ঘটনাটি কী ঘটেছে
পোল্যান্ড প্রথমবারের মতো সন্দেহভাজন রুশ ড্রোন নিজেদের আকাশসীমায় ভূপাতিত করেছে। ন্যাটো মিত্র দেশগুলোর সহায়তায় এই অভিযান পরিচালিত হয়, যা রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমা সামরিক জোটের কোনো সদস্যের প্রথম সরাসরি আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সংসদে বলেন, “এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা যতবার খোলাখুলি সংঘর্ষের কাছাকাছি এসেছি, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর মুহূর্ত,” যদিও তিনি আশ্বাস দেন যে “যুদ্ধের প্রান্তে পৌঁছে গেছি” এমন আশঙ্কার কারণ নেই।

সামরিক অভিযান ও ক্ষয়ক্ষতি
পোলিশ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, ডাচ এফ-৩৫, ইতালির এডব্লিউএএক্স নজরদারি বিমান এবং ন্যাটোর আকাশে জ্বালানি ভরার বিমান এই অভিযানে অংশ নেয়। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ড্রোনগুলো পোল্যান্ডের আকাশে প্রবেশ করলে সেগুলো ভূপাতিত করা হয়।
একটি ড্রোন ভোরে পূর্ব পোল্যান্ডের উইরিকি-ওলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক তোমাজ ভেসোলোভস্কির বাড়িতে আছড়ে পড়ে। তার বাড়ির ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়, শোবার ঘরে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বাড়িটি এখন ভেঙে ফেলার মতো অবস্থায় আছে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের খেতেও ভূপাতিত ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
রাশিয়ার অস্বীকৃতি
মস্কো এ ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের ড্রোন পশ্চিম ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়েছে, তবে পোল্যান্ডে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল না। পোল্যান্ডে নিযুক্ত এক রুশ কূটনীতিক দাবি করেন, ড্রোনগুলো ইউক্রেনের দিক থেকে এসেছে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “রাশিয়া পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে ড্রোন দিয়ে? শুরু হলো!”
ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডার নেতারা এই অনুপ্রবেশের নিন্দা করেন। কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছে।

পোল্যান্ড জানিয়েছে, ১৯টি বস্তু তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল, যার মধ্যে যেগুলো হুমকি সৃষ্টি করেছিল সেগুলো ভূপাতিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী টাস্ক এটিকে “বৃহৎ উসকানি” হিসেবে আখ্যায়িত করে ন্যাটো চুক্তির ৪নং ধারা সক্রিয় করেছেন, যার মাধ্যমে মিত্র দেশগুলো জরুরি পরামর্শ করতে পারে।
সম্ভাব্য লক্ষ্য ও ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া
পোল্যান্ড বা ন্যাটো এখনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি ড্রোনগুলো কী উদ্দেশ্যে ছিল। তবে সামরিক সূত্র জানিয়েছে, অন্তত পাঁচটি ড্রোনের গন্তব্য ছিল রেজজো বিমানবন্দর, যা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের প্রধান ন্যাটো কেন্দ্র।
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে ঘটনাটিকে “অবিবেচক কাজ” বলে অভিহিত করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এ ধরনের অনুপ্রবেশ ইউরোপে যৌথ বিমান প্রতিরক্ষা গড়ার জরুরি প্রয়োজন প্রমাণ করে।
স্থানীয় প্রভাব
ঘটনার সময় পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনী নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানায়। পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, যার মধ্যে রেজজোও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ আক্রমণে সস্তা দীর্ঘ-পাল্লার “গারবেরা” ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, যা রাশিয়ার ইয়েলাবুগা কারখানায় চীনা যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
চেক প্রজাতন্ত্র জানিয়েছে, তারা পোল্যান্ডকে সহায়তায় তিনটি হেলিকপ্টার পাঠাতে প্রস্তুত। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লায়েন রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষক রিকি এলিসন বলেন, “এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু নয়, তবে রাশিয়া ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ও দুর্বলতাগুলো পরখ করছে।”
ন্যাটোর ইতিহাসে ৪নং ধারা এখন পর্যন্ত সাতবার সক্রিয় হয়েছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর।
পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রুশ ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা ন্যাটো দেশগুলোর জন্য বড় সতর্ক সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিত্র দেশগুলো যৌথ প্রতিরক্ষা জোরদার ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির পথে হাঁটছে। তবে ঘটনাটি ইউরোপীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















