নাসার পারসিভিয়ারেন্স রোভার গত বছর মঙ্গলগ্রহে এমন কিছু শিলা আবিষ্কার করেছে যা বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী একসময় সেখানে অণুজীবের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দিতে পারে।
নতুন গবেষণার ফলাফল
প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পারসিভিয়ারেন্স যে শিলাগুলো খনন ও সংগ্রহ করেছিল, সেগুলো মঙ্গলগ্রহের প্রাচীন নদী উপত্যকা নেরেতভা ভ্যালিসে অবস্থিত। শিলাগুলো আসলে কাদামাটি থেকে তৈরি এবং এতে অদ্ভুত টেক্সচারযুক্ত দাগ রয়েছে, যেগুলোকে নাসা “পপি সিডস” বা “লেপার্ড স্পটস” নামে ডাকছে।

অণুজীবের সম্ভাবনা
ছবি ও তথ্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এসব দাগ অণুজীবের কর্মকাণ্ডের ফল হতে পারে। অনেক আগে হয়তো অণুজীবরা ওই সেডিমেন্টে বাস করত এবং জৈব পদার্থ খেত। এই প্রক্রিয়ার ফলেই জৈব পদার্থ খনিজে রূপান্তরিত হয়েছিল, যা বর্তমানে দাগযুক্ত শিলার আকারে পাওয়া গেছে। নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফি বলেন, “এটি এখন পর্যন্ত মঙ্গলে জীবনের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ হতে পারে, যা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর।”
বিকল্প ব্যাখ্যার সম্ভাবনা
তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, জীববিজ্ঞানের বাইরে অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও এই দাগ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তাই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হলে শিলার নমুনা পৃথিবীতে এনে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা জরুরি। স্টনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক জোয়েল হুরোভিৎজ বলেন, “আমাদের সংগ্রহ করা নমুনাটিতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে আসলে জীবনের কারণে এই দাগ তৈরি হয়েছে কি না।”

বিজ্ঞানীদের প্রথম আগ্রহ ও বর্তমান সংকট
গত বছর শিলাগুলো প্রথম আবিষ্কার করার পর থেকেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল যে, এগুলো হয়তো প্রাচীন জীবনের চিহ্ন বহন করছে। তবে এখন নাসার মঙ্গল অনুসন্ধান কর্মসূচি অনিশ্চয়তার মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলের মাটি পৃথিবীতে আনার জন্য পরিকল্পিত “মার্স স্যাম্পল রিটার্ন” প্রকল্পটি “অসহনীয় ব্যয়বহুল” বলে বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই আবিষ্কার তাই একদিকে মঙ্গলে জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের গবেষণা নিয়ে শঙ্কাও বাড়িয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















