ওবেসিটিকে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হিসেবে দেখার আহ্বান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রাপ্তবয়স্কদের ওবেসিটি চিকিৎসায় ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহারের সুপারিশ করতে যাচ্ছে। খসড়া নির্দেশিকায় সংস্থাটি দেশগুলোকে ওবেসিটিকে কেবল জীবনযাপনের সমস্যা না ভেবে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, জনপ্রিয় জিএলপি-১ শ্রেণির ওষুধ, যা প্রথমে নোভো নরডিস্ক ও এলি লিলি কোম্পানি তৈরি করেছিল, ওবেসিটির দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে যাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ৩০ বা তার বেশি, তাদের জন্য জীবনধারা ও আচরণগত পরামর্শের পাশাপাশি এই ওষুধ ব্যবহারকে সমাধানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ওবেসিটি নিয়ে পুরনো ধারণা ভাঙতে চায় ডব্লিউএইচও
খসড়া নির্দেশিকাটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরামর্শ নেওয়া হবে। সেখানে বলা হয়েছে, ওবেসিটিকে সাধারণত পুরনো দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনযাত্রার সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি “দীর্ঘস্থায়ী, অগ্রসরমান ও পুনরায় ফিরে আসা রোগ”, যা বিশ্বব্যাপী একশ কোটি মানুষের বেশি মানুষকে প্রভাবিত করছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
প্রথমবার ওষুধকে বৈশ্বিক চিকিৎসা মানের অংশ করার উদ্যোগ
ওবেসিটি চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহারের সুপারিশ এবারই প্রথম করা হলো। ডব্লিউএইচও মনে করছে, এটি বৈশ্বিক চিকিৎসা মানদণ্ড গড়ে তোলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিশু ও কিশোরদের জন্য আলাদা নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে।
যদিও ডব্লিউএইচও’র খসড়া নির্দেশিকা কেবল বিএমআই ৩০-এর উপরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু ধনী দেশে বিএমআই ২৭ থেকে ৩০ এবং অন্তত একটি ওজন-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলেও এই ওষুধ সুপারিশ করা হয়।
এখনো জরুরি ওষুধের তালিকায় নয়
এর আগে চলতি মাসেই ডব্লিউএইচও ওবেসিটির চিকিৎসায় এই ওষুধগুলোকে তাদের জরুরি ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যাদের সঙ্গে অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, সেখানে এই ওষুধ যোগ করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলেছে, এটি দেখায় কোন রোগীরা এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন। তবে ওষুধের উচ্চমূল্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে প্রাপ্যতা সীমিত করে ফেলছে।
ডব্লিউএইচও’র নতুন উদ্যোগ ওবেসিটিকে শুধুমাত্র জীবনযাপনের সমস্যা নয়, বরং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে। ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হলে এটি চিকিৎসায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে, তবে দাম কমানো এবং সবার নাগালে পৌঁছে দেওয়াই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।