০৭:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান নাইজেরিয়া বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাস করল মাইক্রোসফট ও জি৪২ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডেটা-সেন্টার বিস্তার ঘোষণা বড় টেকের চাপের মুখে ইইউ এইআই আইন বাস্তবায়ন বিলম্বে বিবেচনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে গম কিনছে, বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে বড় পদক্ষেপ ব্লেক লাইভলির মামলায় সাক্ষী টেইলর সুইফট ও হিউ জ্যাকম্যান; ক্ষতিপূরণের দাবি ১৬১ মিলিয়ন ডলার ডাক রাশ্মিকার ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ প্রথম দিনেই ব্যর্থতার মুখে ৩ দফা দাবি: শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে

বছরের সেরা উদ্ভাবক: স্নেহা গোয়েঙ্কা

আল্ট্রাফাস্ট জেনেটিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্নেহা গোয়েঙ্কা এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা চিকিৎসকদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক জেনেটিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে।

শিশুদের অজ্ঞাত জেনেটিক রোগের চ্যালেঞ্জ

প্রায় এক চতুর্থাংশ শিশু যারা ইনটেন্সিভ কেয়ারে ভর্তি হয়, তাদের জেনেটিক রোগ আগে থেকেই নির্ণীত থাকে না। সঠিক চিকিৎসার জন্য তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করা জরুরি। কিন্তু প্রচলিত প্রক্রিয়ায় এতে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। যা অনেক সময়ই জীবন বাঁচানোর জন্য খুব দেরি হয়ে যায়।

দ্রুত সিকোয়েন্সিং ব্যবস্থার জন্ম

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক স্নেহা গোয়েঙ্কা ও তার সহকর্মীরা পাঁচ বছর আগে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেন, যা মাত্র আট ঘণ্টারও কম সময়ে জেনেটিক রোগ শনাক্ত করতে পারে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহারে প্রতিটি ধাপকে দ্রুততর করতে তার অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নেদারল্যান্ডসের ইউএমসি উট্রেখটের অধ্যাপক জেরোন দে রিদার বলেন, “তার কাজ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে জিনোম সিকোয়েন্সিং শুধু গবেষণা বা ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য নয়, এখনই রোগীদের জীবন বাঁচাতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।”

শৈশব থেকে সংগ্রাম

মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া গোয়েঙ্কা শৈশবেই শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সঙ্গে সংগ্রাম করেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে রাজস্থানের কোটা শহরে গিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এরপর ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি পাস করে ভর্তি হন আইআইটি বোম্বেতে।

সেখানে পড়াশোনার সময় তিনি কম্পিউটার আর্কিটেকচার নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রয়োগ করার ইচ্ছা তার মধ্যে জন্ম দেয়। পরিবারের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে অকালপ্রসূত ভাইয়ের কারণে অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাস্তব সমস্যার সমাধান খুঁজতে অনুপ্রাণিত করে।

প্রযুক্তির ভেতরের কাজ

জেনেটিক সিকোয়েন্সিং সাধারণত রক্তের নমুনা থেকে শুরু হয়। ডিএনএ প্রস্তুত করতে লাগে তিন ঘণ্টা, ডিএনএ পড়তে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা, আর সব ডেটা বিশ্লেষণ করতে প্রায় ২১ ঘণ্টা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সপ্তাহ কেটে যায়।

গোয়েঙ্কা নতুন ধারণা দেন—সিকোয়েন্সিং ডেটা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্ট্রিম করে বিশ্লেষণ করা, ঠিক যেমন নেটফ্লিক্সে ভিডিও স্ট্রিম হয়। এ জন্য তিনি ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করেন, অ্যালগরিদম তৈরি করেন, এবং ডেটা প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে নতুন সফটওয়্যার ডিজাইন করেন।

ফলাফল: যেখানে আগে জেনেটিক ডেটা বিশ্লেষণে ২০ ঘণ্টা লাগত, তার সিস্টেমে সময় নেমে আসে মাত্র দেড় ঘণ্টায়।

বাস্তব পরীক্ষার মুহূর্ত

২০২১ সালে ১৩ বছরের এক কিশোর ম্যাথিউ হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসকদের দ্রুত জানতে হতো এটি ভাইরাসজনিত নাকি জেনেটিক সমস্যার কারণে। গোয়েঙ্কার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক রাতের মধ্যে রিপোর্ট আসে এবং দেখা যায় এটি জেনেটিক মিউটেশনের ফল। পরদিনই তাকে প্রতিস্থাপন তালিকায় রাখা হয় এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে সে নতুন হৃদযন্ত্র পায়। এখন সে সুস্থ।

আরও বিস্তৃত লক্ষ্য

এখন পর্যন্ত ২৬ জন রোগীর ওপর এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। নবজাতক থেকে শুরু করে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় এটি সরাসরি কাজে লাগছে। গোয়েঙ্কা ও তার সহকর্মীরা এখন একটি স্টার্টআপ গড়ে তুলছেন যাতে এই প্রযুক্তি বাজারে আনা যায় এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

তিনি নতুন সফটওয়্যারও তৈরি করছেন, যাতে জেনেটিক রেফারেন্স ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী-নির্ভর না থেকে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর হয়। হিউম্যান প্যানজিনোম প্রজেক্টের তথ্য ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট ফিল্টার তৈরি করছেন।

পরিবারের গর্ব

যে পরিবার একসময় তার পড়াশোনার বিরোধিতা করেছিল, আজ সেই পরিবারই তার অর্জন নিয়ে গর্বিত। গোয়েঙ্কা বলেন, “এখন পুরো পরিবার আমার কাজের প্রভাব নিয়ে ভীষণ গর্ববোধ করে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান

বছরের সেরা উদ্ভাবক: স্নেহা গোয়েঙ্কা

০৪:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আল্ট্রাফাস্ট জেনেটিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্নেহা গোয়েঙ্কা এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা চিকিৎসকদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক জেনেটিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে।

শিশুদের অজ্ঞাত জেনেটিক রোগের চ্যালেঞ্জ

প্রায় এক চতুর্থাংশ শিশু যারা ইনটেন্সিভ কেয়ারে ভর্তি হয়, তাদের জেনেটিক রোগ আগে থেকেই নির্ণীত থাকে না। সঠিক চিকিৎসার জন্য তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করা জরুরি। কিন্তু প্রচলিত প্রক্রিয়ায় এতে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। যা অনেক সময়ই জীবন বাঁচানোর জন্য খুব দেরি হয়ে যায়।

দ্রুত সিকোয়েন্সিং ব্যবস্থার জন্ম

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক স্নেহা গোয়েঙ্কা ও তার সহকর্মীরা পাঁচ বছর আগে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেন, যা মাত্র আট ঘণ্টারও কম সময়ে জেনেটিক রোগ শনাক্ত করতে পারে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহারে প্রতিটি ধাপকে দ্রুততর করতে তার অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নেদারল্যান্ডসের ইউএমসি উট্রেখটের অধ্যাপক জেরোন দে রিদার বলেন, “তার কাজ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে জিনোম সিকোয়েন্সিং শুধু গবেষণা বা ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য নয়, এখনই রোগীদের জীবন বাঁচাতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।”

শৈশব থেকে সংগ্রাম

মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া গোয়েঙ্কা শৈশবেই শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সঙ্গে সংগ্রাম করেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে রাজস্থানের কোটা শহরে গিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। এরপর ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি পাস করে ভর্তি হন আইআইটি বোম্বেতে।

সেখানে পড়াশোনার সময় তিনি কম্পিউটার আর্কিটেকচার নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রয়োগ করার ইচ্ছা তার মধ্যে জন্ম দেয়। পরিবারের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে অকালপ্রসূত ভাইয়ের কারণে অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাস্তব সমস্যার সমাধান খুঁজতে অনুপ্রাণিত করে।

প্রযুক্তির ভেতরের কাজ

জেনেটিক সিকোয়েন্সিং সাধারণত রক্তের নমুনা থেকে শুরু হয়। ডিএনএ প্রস্তুত করতে লাগে তিন ঘণ্টা, ডিএনএ পড়তে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা, আর সব ডেটা বিশ্লেষণ করতে প্রায় ২১ ঘণ্টা। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সপ্তাহ কেটে যায়।

গোয়েঙ্কা নতুন ধারণা দেন—সিকোয়েন্সিং ডেটা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্ট্রিম করে বিশ্লেষণ করা, ঠিক যেমন নেটফ্লিক্সে ভিডিও স্ট্রিম হয়। এ জন্য তিনি ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করেন, অ্যালগরিদম তৈরি করেন, এবং ডেটা প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করতে নতুন সফটওয়্যার ডিজাইন করেন।

ফলাফল: যেখানে আগে জেনেটিক ডেটা বিশ্লেষণে ২০ ঘণ্টা লাগত, তার সিস্টেমে সময় নেমে আসে মাত্র দেড় ঘণ্টায়।

বাস্তব পরীক্ষার মুহূর্ত

২০২১ সালে ১৩ বছরের এক কিশোর ম্যাথিউ হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসকদের দ্রুত জানতে হতো এটি ভাইরাসজনিত নাকি জেনেটিক সমস্যার কারণে। গোয়েঙ্কার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক রাতের মধ্যে রিপোর্ট আসে এবং দেখা যায় এটি জেনেটিক মিউটেশনের ফল। পরদিনই তাকে প্রতিস্থাপন তালিকায় রাখা হয় এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে সে নতুন হৃদযন্ত্র পায়। এখন সে সুস্থ।

আরও বিস্তৃত লক্ষ্য

এখন পর্যন্ত ২৬ জন রোগীর ওপর এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। নবজাতক থেকে শুরু করে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় এটি সরাসরি কাজে লাগছে। গোয়েঙ্কা ও তার সহকর্মীরা এখন একটি স্টার্টআপ গড়ে তুলছেন যাতে এই প্রযুক্তি বাজারে আনা যায় এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

তিনি নতুন সফটওয়্যারও তৈরি করছেন, যাতে জেনেটিক রেফারেন্স ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী-নির্ভর না থেকে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর হয়। হিউম্যান প্যানজিনোম প্রজেক্টের তথ্য ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট ফিল্টার তৈরি করছেন।

পরিবারের গর্ব

যে পরিবার একসময় তার পড়াশোনার বিরোধিতা করেছিল, আজ সেই পরিবারই তার অর্জন নিয়ে গর্বিত। গোয়েঙ্কা বলেন, “এখন পুরো পরিবার আমার কাজের প্রভাব নিয়ে ভীষণ গর্ববোধ করে।”