ইস্তাম্বুলে নাটকীয় পরিস্থিতি
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-এর নেতারা সোমবার ইস্তাম্বুলে তাদের প্রাদেশিক কার্যালয়ের সামনে টেবিল-চেয়ার জড়ো করে ব্যারিকেড তৈরি করেন। এর মাধ্যমে তারা পুলিশকে ঠেকানোর চেষ্টা করেন এবং আদালতের নির্দেশে বহিষ্কৃত প্রাদেশিক প্রধানকে প্রতিস্থাপন ঠেকাতে উদ্যোগ নেন।
এই দৃশ্যকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং প্রায় এক বছরের দীর্ঘ আইনি অভিযানের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। গত এক বছরে শত শত সিএইচপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতের রায় ও বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলের একটি আদালত সিএইচপি প্রাদেশিক প্রধান ওজগুর সেলিককে অনিয়মের অভিযোগে পদচ্যুত করার রায় দেয়। আদালত নির্দেশ দেয়, সাবেক সিএইচপি উপপ্রধান গুরসেল টেকিনকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান করা হবে।
কিন্তু সিএইচপি এই রায়কে “অকার্যকর” ঘোষণা করে জানায়, টেকিন ইতিমধ্যেই দল থেকে বহিষ্কৃত। তারা সেলিকের পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
কার্যালয়ের বাইরে শত শত দাঙ্গা পুলিশ জড়ো হয়। তারা সিএইচপি সমর্থকদের আটক করে, পেপার স্প্রে ব্যবহার করে এবং নেতাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে। কয়েক ফ্লোর উপরে সিএইচপি আইনপ্রণেতারা দরজার সামনে প্রায় ছাদ পর্যন্ত আসবাবপত্র গুঁজে দেন, যাতে পুলিশ ও টেকিন ভেতরে ঢুকতে না পারে।
অবশেষে পুলিশ সহায়তায় টেকিন ভবনে প্রবেশ করতে সক্ষম হন এবং সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সরকারের হয়ে কাজ করছেন না, বরং সিএইচপির সমস্যাগুলো সমাধান করতে চান।

এরদোয়ানের কঠোর হুঁশিয়ারি
কেবিনেট বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, আইনের শাসনকে মানতে হবে এবং জাতীয় শান্তি বিঘ্নিত করা যাবে না।
তিনি বলেন, “তুরস্কে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের রায় সমালোচনা করা এক বিষয়, কিন্তু অমান্য করা সরাসরি আইনের শাসনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। এটি বরদাশত করা হবে না।”
গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ
ঘটনার সময় সিএইচপি সাংসদ গকহান গুনায়দিন এক সরাসরি সম্প্রচারে বলেন, “আজ শুধু ভবন খালি করার চেষ্টা নয়, আসলে গণতন্ত্রকেই ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইস্তাম্বুলের শেয়ারবাজার সূচক সোমবার ৩ শতাংশ কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এর মূল কারণ বাড়তে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতা।

বৃহত্তর দমন অভিযান
সিএইচপির বিরুদ্ধে এই দমন অভিযানের মূল অভিযোগ দুর্নীতি, যা দলটি অস্বীকার করেছে। তাদের মতে, এসব মামলা আসলে এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করার কৌশল। সরকার অবশ্য দাবি করছে, আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে।
এ বছরের মার্চে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তুরস্কে গত দশকের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
বিশ্লেষকরা বলছেন, আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী হতে পারে। আগামী সপ্তাহে সিএইচপি চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেলের পদ হারানোর বিষয়ে আরেকটি রায় আসতে পারে।

গত রবিবার পুলিশ সিএইচপির কার্যালয় ঘিরে ফেলে এবং কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করে। সোমবার দেশজুড়ে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ সীমিত করা হয়, যার মধ্যে ছিল এক্স, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক ও হোয়াটসঅ্যাপ।
অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী আলি ইয়েরলিকাইয়া সতর্ক করে বলেছেন, আদালতের রায় অমান্য করা মানে বিচার ব্যাহত করা। তিনি বলেন, “রাষ্ট্র যে কোনো বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















