নতুন হোম সেক্রেটারির ঘোষণা
যুক্তরাজ্যের নতুন হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেসব দেশ তাদের অবৈধভাবে থাকা নাগরিকদের ফেরত নিতে সহযোগিতা করছে না, সেসব দেশের জন্য যুক্তরাজ্য ভিসা স্থগিতের পদক্ষেপ নিতে পারে।
তিনি এই মন্তব্য করেন লন্ডনে অনুষ্ঠিত ফাইভ আইজ (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডার গোয়েন্দা সহযোগিতা জোট)–এর বৈঠকে। মাহমুদ বলেন, তার প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে দেশের সীমান্ত নিরাপদ করা।
ফাইভ আইজ বৈঠক ও আলোচনার মূল বিষয়
৮-৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেন:
- শাবানা মাহমুদ (যুক্তরাজ্যের হোম সেক্রেটারি)
- ক্রিস্টি নোয়েম (যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি)
- গ্যারি আনন্দাসংগারী (কানাডার পাবলিক সেফটি মন্ত্রী)
- টনি বার্ক (অস্ট্রেলিয়ার হোম অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী)
- জুডিথ কলিন্স (নিউজিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী)
বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা, মানবপাচার, শিশু যৌন নিপীড়ন এবং সিনথেটিক মাদক ছড়িয়ে পড়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

ভিসা স্থগিতের হুমকি
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাহমুদ বলেন, “যেসব দেশ সহযোগিতা করছে না, তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা আমরা ভাবছি। এর মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যতে ভিসা কেটে দেওয়া। যদি আপনার দেশের কোনো নাগরিক যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার না রাখে, তাহলে আপনাদের তাকে ফেরত নিতে হবে।”
তবে কোন কোন দেশের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
ইংলিশ চ্যানেল সংকট
মাহমুদের প্রথম পূর্ণ দিবসে রেকর্ড সংখ্যক ১,০৯৭ জন অভিবাসী ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে। ২০২৫ সালের এ পর্যন্ত মোট প্রবেশকারীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। তিনি এ পরিস্থিতিকে “একেবারেই অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভিসা সুবিধাকে ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত নেওয়ার সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
অক্সফোর্ড মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক ড. মাদেলিন সাম্পশন বলেন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালের মতো দেশগুলোতে ভিসার চাহিদা বেশি হলেও ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত নেওয়ার হার কম। ভিসা স্থগিতের হুমকি কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে এসব দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশের গুরুত্ব কতটা। তিনি উল্লেখ করেন, বিশেষত ভারত ভিসা সুবিধা নিয়ে ব্যাপক লবিং চালিয়ে আসছে।
বিরোধীদের সমালোচনা
শেডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ লেবার সরকারকে দুর্বল বলে সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, সরকার সীমান্ত রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না এবং অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা, যেমন সহযোগিতা না করা দেশগুলোতে সহায়তা বন্ধ করার আহ্বান জানান।
সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত
শাবানা মাহমুদের নিয়োগকে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জন হিলি জানান, আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে থাকার চাপ কমাতে সেনা ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনা ব্যবহার করার পরিকল্পনা সরকার বিবেচনা করছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের এই ঘোষণার ফলে ভিসা সুবিধার ওপর নির্ভরশীল বহু দেশের নাগরিকরা শঙ্কার মধ্যে আছেন। অভিবাসন ইস্যুতে ফাইভ আইজ দেশগুলোর যৌথ পদক্ষেপ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নতুন মাত্রা যোগ করলেও এর কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















