ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বসন্তে নিজেকে আখ্যা দিয়েছিলেন “ফার্টিলাইজেশন প্রেসিডেন্ট” বা ‘নিষেকের প্রেসিডেন্ট’। কিন্তু রক্ষণশীল পরিবার-নীতি সমর্থকদের একটি অংশ বলছে, এখনো পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে সেটির যথেষ্ট প্রতিফলন ঘটাননি। তারা চাইছে, বছরের বাকি মাসগুলোতে হোয়াইট হাউস পরিবারনীতি অগ্রাধিকার দিক—এবং আমেরিকানদের আরও বেশি শিশু জন্ম দিতে সহায়তা করুক।
পরিবারনীতি শীর্ষ অগ্রাধিকার
রক্ষণশীলদের শীর্ষ দাবি হলো একটি পরিবারনীতি সম্মেলন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কমে যাওয়া প্রজননহারকে কেন্দ্র করে আলোচনা হবে। তাদের আরও প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ডে কেয়ার ও শিশু আসনের নিয়ম সহজ করা, শিশু করছাড় (চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট) আরও বাড়ানো এবং জন্ম থেকে শুরু করে প্রসবপূর্ব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা বিনা খরচে বীমার আওতায় আনা।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন কিছু নীতি চালু করেছে যেগুলোকে “প্রো-ফ্যামিলি” বলা হচ্ছে, অনেক রক্ষণশীল হতাশ যে তিনি নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রাণবন্ত বিষয়টিতে বেশি কিছু করেননি।
জিওপি-তে চাপ ও বিভাজন
এই অচলাবস্থা রিপাবলিকান পার্টির বিভিন্ন অংশে উৎসাহ কমাতে পারে—বিশেষ করে নিউ রাইট পপুলিস্টরা, যারা কর্মশক্তির সংকোচন নিয়ে চিন্তিত, এবং টেকনো-নেটালিস্টরা, যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনসংখ্যা বাড়াতে চান।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো টিম কার্নি বলেন, “অনেকেই হোয়াইট হাউসে পরিবার-কেন্দ্রিক উদ্যোগ এগোতে চান। কিন্তু এখনো সেটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের শীর্ষে পৌঁছায়নি।”
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন যে সমর্থকদের অস্থিরতা আছে, তবে তারা দাবি করছেন, পুরো সরকার মিলেই পরিবারনীতির দিকে কাজ করছে। রিপাবলিকানদের কর ও নীতি বিল পাস হওয়ার পর এখন হোয়াইট হাউস দুটি দিক বিবেচনা করছে—সন্তান নিতে আর্থিক ও বন্ধ্যাত্বজনিত বাধা দূর করা এবং অভিভাবকদের মূল্যবোধ অনুযায়ী সন্তান লালন-পালনে সহায়তা করা। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল নির্বাচনের সুযোগ বৃদ্ধি, পিতামাতার অধিকার জোরদার করা, ধর্মভিত্তিক বা আত্মীয়-নির্ভর শিশু যত্ন প্রচার এবং স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন খরচ কমাতে পদক্ষেপ।

প্রজননহার হ্রাস: এক অস্তিত্ব সংকট
প্রোনেটালিস্টদের কাছে প্রজননহারের পতন আক্ষরিক অর্থেই অস্তিত্ব সংকট। টেকনো-নেটালিস্ট দম্পতি ম্যালকম ও সিমোন কলিন্স বলেন, “জনসংখ্যাগত ধস নতুন ডানপন্থীদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ট্রাম্প প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন শিশু করছাড় স্থায়ী করা, ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালে জন্ম নেয়া শিশুর জন্য এককালীন ১,০০০ ডলার “বেবি বোনাস”, এবং উচ্চ জন্মহার ও বিবাহহার বিশিষ্ট এলাকাকে অবকাঠামো অনুদানে অগ্রাধিকার দেওয়া।
তবে সমালোচকরা বলছেন, এই আইন অনেককে মেডিকেইড বীমা হারাতে বাধ্য করবে, কলেজপড়ুয়া অভিভাবকদের শিশু যত্ন ভর্তুকি কেটে দিয়েছে এবং সিডিসি আইভিএফ সফলতার জাতীয় তথ্য সংগ্রহকারী দলকে বাতিল করেছে।
জন্মহারের দীর্ঘ পতন
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার ১৯৬০-এর দশক থেকে ক্রমশ কমছে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে প্রতি নারীর জন্মহার ছিল ৩.৬৫, যা ২০২৪ সালে নেমে এসেছে ১.৫৯৯-এ। ধনী দেশগুলোতে একই ধারা দেখা যাচ্ছে, যেখানে গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতা, কর্মজীবনকেন্দ্রিক সামাজিক মূল্যবোধ এবং উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় প্রভাব ফেলেছে।
প্রচারে ট্রাম্প সরকার-অর্থায়িত ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এর কিছুদিন পর জেডি ভ্যান্স বিতর্কিতভাবে বলেন, দেশ চলছে “একদল নিঃসন্তান বিড়াল-নারী” দ্বারা, এবং বেশি শিশু জন্মের পক্ষে মত দেন। ইলন মাস্ক, অন্যতম প্রধান প্রোনেটালিস্ট, ট্রাম্পের প্রচারের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা ও উপদেষ্টা ছিলেন।
সমাধান নিয়ে দ্বন্দ্ব
জন্মহার কমার সমস্যার কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান নেই। হাঙ্গেরি পরিবারবান্ধব নীতির জন্য উদাহরণ হিসেবে ধরা হলেও জন্মহার তেমন বাড়েনি। সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশেও দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভর্তুকিপ্রাপ্ত শিশু যত্ন থাকা সত্ত্বেও জন্মহার কম।
তবু আমেরিকান প্রোনেটালিস্টরা বিশ্বাস করেন, কিছু পদক্ষেপ পরিবারকে সহায়তা করবে, এমনকি জন্মহার বাড়াতে ব্যর্থ হলেও।
তাদের প্রস্তাবের কিছু অংশ বামপন্থীদের নীতির সঙ্গে মেলে, যেমন শিশু করছাড় বাড়ানো ও শিশু যত্নের খরচ কমানো। আবার কিছু প্রস্তাব লিবারটেরিয়ানদের পছন্দের—ডে কেয়ারের নিয়ম শিথিল করা বা গাড়ির শিশু আসনের নিয়ম সহজ করা।

আইভিএফ নিয়ে দ্বিধা
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে আইভিএফ বিনামূল্যে করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। হোয়াইট হাউস বলছে, পরিবারগুলোর জন্য আইভিএফ সহজলভ্য করা এখনো “প্রধান অগ্রাধিকার”।
তবে সামাজিক রক্ষণশীলরা নৈতিক কারণে আইভিএফের বিরোধী। তারা বিশ্বাস করেন জীবন শুরু হয় নিষেকের সঙ্গে, আর সন্তান জন্ম প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। আইভিএফ ব্যয়বহুলও বটে। পরিবর্তে তারা সমর্থন করছেন “প্রজনন পুনরুদ্ধার চিকিৎসা”—যার মধ্যে রয়েছে সাপ্লিমেন্ট ও হরমোন থেরাপি, যা নারীদের প্রজননক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বাড়াতে সাহায্য করবে।
সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সমস্যা
অনেক রক্ষণশীল বিশ্লেষকের মতে, সরকার এখানে সীমিত ভূমিকা রাখতে পারে। বেন শাপিরো বলেন, “মানুষ সন্তান নিচ্ছে না—এটি মূলত অর্থনৈতিক নয়, বরং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমস্যা।”
জিওপি-তে ভ্যান্সের উত্থান
প্রোনেটালিস্টরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী, আংশিকভাবে প্রশাসনের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারনীতি সমর্থক জেডি ভ্যান্সের কারণে। তিনি সন্তানদের সরকারি সফরে সঙ্গে নেন এবং পরিবারের জন্য সময় বের করে রাখার বিষয়ে খোলামেলা।
টিম কার্নি বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক নেতারা প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক নেতা। তাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনও সমাজে প্রভাব ফেলে।”
মেগান মেসারলি 


















