কাছের দৃষ্টি দুর্বলতা (nearsightedness) অনুকরণ করা হয়েছিল, যা সংশোধিত হয়।
- দুই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে কাছের দৃষ্টি সমস্যার সমাধান লক্ষ করা যায়।
ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল রিশেপিং (EMR)
এই নতুন পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল রিশেপিং বা EMR। এটি কর্নিয়াকে কোনো কাটাছেঁড়া ছাড়াই ধাতব প্লেটের মাধ্যমে আকার পরিবর্তনের সুযোগ দেয়।

ড. ব্রায়ান ওয়ং, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইরভাইনের সার্জন ও অধ্যাপক বলেন,
“আমি জীবন্ত টিস্যুকে ঢালাইযোগ্য উপাদান হিসেবে দেখছিলাম। তখনই রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলাম।”
তাঁর সহযোগী অক্সিডেন্টাল কলেজের রসায়নের অধ্যাপক ড. মাইকেল হিল বলেন,
“আমাদের সামনে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি। তবে যদি ক্লিনিক পর্যায়ে পৌঁছানো যায়, এই পদ্ধতি অনেক সস্তা, বহুল প্রয়োগযোগ্য এবং এমনকি উল্টোনোও সম্ভব।”
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৬৭ মিলিয়ন মানুষ চশমা এবং ৪৫ মিলিয়ন মানুষ কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন। ল্যাসিকের ঝুঁকি ও ব্যয় অনেকের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় EMR চোখের দৃষ্টি সমস্যার চিকিৎসায় সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং নতুন এক দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

পরবর্তী ধাপ
গবেষকরা এখন জীবন্ত প্রাণীর ওপর দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা চালাবেন, যাতে দেখা যাবে এই প্রযুক্তি বাস্তবে কতটা কার্যকর ও নিরাপদ। এর মাধ্যমে কাছের দৃষ্টি, দূরের দৃষ্টি এবং অ্যাস্টিগমাটিজমের মতো সাধারণ সমস্যার সমাধান করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
যদিও গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে একদিন এটি ল্যাসিক সার্জারির বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিষয়টি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















