চীনের কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ফলে বিরল-মূলধাতু ইয়ট্রিয়ামের সরবরাহ দ্রুত কমে যাচ্ছে। এতে দামের তীব্র বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক শিল্পখাতে সংকট দেখা দিয়েছে, যা বিমান ও মহাকাশ, জ্বালানি ও সেমিকন্ডাক্টর—সব ক্ষেত্রেই বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিশ্বব্যাপী ইয়ট্রিয়াম ঘাটতি: কেন সংকট বাড়ছে
চীন বিশ্বের প্রধান ইয়ট্রিয়াম উৎপাদক। এই ধাতু উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল আবরণ, জেট ইঞ্জিনের বিশেষ মিশ্র ধাতু, সেমিকন্ডাক্টর ও গ্যাস টারবাইনে ব্যবহৃত হয়।
এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন ইয়ট্রিয়ামসহ আরও ছয়টি বিরল-মূলধাতুর রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এর ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ নাটকীয়ভাবে সংকুচিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র–চীন শীর্ষ বৈঠকে কিছু অগ্রগতি হলেও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার হয়নি। ফলে লাইসেন্স ছাড়া চীন থেকে ইয়ট্রিয়াম বের করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও খুব ছোট চালানের জন্য এবং ডেলিভারিতে দীর্ঘ বিলম্ব দেখা দিচ্ছে।

ইয়ট্রিয়াম নিয়ে বৈশ্বিক আতঙ্ক
ইউরোপে ইয়ট্রিয়াম অক্সাইডের দাম জানুয়ারি থেকে ৪,৪০০% বেড়ে কেজিপ্রতি ২৭০ ডলারে পৌঁছেছে।
চীনে দাম তুলনামূলক কম (কেজিপ্রতি প্রায় ৭ ডলার), তবে সেখানেও বৃদ্ধি দেখা গেছে।
বিমান ও মহাকাশ শিল্পের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশটির শিল্প খাত চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, যা এখন বাড়তি খরচ ও সরবরাহ ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পেও পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। চিপ উৎপাদনে সুরক্ষামূলক আবরণ হিসেবে ইয়ট্রিয়াম অপরিহার্য। শিল্প বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতির গুরুত্ব ১০-এর মধ্যে ৯ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গ্যাস টারবাইন উৎপাদনেও ইয়ট্রিয়ামের তাপ-রোধী আবরণ অত্যাবশ্যক। যদিও মিতসুবিশি হেভি ও সিমেন্স এনার্জি জানিয়েছে, এখনও তারা সরাসরি কোনো প্রভাব অনুভব করছে না।
চীনের বাইরে মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি
চীনের রপ্তানি এপ্রিলের পর যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য দেশেও রপ্তানি ৩০% কমে গেছে।
অনেক সরবরাহকারী আশঙ্কা করছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সরবরাহ করলে চীন তাদের ওপর প্রতিশোধমূলক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে—এ কারণেই বাজারে প্রবাহ কমে গেছে।
চীনের বাইরে কতদিনের মজুত আছে তা স্পষ্ট নয়। তথ্য অস্বচ্ছ। বিভিন্ন উৎস বলছে—
• কারও কাছে ১ মাসের মজুত
• কারও কাছে ১২ মাস পর্যন্ত মজুত
• অনেক কোম্পানির স্টক শূন্যের কাছাকাছি
এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার স্টক ২০০ টন থেকে ৫ টনে নেমে এসেছে। অন্য একজন জানান, তার সংগ্রহ সম্পূর্ণ ফুরিয়ে গেছে।
এয়ারোস্পেস নির্মাতাদের কেউ কেউ দাম বাড়তে দেখলেও উৎপাদন এখনো ব্যাহত হয়নি। গালফস্ট্রিম জানিয়েছে, তাদের এ নিয়ে বড় ঝুঁকি নেই।

বিকল্প উৎস ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোজন
যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে আমদানি–নির্ভর দেশ। তার ৯৩% ইয়ট্রিয়াম সরাসরি চীন থেকে আসে।
তবে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ইন্ডিয়ানার ReElement Technologies ডিসেম্বর থেকেই বছরে ২০০ টন (মাসে ১৬ টন) ইয়ট্রিয়াম অক্সাইড উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। মার্চের মধ্যে এটি ৪০০ টনে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ৪৭০ টন ইয়ট্রিয়াম–সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করেছে।
চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ফলে ইয়ট্রিয়ামের বৈশ্বিক বাজারে এক নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।
বিমান, জ্বালানি ও সেমিকন্ডাক্টর—সব উচ্চপ্রযুক্তি খাতেই এই ধাতুর ঘাটতি দ্রুত একটি বড় “চোকপয়েন্টে” পরিণত হচ্ছে।
অল্প কিছু বিকল্প উদ্যোগ শুরু হলেও, সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে, আর দামও উচ্চ পর্যায়ে থাকতে পারে।
#বিরল_মূলধাতু সংকট #ইয়ট্রিয়াম #চীন_যুক্তরাষ্ট্র #বাণিজ্য_বিবাদ #এয়ারোস্পেস #সেমিকন্ডাক্টর #ReElement_Technologies
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















