০৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী নতুন iOS আপডেটে অন-ডিভাইস এআই জোরালো করল অ্যাপল রপ্তানি আদেশ কমায় দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতার সতর্কতা জার্মানির

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করলেন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা চরমে

কাঠমাণ্ডু, ৯ সেপ্টেম্বর: নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। তার এক সহযোগী জানিয়েছেন, দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ অমান্য করে জনগণ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এর একদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও সহিংসতার বিস্তার

অলির সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সোমবার প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে ১৯ জন নিহত হয় এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই দরিদ্র দেশটি বহু বছর ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই দেশটি নানা সংকটে পড়ছে। বর্তমান সহিংসতা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

অলির সহযোগী প্রকাশ সিলওয়াল জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।” এই পদক্ষেপ নেপালকে নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে অলি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, সহিংসতা দেশের স্বার্থে নয় এবং যেকোনো সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই খুঁজে বের করতে হবে।

কারফিউ অমান্য ও উত্তেজনার বিস্তার

কাঠমাণ্ডুসহ বিভিন্ন স্থানে কারফিউ চলমান থাকা সত্ত্বেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের সামনে এবং রাজধানীর অন্যান্য জায়গায় জড়ো হয়। তারা সড়কে টায়ার জ্বালায়, পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে এবং সরু গলিতে দাঙ্গা পুলিশকে ধাওয়া করে। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

সীমান্ত এলাকা থেকে ঢলে আসা জনতা

ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী কিছু শহরের শত শত মানুষ কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে একজন বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিক্ষোভকারীরা রাজধানীতে কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের দাবি, সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে কিছু মন্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের দাবির সপক্ষে বক্তব্য

একজন বিক্ষোভকারী রবিন শ্রেষ্ঠা বলেছেন, “আমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ, যাতে সবার জন্য শিক্ষা, হাসপাতাল, চিকিৎসা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুযোগ থাকে।”

বিমান চলাচলে বিঘ্ন

কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে দক্ষিণ দিক থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারণ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুন থেকে ধোঁয়া উড়ছিল, যা দৃশ্যমানতায় সমস্যা সৃষ্টি করেছিল বলে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন

বিক্ষোভ আয়োজকরা একে “জেনারেশন জেডের আন্দোলন” বলে বর্ণনা করেছেন। তরুণ প্রজন্ম সরকারের দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলন দ্রুত দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করলেন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতা চরমে

০৪:০২:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কাঠমাণ্ডু, ৯ সেপ্টেম্বর: নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। তার এক সহযোগী জানিয়েছেন, দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ অমান্য করে জনগণ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এর একদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিবাদে সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও সহিংসতার বিস্তার

অলির সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সোমবার প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এতে ১৯ জন নিহত হয় এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই দরিদ্র দেশটি বহু বছর ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই দেশটি নানা সংকটে পড়ছে। বর্তমান সহিংসতা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

অলির সহযোগী প্রকাশ সিলওয়াল জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।” এই পদক্ষেপ নেপালকে নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে অলি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, সহিংসতা দেশের স্বার্থে নয় এবং যেকোনো সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই খুঁজে বের করতে হবে।

কারফিউ অমান্য ও উত্তেজনার বিস্তার

কাঠমাণ্ডুসহ বিভিন্ন স্থানে কারফিউ চলমান থাকা সত্ত্বেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের সামনে এবং রাজধানীর অন্যান্য জায়গায় জড়ো হয়। তারা সড়কে টায়ার জ্বালায়, পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে এবং সরু গলিতে দাঙ্গা পুলিশকে ধাওয়া করে। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

সীমান্ত এলাকা থেকে ঢলে আসা জনতা

ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী কিছু শহরের শত শত মানুষ কাঠমাণ্ডুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বলে একজন বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিক্ষোভকারীরা রাজধানীতে কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের দাবি, সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে কিছু মন্ত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের দাবির সপক্ষে বক্তব্য

একজন বিক্ষোভকারী রবিন শ্রেষ্ঠা বলেছেন, “আমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত দেশ, যাতে সবার জন্য শিক্ষা, হাসপাতাল, চিকিৎসা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুযোগ থাকে।”

বিমান চলাচলে বিঘ্ন

কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরে দক্ষিণ দিক থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারণ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুন থেকে ধোঁয়া উড়ছিল, যা দৃশ্যমানতায় সমস্যা সৃষ্টি করেছিল বলে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন

বিক্ষোভ আয়োজকরা একে “জেনারেশন জেডের আন্দোলন” বলে বর্ণনা করেছেন। তরুণ প্রজন্ম সরকারের দুর্নীতি দমনে ব্যর্থতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলন দ্রুত দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।