০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল বিশ্ববাজারে পৌঁছাতে ভার্চুয়াল আইডলে বাজি কেপপ সংস্থার উষ্ণ শীত জাপানের ‘স্নো মাঙ্কি’দের আচরণ বদলে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ায় তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী

সবকিছু থামাও: ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ, শতাধিক গ্রেপ্তার

সারসংক্ষেপ

  • ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ
  • পুলিশ রাস্তা থেকে বাধা সরায়, জলকামান ব্যবহার
  • প্রায় ৫০০ জন গ্রেপ্তার
  • প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনরোষ

রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে উত্তেজনা

বুধবার ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে, ব্যারিকেডে আগুন দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি ও সরকারি খরচ কমানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

সরকার ৮০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করে বাধা সরাতে ও উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অনেক জায়গায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে।

প্যারিসে দাঙ্গা পুলিশ একাধিকবার টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে। শুধু রাজধানীতেই প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়।


আন্দোলনের বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

“সবকিছু থামাও” আন্দোলনটি প্রথমে গত মে মাসে দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রম থেকে শুরু হয়। পরে বামপন্থী ও অতি-বামপন্থীরাও এতে যুক্ত হয়।

এই বিক্ষোভ এমন সময়ে হচ্ছে, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সংসদে বাজেট কাটছাঁট পরিকল্পনার কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেবাস্তিয়ান লেকর্নু দায়িত্ব নেন।

প্যারিসের গণপরিবহন সংস্থার সিজিটি ইউনিয়নের নেতা ফ্রেড বলেন, “সমস্যা মন্ত্রীদের নয়, সমস্যার নাম ম্যাক্রোঁ। তাকে অবশ্যই যেতে হবে।”


অর্থনৈতিক চাপ ও জনঅসন্তোষ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট ঘাটতির সীমা ৩ শতাংশ হলেও ফ্রান্সের ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ। ঋণের পরিমাণও জিডিপির ১১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

দেশব্যাপী প্রায় ২ লাখ মানুষ এ আন্দোলনে যোগ দেয়। বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতায়ু এটিকে “গুরুত্বপূর্ণ” বিক্ষোভ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, দেশকে পুরোপুরি অচল করে দেওয়ার চেষ্টা সফল হয়নি।

জনগণের ক্ষোভ মূলত সরকারি অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে, যারা কৃচ্ছ্রনীতির পথে হাঁটতে চাইছে। আগের সরকার ৪৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর প্রস্তাব দিলে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়।


তরুণদের ভূমিকা ও নতুন প্রজন্মের দাবি

প্যারিসের গার দ্য নরদ স্টেশনের বাইরে শত শত তরুণ স্লোগান দেয়, “ধনীদের প্রজাতন্ত্র নয়।” অনেকে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নামে।

সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী এমা মেগুরডিচিয়ান বলেন, “আমরা জানাতে এসেছি যে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। অন্য ধরনের সরকার দরকার।”

২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অ্যালিস মরিন বলেন, “পুরনো প্রজন্ম আমাদের নষ্ট পৃথিবী ও ব্যর্থ সরকার দিয়ে গেছে। পরিবর্তনের জন্য লড়াই করা এখন আমাদের দায়িত্ব।”


সহিংসতা ও পুলিশের দমন অভিযান

নঁত শহরে বিক্ষোভকারীরা জ্বলন্ত টায়ার ও ডাস্টবিন ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়ে গোলচত্বর খালি করে। রেনে শহরে একটি বাসে আগুন ধরানো হয়।

মঁপেলিয়ে শহরে প্রতিবাদকারীরা গোলচত্বরে ব্যারিকেড তৈরি করে রাস্তা বন্ধ করলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। সেখানকার একটি ব্যানারে লেখা ছিল: “ম্যাক্রোঁ পদত্যাগ কর।”

প্যারিসে একটি স্কুলের প্রবেশপথ আটকে রাখা তরুণদের ওপরও পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পোড়ানো সাইকেল ও ডাস্টবিন সরিয়ে ফেলে ফায়ার সার্ভিস।


‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা

২০১৮-১৯ সালে কর ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে ফ্রান্সে “ইয়েলো ভেস্ট” আন্দোলনের বিস্তার ঘটে, যা ম্যাক্রোঁকে কোটি কোটি ইউরোর ছাড় দিতে বাধ্য করেছিল।

তবে সমাজবিজ্ঞানী অঁতোয়ান ব্রিস্তিয়েল জানান, এবারকার আন্দোলন ভিন্ন। তখন মূলত শ্রমজীবী ও অবসরপ্রাপ্তরা বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। এবার তরুণরাই বেশি সক্রিয়।

তাদের লক্ষ্য হলো সামাজিক ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং নতুন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা।

জনপ্রিয় সংবাদ

একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার

সবকিছু থামাও: ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ, শতাধিক গ্রেপ্তার

১১:৪৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ
  • পুলিশ রাস্তা থেকে বাধা সরায়, জলকামান ব্যবহার
  • প্রায় ৫০০ জন গ্রেপ্তার
  • প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনরোষ

রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে উত্তেজনা

বুধবার ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে, ব্যারিকেডে আগুন দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি ও সরকারি খরচ কমানোর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

সরকার ৮০ হাজারের বেশি নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করে বাধা সরাতে ও উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অনেক জায়গায় পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে।

প্যারিসে দাঙ্গা পুলিশ একাধিকবার টিয়ারগ্যাস ছুড়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে। শুধু রাজধানীতেই প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়।


আন্দোলনের বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

“সবকিছু থামাও” আন্দোলনটি প্রথমে গত মে মাসে দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রম থেকে শুরু হয়। পরে বামপন্থী ও অতি-বামপন্থীরাও এতে যুক্ত হয়।

এই বিক্ষোভ এমন সময়ে হচ্ছে, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সংসদে বাজেট কাটছাঁট পরিকল্পনার কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেবাস্তিয়ান লেকর্নু দায়িত্ব নেন।

প্যারিসের গণপরিবহন সংস্থার সিজিটি ইউনিয়নের নেতা ফ্রেড বলেন, “সমস্যা মন্ত্রীদের নয়, সমস্যার নাম ম্যাক্রোঁ। তাকে অবশ্যই যেতে হবে।”


অর্থনৈতিক চাপ ও জনঅসন্তোষ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট ঘাটতির সীমা ৩ শতাংশ হলেও ফ্রান্সের ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ। ঋণের পরিমাণও জিডিপির ১১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

দেশব্যাপী প্রায় ২ লাখ মানুষ এ আন্দোলনে যোগ দেয়। বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতায়ু এটিকে “গুরুত্বপূর্ণ” বিক্ষোভ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, দেশকে পুরোপুরি অচল করে দেওয়ার চেষ্টা সফল হয়নি।

জনগণের ক্ষোভ মূলত সরকারি অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে, যারা কৃচ্ছ্রনীতির পথে হাঁটতে চাইছে। আগের সরকার ৪৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর প্রস্তাব দিলে অসন্তোষ আরও বেড়ে যায়।


তরুণদের ভূমিকা ও নতুন প্রজন্মের দাবি

প্যারিসের গার দ্য নরদ স্টেশনের বাইরে শত শত তরুণ স্লোগান দেয়, “ধনীদের প্রজাতন্ত্র নয়।” অনেকে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নামে।

সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী এমা মেগুরডিচিয়ান বলেন, “আমরা জানাতে এসেছি যে আর সহ্য করা যাচ্ছে না। অন্য ধরনের সরকার দরকার।”

২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অ্যালিস মরিন বলেন, “পুরনো প্রজন্ম আমাদের নষ্ট পৃথিবী ও ব্যর্থ সরকার দিয়ে গেছে। পরিবর্তনের জন্য লড়াই করা এখন আমাদের দায়িত্ব।”


সহিংসতা ও পুলিশের দমন অভিযান

নঁত শহরে বিক্ষোভকারীরা জ্বলন্ত টায়ার ও ডাস্টবিন ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুড়ে গোলচত্বর খালি করে। রেনে শহরে একটি বাসে আগুন ধরানো হয়।

মঁপেলিয়ে শহরে প্রতিবাদকারীরা গোলচত্বরে ব্যারিকেড তৈরি করে রাস্তা বন্ধ করলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। সেখানকার একটি ব্যানারে লেখা ছিল: “ম্যাক্রোঁ পদত্যাগ কর।”

প্যারিসে একটি স্কুলের প্রবেশপথ আটকে রাখা তরুণদের ওপরও পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পোড়ানো সাইকেল ও ডাস্টবিন সরিয়ে ফেলে ফায়ার সার্ভিস।


‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা

২০১৮-১৯ সালে কর ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে ফ্রান্সে “ইয়েলো ভেস্ট” আন্দোলনের বিস্তার ঘটে, যা ম্যাক্রোঁকে কোটি কোটি ইউরোর ছাড় দিতে বাধ্য করেছিল।

তবে সমাজবিজ্ঞানী অঁতোয়ান ব্রিস্তিয়েল জানান, এবারকার আন্দোলন ভিন্ন। তখন মূলত শ্রমজীবী ও অবসরপ্রাপ্তরা বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। এবার তরুণরাই বেশি সক্রিয়।

তাদের লক্ষ্য হলো সামাজিক ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং নতুন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা।