সারসংক্ষেপ
- ৩১ বছর বয়সী চার্লি কার্ককে উটাহতে এক অনুষ্ঠানে গুলি করা হয়
- পুলিশ এখনো হামলাকারীকে খুঁজছে
- তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রক্ষণশীল তরুণ সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা
- ট্রাম্প জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন

হত্যাকাণ্ডের ঘটনা
ওয়াশিংটন, ১০ সেপ্টেম্বর – যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী কর্মী ও বিশ্লেষক চার্লি কার্ক, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বুধবার উটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে একটি বক্তৃতা অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। গভর্নর স্পেন্সার কক্স একে “রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ঘটনার ছয় ঘণ্টা পরও সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে জানান, একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল কিন্তু পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দুপুরে হাজারো মানুষের সামনে বক্তৃতা করার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ হয়। কার্ক তার গলায় হাত দেন এবং চেয়ার থেকে পড়ে যান। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে তার গলা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
পুলিশের ধারণা, হামলাকারী দূর থেকে কোনো ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, তাদের ছয়জন অফিসার সেখানে ছিলেন এবং কার্কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা টিমও উপস্থিত ছিল।

ট্রাম্প ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, রবিবার পর্যন্ত সরকারি ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “মহান ও কিংবদন্তি চার্লি কার্ক আর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের হৃদয়কে কেউই তার মতো বুঝতে পারেনি।”
গভর্নর কক্স বলেন, “এটি আমাদের রাজ্যের জন্য অন্ধকার দিন, আমাদের জাতির জন্য শোকের দিন। এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড।”
হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট
কার্কের এই বক্তৃতা ছিল তার পরিকল্পিত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় সফরের প্রথম অনুষ্ঠান। তিনি সাধারণত বড় জনসমাগমে বিতর্কে আমন্ত্রণ জানাতেন। গুলি চালানোর কয়েক সেকেন্ড আগে এক শ্রোতা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে গণহত্যার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেছিলেন। উত্তর দেওয়ার মুহূর্তেই গুলি চালানো হয়।
চার্লি কার্ক ও তার প্রভাব
চার্লি কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ নামের সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রক্ষণশীল তরুণ সংগঠন। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে তরুণ ও সংখ্যালঘু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সংগঠনটি বড় ভূমিকা রাখে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর বলেন, “টার্নিং পয়েন্টের কর্মীরা বিজয়ের মূল শক্তি ছিল।”
কার্কের সোশ্যাল মিডিয়ায় ৫৩ লাখ অনুসারী ছিল। তিনি জনপ্রিয় পডকাস্ট ও রেডিও অনুষ্ঠান “দ্য চার্লি কার্ক শো” পরিচালনা করতেন এবং সম্প্রতি ফক্স নিউজের “ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস”-এ অতিথি উপস্থাপক হিসেবেও দেখা গেছে।
তিনি ট্রাম্পপন্থী প্রভাবশালীদের মধ্যে ছিলেন—যাদের মধ্যে জ্যাক পসোবিয়েক, লরা লুমার, ক্যান্ডেস ওউইন্সও আছেন। তারা সবাই মিলে ট্রাম্পের নীতি জোরালোভাবে প্রচার করতেন।
কার্ক প্রায়ই গণমাধ্যমকে আক্রমণ করতেন এবং বর্ণ, লিঙ্গ, অভিবাসন ইত্যাদি নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিতেন। তার মৃত্যুতে হোয়াইট হাউসের তরুণ কর্মীদের মধ্যে শোক নেমে আসে। কার্ক স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার উত্থান
যদিও হত্যার উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পার করছে। ২০২১ সালে ক্যাপিটল আক্রমণের পর থেকে রয়টার্স ৩০০-র বেশি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
২০২৪ সালে পেনসিলভানিয়ায় এক প্রচারসভায় ট্রাম্প গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। একই বছরের পরের মাসে তার ওপর আরেকটি হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ বছরও বেশ কিছু রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে—যেমন মিনেসোটায় এক বন্দুকধারী ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও তার স্ত্রীকে গুলি করে এবং অপর ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাকে হত্যা করে।
এছাড়া ২০২২ সালে সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামী হামলার শিকার হন। ২০২০ সালে মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল এক ডানপন্থী দল।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সহিংসতার ঘটনায় উভয় দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স লিখেছেন, “প্রভু, তাকে অনন্ত শান্তি দান করুন।”
ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, “রাজনৈতিক সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কার্কের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।”
চার্লি কার্কের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন এক অধ্যায় হিসেবে ধরা হচ্ছে। তার হত্যাকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক মেরুকরণই নয়, গণতন্ত্রের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















