০৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির

ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ব্রিকস বৈঠকে কড়া অবস্থান

নতুন দিল্লি : সোমবার এক ভার্চুয়াল ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিশ্ব ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। দেশটি অন্যায্য বাণিজ্যনীতি ও বাড়তি প্রতিবন্ধকতার বিরোধিতা করে জানায়, এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বৈঠকের প্রেক্ষাপট

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, যিনি বর্তমানে ব্রিকসের চেয়ারম্যান, এই বৈঠকের আয়োজন করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সেখানে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি খোলামেলা, ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার সুরক্ষার ওপর জোর দেন।

সংঘাত ও বাণিজ্যের অস্থিতিশীলতা

ভারত ১০ সদস্যের এই জোটকে আহ্বান জানায়—ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার সংঘাতের প্রভাব মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিতে। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারি, যুদ্ধ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে অস্থিরতা এবং জলবায়ু দুর্যোগের কারণে বহুপাক্ষিক কাঠামো কার্যকরভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা হওয়া উচিত স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভিন্নতামূলক সুবিধা প্রদানকারী। ভারত বিশ্বাস করে, এ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও লালন করতে হবে।

মার্কিন নীতির ইঙ্গিত

যদিও সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, জয়শঙ্কর মার্কিন প্রশাসনের ট্রাম্প যুগের শুল্কনীতি নিয়ে ইঙ্গিত দেন। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির কারণে। জয়শঙ্কর বলেন, বাণিজ্যের সঙ্গে অ-বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত করা ক্ষতিকর।

ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক প্রায় দুই দশকে সবচেয়ে বড় টানাপোড়েনে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি ও সামরিক বাণিজ্য নিয়ে প্রতিদিন সমালোচনা করছে। জয়শঙ্কর জানান, এই পরিস্থিতিতে ন্যায্য ও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক নীতি সবার জন্যই উপকারী হবে।

টেকসই সরবরাহব্যবস্থা ও আঞ্চলিক উৎপাদন

জয়শঙ্কর বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিকে ধাক্কা থেকে সুরক্ষিত রাখতে শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য ও সংক্ষিপ্ত সরবরাহচেইন গড়ে তোলা দরকার। পাশাপাশি উৎপাদনকে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে আঞ্চলিক স্বনির্ভরতা বাড়ে এবং অনিশ্চয়তার সময়ে উদ্বেগ কমে।

ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়া সংকট

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত খাদ্য, জ্বালানি ও সার নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিপিং বা পরিবহন আক্রমণের কারণে শুধু বাণিজ্য নয়, মানুষের জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এর মোকাবিলা সম্ভব নয়।

বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার সংস্কার

জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক শাসন কাঠামো সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ—এই সমালোচনা তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেন, ব্রিকসকে বহুপাক্ষিকতা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের পক্ষে শক্তিশালী কণ্ঠ হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জলবায়ু ন্যায্যতার জন্যও নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন, যেমন আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্স ও গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্স।

চীনের অবস্থান

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, একতরফা নীতি, শুল্কযুদ্ধ ও সুরক্ষাবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বিপন্ন করছে। তিনি আহ্বান জানান, ব্রিকস দেশগুলো উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুক এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত রাখুক।

শি আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-কেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে এবং গ্লোবাল সাউথের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

ভারতের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ব্রিকস বৈঠকে কড়া অবস্থান

১২:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন দিল্লি : সোমবার এক ভার্চুয়াল ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বিশ্ব ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। দেশটি অন্যায্য বাণিজ্যনীতি ও বাড়তি প্রতিবন্ধকতার বিরোধিতা করে জানায়, এ ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বৈঠকের প্রেক্ষাপট

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, যিনি বর্তমানে ব্রিকসের চেয়ারম্যান, এই বৈঠকের আয়োজন করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সেখানে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি খোলামেলা, ন্যায্য, বৈষম্যহীন ও নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার সুরক্ষার ওপর জোর দেন।

সংঘাত ও বাণিজ্যের অস্থিতিশীলতা

ভারত ১০ সদস্যের এই জোটকে আহ্বান জানায়—ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার সংঘাতের প্রভাব মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিতে। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারি, যুদ্ধ, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে অস্থিরতা এবং জলবায়ু দুর্যোগের কারণে বহুপাক্ষিক কাঠামো কার্যকরভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা হওয়া উচিত স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ভিন্নতামূলক সুবিধা প্রদানকারী। ভারত বিশ্বাস করে, এ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও লালন করতে হবে।

মার্কিন নীতির ইঙ্গিত

যদিও সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, জয়শঙ্কর মার্কিন প্রশাসনের ট্রাম্প যুগের শুল্কনীতি নিয়ে ইঙ্গিত দেন। যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে রাশিয়ার জ্বালানি আমদানির কারণে। জয়শঙ্কর বলেন, বাণিজ্যের সঙ্গে অ-বাণিজ্যিক বিষয় যুক্ত করা ক্ষতিকর।

ভারত-মার্কিন সম্পর্কে টানাপোড়েন

ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক প্রায় দুই দশকে সবচেয়ে বড় টানাপোড়েনে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি ও সামরিক বাণিজ্য নিয়ে প্রতিদিন সমালোচনা করছে। জয়শঙ্কর জানান, এই পরিস্থিতিতে ন্যায্য ও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক নীতি সবার জন্যই উপকারী হবে।

টেকসই সরবরাহব্যবস্থা ও আঞ্চলিক উৎপাদন

জয়শঙ্কর বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিকে ধাক্কা থেকে সুরক্ষিত রাখতে শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য ও সংক্ষিপ্ত সরবরাহচেইন গড়ে তোলা দরকার। পাশাপাশি উৎপাদনকে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে আঞ্চলিক স্বনির্ভরতা বাড়ে এবং অনিশ্চয়তার সময়ে উদ্বেগ কমে।

ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়া সংকট

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন ও পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত খাদ্য, জ্বালানি ও সার নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিপিং বা পরিবহন আক্রমণের কারণে শুধু বাণিজ্য নয়, মানুষের জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া এর মোকাবিলা সম্ভব নয়।

বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার সংস্কার

জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক শাসন কাঠামো সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ—এই সমালোচনা তুলে ধরে জয়শঙ্কর বলেন, ব্রিকসকে বহুপাক্ষিকতা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের পক্ষে শক্তিশালী কণ্ঠ হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও জলবায়ু ন্যায্যতার জন্যও নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন, যেমন আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্স ও গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্স।

চীনের অবস্থান

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, একতরফা নীতি, শুল্কযুদ্ধ ও সুরক্ষাবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বিপন্ন করছে। তিনি আহ্বান জানান, ব্রিকস দেশগুলো উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি ও বহুপাক্ষিকতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুক এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে সবার জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত রাখুক।

শি আরও বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-কেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে এবং গ্লোবাল সাউথের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।