০১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই বিশ্বজুড়ে স‍‍ংকট দেখা দিয়েছে রেয়ার আর্থের মূল ধাতু ইয়ট্রিয়ামের গাজীপুরে গৃহবধূর গলা-কাটা লাশ উদ্ধার; স্বামী আশঙ্কাজনক রংপুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক সমর্থকের ঢাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. এরশাদ হালিম দুই পুরুষ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পে ৩৫টি ক্রড বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ উদ্ধার ইরান ও কাতারের পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ বাংলাদেশে উৎখাতপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ‘বাংলায়ও জঙ্গলরাজের অবসান হবে’ — মোদি ভারতের বিহার রাজ্যে মোদির জোটের ঐতিহাসিক জয়, বিপর্যস্ত বিরোধীরা

ইউরোপের অর্থনীতি

অন্ধকারের মধ্যেও ইউরোপের অর্থনীতিতে আশার আভাস দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির মতো ইউরোপের তিন বৃহৎ অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি এ বছর মাত্র ০.৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। ২০২৬ সালে তা সামান্য বেড়ে ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক সংকট
৮ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স সরকার ভেঙে পড়ে বাজেট ঘাটতি সামলানো নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে। এর ফলে ফ্রান্সের বন্ডের সুদের হার ইতালির সমান হয়, যা ইউরো চালুর (১৯৯৯) পর প্রথমবারের মতো ঘটল। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপ করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং চীনের বাণিজ্য প্রতিযোগিতা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
আশার ইঙ্গিত
এসব অস্থিরতার মধ্যেও আগস্ট মাসে ইউরোপের উৎপাদন সূচক (Purchasing Managers’ Index) বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জার্মানির ব্যবসায়িক আস্থা সূচক (Ifo index) ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ আশাবাদ প্রকাশ করেছে। স্পেনের অর্থনীতিও শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে, যেখানে উৎপাদন ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকা থেকে অভিবাসনের ঢল এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার
অর্থনীতির খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর একটি কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি কার্যত নিয়ন্ত্রণে আসা। আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে। এর ফলে সুদের হার কমেছে, যা নির্মাণ খাতকে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। যদিও ভোক্তারা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে নতুন করে আয়-ব্যয়ে ঝুঁকবেন কিনা তা অনিশ্চিত, তবে তাদের সঞ্চয়ের হার বেশি থাকায় এ খাত অর্থনীতিতে বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারে।
সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ
সরকারি খরচও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জার্মানি নেতৃত্বাধীন আর্থিকভাবে সতর্ক দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগে প্রস্তুত। ইতালি ও স্পেনের মতো দেশগুলো কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার তহবিল থেকে এখনও অর্থ খরচ করতে পারছে, যদিও বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে এ সমস্যাগুলো কমে আসবে।
বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ ও নতুন দিক
আমেরিকা ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কঠিন হয়ে উঠেছে, আর তাদের বিকল্প হিসেবে তেমন বড় বাজার নেই। তবুও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বাজার খুঁজছে। জার্মানির যন্ত্রপাতি শিল্পে এ বছর আমেরিকা ও চীনে রপ্তানি যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ৯ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একই সময়ে লাতিন আমেরিকার মেরকোসুর জোটভুক্ত দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে, যদিও ভিত্তি তুলনামূলকভাবে ছোট।
প্রযুক্তি খাতের সহায়তা
উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সহায়তা আসছে। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে ৭০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতে বছরের শুরুতে জোরদার প্রবৃদ্ধির পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেলেও, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও দৃঢ় বলে জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেন্চারনার ক্যাপিটাল।
অনিশ্চয়তার মেঘ
তবে এ আশার আলো যে স্থায়ী হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। মর্গ্যান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদ ইয়েন্স আইসেনস্মিডট সতর্ক করে বলেছেন, ইতিবাচক সংকেত থাকলেও নেতিবাচক দিকগুলোই বেশি প্রভাব ফেলছে। ট্রাম্প প্রশাসন আরও কঠিন শুল্ক আরোপ করতে পারে, ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে, এবং সংস্কার কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে। তবুও বাজার ও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শুরু করেছে, যা অন্তত নীতিনির্ধারকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই

ইউরোপের অর্থনীতি

০৪:৫১:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অন্ধকারের মধ্যেও ইউরোপের অর্থনীতিতে আশার আভাস দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছে, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির মতো ইউরোপের তিন বৃহৎ অর্থনীতির গড় প্রবৃদ্ধি এ বছর মাত্র ০.৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। ২০২৬ সালে তা সামান্য বেড়ে ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক সংকট
৮ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স সরকার ভেঙে পড়ে বাজেট ঘাটতি সামলানো নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে। এর ফলে ফ্রান্সের বন্ডের সুদের হার ইতালির সমান হয়, যা ইউরো চালুর (১৯৯৯) পর প্রথমবারের মতো ঘটল। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপ করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং চীনের বাণিজ্য প্রতিযোগিতা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
আশার ইঙ্গিত
এসব অস্থিরতার মধ্যেও আগস্ট মাসে ইউরোপের উৎপাদন সূচক (Purchasing Managers’ Index) বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জার্মানির ব্যবসায়িক আস্থা সূচক (Ifo index) ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ আশাবাদ প্রকাশ করেছে। স্পেনের অর্থনীতিও শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে, যেখানে উৎপাদন ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকা থেকে অভিবাসনের ঢল এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে।
মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার
অর্থনীতির খানিকটা ঘুরে দাঁড়ানোর একটি কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি কার্যত নিয়ন্ত্রণে আসা। আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে। এর ফলে সুদের হার কমেছে, যা নির্মাণ খাতকে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। যদিও ভোক্তারা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে নতুন করে আয়-ব্যয়ে ঝুঁকবেন কিনা তা অনিশ্চিত, তবে তাদের সঞ্চয়ের হার বেশি থাকায় এ খাত অর্থনীতিতে বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারে।
সরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ
সরকারি খরচও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জার্মানি নেতৃত্বাধীন আর্থিকভাবে সতর্ক দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগে প্রস্তুত। ইতালি ও স্পেনের মতো দেশগুলো কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার তহবিল থেকে এখনও অর্থ খরচ করতে পারছে, যদিও বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে এ সমস্যাগুলো কমে আসবে।
বাণিজ্যে চ্যালেঞ্জ ও নতুন দিক
আমেরিকা ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কঠিন হয়ে উঠেছে, আর তাদের বিকল্প হিসেবে তেমন বড় বাজার নেই। তবুও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বাজার খুঁজছে। জার্মানির যন্ত্রপাতি শিল্পে এ বছর আমেরিকা ও চীনে রপ্তানি যথাক্রমে ৭ শতাংশ ও ৯ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একই সময়ে লাতিন আমেরিকার মেরকোসুর জোটভুক্ত দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে, যদিও ভিত্তি তুলনামূলকভাবে ছোট।
প্রযুক্তি খাতের সহায়তা
উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সহায়তা আসছে। ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে ৭০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল খাতে বছরের শুরুতে জোরদার প্রবৃদ্ধির পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেলেও, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও দৃঢ় বলে জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেন্চারনার ক্যাপিটাল।
অনিশ্চয়তার মেঘ
তবে এ আশার আলো যে স্থায়ী হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। মর্গ্যান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদ ইয়েন্স আইসেনস্মিডট সতর্ক করে বলেছেন, ইতিবাচক সংকেত থাকলেও নেতিবাচক দিকগুলোই বেশি প্রভাব ফেলছে। ট্রাম্প প্রশাসন আরও কঠিন শুল্ক আরোপ করতে পারে, ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে, এবং সংস্কার কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে। তবুও বাজার ও প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শুরু করেছে, যা অন্তত নীতিনির্ধারকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে।