নতুন সিদ্ধান্ত
ওপেক+ জোট অক্টোবর থেকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটি গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ব্যারেল এবং জুন ও জুলাইয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময়ে, যখন বৈশ্বিক চাহিদা আগামী মাসগুলোতে কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবুও সৌদি আরবের নেতৃত্বে ওপেক+ বাজারে নিজেদের শেয়ার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

অতীতের কাটছাঁট প্রত্যাহার
রবিবারের বৈঠকে জানানো হয়, ওপেক+ জোট ১ কোটি ৬৫ লাখ ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন কমানোর দ্বিতীয় ধাপের কাটছাঁট আগেভাগেই প্রত্যাহার শুরু করেছে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তারা ২ কোটি ৫০ লাখ ব্যারেলের প্রথম ধাপের কাটছাঁট পুরোপুরি তুলে নিয়েছিল, যা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ২.৪ শতাংশের সমান।
রাইস্টাডের বিশ্লেষক ও সাবেক ওপেক কর্মকর্তা হোর্হে লিয়ন মন্তব্য করেন, “ব্যারেল সংখ্যা হয়তো কম, কিন্তু বার্তাটা বড়। ওপেক+ এখন উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার দখলকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, এমনকি এতে দাম কমার ঝুঁকি থাকলেও।”
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
ওপেক+ এর সদস্য দেশগুলো গ্রীষ্মে সহজেই উৎপাদন বাড়াতে পেরেছিল কারণ তখন চাহিদা বেশি ছিল। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রকৃত পরীক্ষা হবে, যখন চাহিদা কমে আসবে। এজন্য ওপেক+ জানিয়েছে, প্রয়োজনে তারা উৎপাদন বৃদ্ধি থামাতে বা উল্টো দিকেও যেতে পারে। আট দেশের পরবর্তী বৈঠক হবে ৫ অক্টোবর।

ভেতরের টানাপোড়েন
এই উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এসেছে এমন সময়ে, যখন সৌদি আরব কাজাখস্তানের মতো অতিরিক্ত উৎপাদনকারী সদস্যদের শাস্তি দিতে চেয়েছে। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুন উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করে উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশীয় জ্বালানি তেলের দাম কমাতে ওপেককে চাপ দিয়েছেন। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে।
বাজারে প্রভাব
তেলের দাম এ বছর ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে, যা কোম্পানিগুলোর মুনাফাকে মহামারির পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়েছে এবং হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই ঘটিয়েছে।
তবুও দাম পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি দাম প্রায় ৬৫ ডলার, যা রাশিয়া ও ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে টিকে আছে। এই পরিস্থিতি ওপেক+ কে উৎপাদন বাড়াতে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
তবে প্রতিশ্রুত পরিমাণে উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেশিরভাগ সদস্য দেশ ব্যর্থ হয়েছে, কারণ তারা প্রায় সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছে গেছে। তাই অতিরিক্ত সরবরাহ দেওয়ার সক্ষমতা মূলত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতেই সীমিত।

ভবিষ্যৎ চিত্র
রবিবারের বৈঠকের আগে পর্যন্ত ওপেক+ এর দুই স্তরের উৎপাদন কমানো কার্যকর ছিল।
১. আট দেশের সম্মিলিত ১ কোটি ৬৫ লাখ ব্যারেল কমানো।
২. পুরো গ্রুপের ২ কোটি ব্যারেল কমানো, যা ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে।
অক্টোবর থেকে ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ানো শুরু হলেও বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমার সম্ভাবনা থাকায় ওপেক প্লাস এর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















