০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১ জয়পুরহাটে বাড়িতে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, আহত ভাতিজি ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে ট্রাক–পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২ ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বাস–ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩ গাজীপুরের শ্রীপুরে অটোরিকশা গ্যারেজে আগুন, পুড়েছে ১৫ যানবাহন “‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এ ‘টাইটানিক’–ধরনের হৃদয়ভাঙা, বলছেন সমালোচকেরা” “আরও গভীর পরিসংখ্যান নিয়ে ফিরলো অ্যাপল মিউজিক ‘রিপ্লে ২০২৫’” “মিইয়ে যাওয়া জিডিপি সংখ্যার আড়ালে অস্ট্রেলিয়ার চাহিদা এখনো ‘গরম’” “নতুন নোভা এআই মডেল উন্মোচনে করপোরেট গ্রাহকদের মন জয়ে ঝুঁকল এডব্লিউএস” “মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের আঘাতে বিধ্বস্ত হংকং, তবু সামনে ‘দেশপ্রেমিকদের’ নির্বাচন”

বিক্ষোভ চলাকালীন রাষ্ট্রপতির চীন সফর ইন্দোনেশিয়ানদের কাছে মিশ্র সংকেত দিচ্ছে

ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অস্থিরতার মুখোমুখি। এই সংকটের সূত্রপাত ঘটে ২১ বছর বয়সী মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালক আফান কুরনিয়াওয়ানের মৃত্যুর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় জাকার্তায় পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি তাকে চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা সংসদ সদস্যদের বিলাসিতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে উসকে দেয়। দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত ১০ জন নিহত হয়। কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আটক করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রতিক্রিয়া এই মুহূর্তের ভঙ্গুরতা তুলে ধরেছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আফানের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং আহত বেসামরিক নাগরিক ও পুলিশের চিকিৎসা চলা একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। তবে, সাতজন ব্রিমব (মোবাইল ব্রিগেড) সদস্য তদন্তের মুখোমুখি হলেও আহত পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

প্রাবোওর প্রধান প্রকল্প বিনামূল্যে স্কুলে খাবার সরবরাহ এখন তীব্র সমালোচনার মুখে। খরচ আকাশচুম্বী হয়েছে, সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং একের পর এক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসছে—স্কুলে খাদ্যে বিষক্রিয়া, সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ না হওয়া এবং ছোট ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দেউলিয়া হওয়ার মতো সংকট তৈরি হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় জনতাবাদী রাজনীতি নতুন কিছু নয়। আগের রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো দৃশ্যমান কিন্তু ঋণনির্ভর এবং প্রায়ই অসমাপ্ত থেকে যাওয়া অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছিলেন। প্রাবোও বেছে নিয়েছেন খাদ্যজনিত জনতাবাদকে। তিনি বিনামূল্যে খাবার দিয়ে এক ধরনের পিতৃতান্ত্রিক দানশীলতার প্রদর্শন করতে চেয়েছেন। দুই পদ্ধতির মিল হলো—প্রকৃত সংস্কারের বদলে দৃশ্যমান প্রদর্শনীর ওপর জোর, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে এবং বৈষম্য থেকে গেছে অমীমাংসিত, এমন সময়ে যখন ইন্দোনেশিয়া বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রবেশ করছে।

৩ সেপ্টেম্বর, যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছিল, প্রাবোও বেইজিং সফরে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের পাশে বসে প্রাবোও ইন্দোনেশিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। অথচ তার নিজের নাগরিকেরা তখন জবাবদিহিতা চাইছিল। বেইজিং তাকে ভিআইপি আসন দেয়, যাতে ইন্দোনেশিয়ার গুরুত্ব বোঝানো যায় এবং একই সঙ্গে সামরিক শক্তি প্রদর্শন, অস্ত্র সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি এবং খনিজ সম্পদের ওপর তাদের প্রভাব শক্তিশালী করা যায়, যেখানে ইন্দোনেশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী।

আসিয়ান দেশগুলোর কাছে এটি বার্তা দেয় যে ইন্দোনেশিয়া বেইজিংয়ের দিকে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এটি এমন সময়ে ঘটছে, যখন অঞ্চলটির দেশগুলো ইন্দোনেশিয়ার কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আগেই সংবেদনশীল।

এদিকে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের প্রতি জাকার্তার মিশ্র বার্তা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই গ্রীষ্মে, প্রাবোও যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক হ্রাস নিশ্চিত করেন—৩২% থেকে কমে ১৯% এ নেমে আসে, যা আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমের মধ্যে একটি। চুক্তিটি বড় সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও শর্তও ছিল কঠিন। ইন্দোনেশিয়াকে আরও বেশি বোয়িং বিমান, কৃষিপণ্য এবং জ্বালানি কিনতে হবে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে স্থানীয় শিল্পের জন্য এর সুফল খুবই সীমিত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা জাকার্তাকে এমন একটি শুল্ক-নির্ভর রাজনীতির ঝুঁকিতে ফেলবে যা ওয়াশিংটন যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ইস্পাত, নিকেল এবং খনিজ জ্বালানি খাতে। চীন খনিজ, অবকাঠামো এবং উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। শি জিনপিং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ড্রোন ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য চীনা অস্ত্র চুক্তির দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন, যারা দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আগ্রাসন নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক, তাদের কাছে ইন্দোনেশিয়া এখন আর ভারসাম্য রক্ষাকারী নয়, বরং বেইজিংয়ের প্রভাববলয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

প্রাবোও এই পদক্ষেপগুলোকে ওয়াশিংটন থেকে শুল্ক হ্রাস নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু একই সঙ্গে বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া একেবারেই পরস্পরবিরোধী। এটি কোনো ভারসাম্য রক্ষা নয়, বরং স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে দিক পরিবর্তনের রাজনীতি। বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি অস্থিতিশীলতার সংকেত, আসিয়ানের কাছে এটি মনোযোগ হারানোর সংকেত এবং ইন্দোনেশিয়ানদের কাছে এটি ব্যাখ্যা করা কঠিন যে কেন বিদেশে শুল্ক কমছে অথচ দেশে বাজেট অপব্যবহার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে, জাকার্তার এই মিশ্র বার্তা তার আঞ্চলিক নেতৃত্বের দাবিকে দুর্বল করছে। আসিয়ান দীর্ঘদিন ধরে ইন্দোনেশিয়াকে স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখেছে। কিন্তু একটি মনোযোগহীন ইন্দোনেশিয়া এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করছে। ভিয়েতনাম এবং সিঙ্গাপুর, যারা শাসনব্যবস্থা এবং পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ, তারা এই শূন্যতা পূরণে প্রস্তুত। এর ফলে শুধু নেতৃত্বের হ্রাস নয়, বরং ইন্দোনেশিয়ার আঞ্চলিক প্রভাবের কাঠামোগত পতনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

প্রাবোওর রাজনৈতিক কৌশল প্রতীকী জনতাবাদের ওপর নির্ভরশীল। স্কুলের শিশুদের খাবার খাওয়ানো তাকে জনগণের অভিভাবক হিসেবে তুলে ধরতে চায়। ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি এবং শির সঙ্গে কুচকাওয়াজে উপস্থিতি তাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু প্রতীকী পদক্ষেপগুলো বাস্তব সংস্কার ছাড়া চাপে টিকে থাকতে পারে না। অসমাপ্ত অবকাঠামোর জনতাবাদের মতোই খাদ্যের মাধ্যমে জনতাবাদও টেকসই নয়। উভয় ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি মেলে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ভঙ্গুরতা বাড়ে।

রাস্তার ক্ষোভ দেখিয়ে দিচ্ছে যে ইন্দোনেশিয়ানরা এই ফাঁকটি বুঝতে পারছে। বিনামূল্যে স্কুলে খাবারের প্রকল্প অর্থনৈতিক চাপ লাঘব করতে পারেনি। বরং এটি ধনী শ্রেণির সুবিধা আরও স্পষ্ট করেছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি ইন্দোনেশিয়াকে এমন কেনাকাটায় আবদ্ধ করেছে যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকদের উপকৃত করছে। বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া ইন্দোনেশিয়ার সার্বভৌমত্বকে বাড়ায়নি, বরং প্রশ্ন তুলেছে দেশটির স্বাধীন নীতি পরিচালনার ক্ষমতা কতটা অবশিষ্ট রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার এখন প্রতীকী পদক্ষেপের চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন। আফানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত এবং পুলিশি অনিয়মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। খাবার প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে হবে যতক্ষণ না ক্রয়প্রক্রিয়ার নিরীক্ষা হয়, সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ হয় এবং খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সংস্কার ছাড়া বাজেট বাড়ালে সংকট আরও গভীর হবে।

পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে স্পষ্টতা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিগুলোকে কৃষক ও শ্রমিকদের সুবিধার দিক থেকে সাজাতে হবে, অভিজাতদের বোয়িং বিমান কেনার স্বার্থে নয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে হবে এটি আসিয়ানের সংহতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর কী প্রভাব ফেলছে সেই দিক থেকে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হতে হবে স্বচ্ছ এবং বহুমুখী, কোনোভাবেই শুধু বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।

ইন্দোনেশিয়ার শক্তি দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্য নিরপেক্ষতার ওপর টিকে আছে। সেই অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাবোওকে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে।

এর মানে হলো প্রতীকী জয়ের পিছনে না ছুটে অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতিকে সামঞ্জস্য করা। নাগরিকেরা দক্ষতা প্রত্যাশা করে, বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা চায় এবং আসিয়ানের অংশীদাররা ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকা নিয়ে স্পষ্টতা আশা করে।

বর্তমানে রাষ্ট্রপতির নীতি দাঁড়িয়ে আছে এমন এক ভঙ্গুর ভিত্তির ওপর, যেখানে বিনামূল্যে স্কুলে খাবার প্রকল্প বাজেট খরচ করছে কিন্তু বৈষম্য দূর করছে না এবং পররাষ্ট্রনীতি একদিকে ওয়াশিংটন, অন্যদিকে বেইজিং ও অঞ্চলকে মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। খাবার প্রকল্প পুনর্বিবেচনা এবং আসিয়ানকে কেন্দ্র করে স্পষ্ট সুফলমুখী পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার মধ্যম শক্তি হিসেবে নেতৃত্বের দাবি ক্রমশ ম্লান হয়ে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈশ্বরদীতে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা, প্রাণিজ কল্যাণ আইনে গ্রেপ্তার ১

বিক্ষোভ চলাকালীন রাষ্ট্রপতির চীন সফর ইন্দোনেশিয়ানদের কাছে মিশ্র সংকেত দিচ্ছে

০৮:০০:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইন্দোনেশিয়া বর্তমানে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অস্থিরতার মুখোমুখি। এই সংকটের সূত্রপাত ঘটে ২১ বছর বয়সী মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালক আফান কুরনিয়াওয়ানের মৃত্যুর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় জাকার্তায় পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি তাকে চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা সংসদ সদস্যদের বিলাসিতা এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভকে উসকে দেয়। দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত ১০ জন নিহত হয়। কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আটক করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রতিক্রিয়া এই মুহূর্তের ভঙ্গুরতা তুলে ধরেছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আফানের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং আহত বেসামরিক নাগরিক ও পুলিশের চিকিৎসা চলা একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। তবে, সাতজন ব্রিমব (মোবাইল ব্রিগেড) সদস্য তদন্তের মুখোমুখি হলেও আহত পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

প্রাবোওর প্রধান প্রকল্প বিনামূল্যে স্কুলে খাবার সরবরাহ এখন তীব্র সমালোচনার মুখে। খরচ আকাশচুম্বী হয়েছে, সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং একের পর এক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসছে—স্কুলে খাদ্যে বিষক্রিয়া, সরবরাহকারীদের অর্থ পরিশোধ না হওয়া এবং ছোট ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দেউলিয়া হওয়ার মতো সংকট তৈরি হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় জনতাবাদী রাজনীতি নতুন কিছু নয়। আগের রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো দৃশ্যমান কিন্তু ঋণনির্ভর এবং প্রায়ই অসমাপ্ত থেকে যাওয়া অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছিলেন। প্রাবোও বেছে নিয়েছেন খাদ্যজনিত জনতাবাদকে। তিনি বিনামূল্যে খাবার দিয়ে এক ধরনের পিতৃতান্ত্রিক দানশীলতার প্রদর্শন করতে চেয়েছেন। দুই পদ্ধতির মিল হলো—প্রকৃত সংস্কারের বদলে দৃশ্যমান প্রদর্শনীর ওপর জোর, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে এবং বৈষম্য থেকে গেছে অমীমাংসিত, এমন সময়ে যখন ইন্দোনেশিয়া বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রবেশ করছে।

৩ সেপ্টেম্বর, যখন দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছিল, প্রাবোও বেইজিং সফরে যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দিতে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের পাশে বসে প্রাবোও ইন্দোনেশিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। অথচ তার নিজের নাগরিকেরা তখন জবাবদিহিতা চাইছিল। বেইজিং তাকে ভিআইপি আসন দেয়, যাতে ইন্দোনেশিয়ার গুরুত্ব বোঝানো যায় এবং একই সঙ্গে সামরিক শক্তি প্রদর্শন, অস্ত্র সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি এবং খনিজ সম্পদের ওপর তাদের প্রভাব শক্তিশালী করা যায়, যেখানে ইন্দোনেশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী।

আসিয়ান দেশগুলোর কাছে এটি বার্তা দেয় যে ইন্দোনেশিয়া বেইজিংয়ের দিকে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এটি এমন সময়ে ঘটছে, যখন অঞ্চলটির দেশগুলো ইন্দোনেশিয়ার কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আগেই সংবেদনশীল।

এদিকে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের প্রতি জাকার্তার মিশ্র বার্তা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই গ্রীষ্মে, প্রাবোও যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক হ্রাস নিশ্চিত করেন—৩২% থেকে কমে ১৯% এ নেমে আসে, যা আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমের মধ্যে একটি। চুক্তিটি বড় সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও শর্তও ছিল কঠিন। ইন্দোনেশিয়াকে আরও বেশি বোয়িং বিমান, কৃষিপণ্য এবং জ্বালানি কিনতে হবে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে স্থানীয় শিল্পের জন্য এর সুফল খুবই সীমিত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা জাকার্তাকে এমন একটি শুল্ক-নির্ভর রাজনীতির ঝুঁকিতে ফেলবে যা ওয়াশিংটন যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে পারে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ইস্পাত, নিকেল এবং খনিজ জ্বালানি খাতে। চীন খনিজ, অবকাঠামো এবং উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। শি জিনপিং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ড্রোন ও যুদ্ধজাহাজ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য চীনা অস্ত্র চুক্তির দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন, যারা দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের আগ্রাসন নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক, তাদের কাছে ইন্দোনেশিয়া এখন আর ভারসাম্য রক্ষাকারী নয়, বরং বেইজিংয়ের প্রভাববলয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

প্রাবোও এই পদক্ষেপগুলোকে ওয়াশিংটন থেকে শুল্ক হ্রাস নিশ্চিত করার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু একই সঙ্গে বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া একেবারেই পরস্পরবিরোধী। এটি কোনো ভারসাম্য রক্ষা নয়, বরং স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে দিক পরিবর্তনের রাজনীতি। বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি অস্থিতিশীলতার সংকেত, আসিয়ানের কাছে এটি মনোযোগ হারানোর সংকেত এবং ইন্দোনেশিয়ানদের কাছে এটি ব্যাখ্যা করা কঠিন যে কেন বিদেশে শুল্ক কমছে অথচ দেশে বাজেট অপব্যবহার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে, জাকার্তার এই মিশ্র বার্তা তার আঞ্চলিক নেতৃত্বের দাবিকে দুর্বল করছে। আসিয়ান দীর্ঘদিন ধরে ইন্দোনেশিয়াকে স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখেছে। কিন্তু একটি মনোযোগহীন ইন্দোনেশিয়া এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করছে। ভিয়েতনাম এবং সিঙ্গাপুর, যারা শাসনব্যবস্থা এবং পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ, তারা এই শূন্যতা পূরণে প্রস্তুত। এর ফলে শুধু নেতৃত্বের হ্রাস নয়, বরং ইন্দোনেশিয়ার আঞ্চলিক প্রভাবের কাঠামোগত পতনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

প্রাবোওর রাজনৈতিক কৌশল প্রতীকী জনতাবাদের ওপর নির্ভরশীল। স্কুলের শিশুদের খাবার খাওয়ানো তাকে জনগণের অভিভাবক হিসেবে তুলে ধরতে চায়। ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি এবং শির সঙ্গে কুচকাওয়াজে উপস্থিতি তাকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। কিন্তু প্রতীকী পদক্ষেপগুলো বাস্তব সংস্কার ছাড়া চাপে টিকে থাকতে পারে না। অসমাপ্ত অবকাঠামোর জনতাবাদের মতোই খাদ্যের মাধ্যমে জনতাবাদও টেকসই নয়। উভয় ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি মেলে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ভঙ্গুরতা বাড়ে।

রাস্তার ক্ষোভ দেখিয়ে দিচ্ছে যে ইন্দোনেশিয়ানরা এই ফাঁকটি বুঝতে পারছে। বিনামূল্যে স্কুলে খাবারের প্রকল্প অর্থনৈতিক চাপ লাঘব করতে পারেনি। বরং এটি ধনী শ্রেণির সুবিধা আরও স্পষ্ট করেছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি ইন্দোনেশিয়াকে এমন কেনাকাটায় আবদ্ধ করেছে যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকদের উপকৃত করছে। বেইজিংয়ের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া ইন্দোনেশিয়ার সার্বভৌমত্বকে বাড়ায়নি, বরং প্রশ্ন তুলেছে দেশটির স্বাধীন নীতি পরিচালনার ক্ষমতা কতটা অবশিষ্ট রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার এখন প্রতীকী পদক্ষেপের চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন। আফানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত এবং পুলিশি অনিয়মের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। খাবার প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে হবে যতক্ষণ না ক্রয়প্রক্রিয়ার নিরীক্ষা হয়, সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ হয় এবং খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। সংস্কার ছাড়া বাজেট বাড়ালে সংকট আরও গভীর হবে।

পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে স্পষ্টতা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিগুলোকে কৃষক ও শ্রমিকদের সুবিধার দিক থেকে সাজাতে হবে, অভিজাতদের বোয়িং বিমান কেনার স্বার্থে নয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে হবে এটি আসিয়ানের সংহতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর কী প্রভাব ফেলছে সেই দিক থেকে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হতে হবে স্বচ্ছ এবং বহুমুখী, কোনোভাবেই শুধু বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।

ইন্দোনেশিয়ার শক্তি দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরযোগ্য নিরপেক্ষতার ওপর টিকে আছে। সেই অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাবোওকে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে।

এর মানে হলো প্রতীকী জয়ের পিছনে না ছুটে অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতিকে সামঞ্জস্য করা। নাগরিকেরা দক্ষতা প্রত্যাশা করে, বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা চায় এবং আসিয়ানের অংশীদাররা ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকা নিয়ে স্পষ্টতা আশা করে।

বর্তমানে রাষ্ট্রপতির নীতি দাঁড়িয়ে আছে এমন এক ভঙ্গুর ভিত্তির ওপর, যেখানে বিনামূল্যে স্কুলে খাবার প্রকল্প বাজেট খরচ করছে কিন্তু বৈষম্য দূর করছে না এবং পররাষ্ট্রনীতি একদিকে ওয়াশিংটন, অন্যদিকে বেইজিং ও অঞ্চলকে মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। খাবার প্রকল্প পুনর্বিবেচনা এবং আসিয়ানকে কেন্দ্র করে স্পষ্ট সুফলমুখী পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার মধ্যম শক্তি হিসেবে নেতৃত্বের দাবি ক্রমশ ম্লান হয়ে যাবে।