গাঢ় পপ–রক আর স্বীকারোক্তিমূলক গানে বড় হয়ে ওঠার ডায়েরি
অস্ট্রেলিয়ান ব্যান্ড ৫ সেকেন্ডস অব সামার বা ৫এসওএস–কে দীর্ঘদিন ধরেই অনেকেই কেবল বয়ব্যান্ড বলেই চিনেছেন। তাদের ষষ্ঠ অ্যালবাম ‘এভরিওয়ান’স আ স্টার!’ সেই তকমাকেই সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। অ্যালবামের শুরুতেই একই নামের গান, যেখানে সাইকেডেলিক সিন্থ আর গাঢ় সুরের ওপর লুক হ্যামিংস গেয়ে ওঠেন হতাশা, আলো আর অন্ধকারের ভেতর দুলে থাকা এক শিল্পীর কথা। সেখান থেকে অ্যালবাম ছড়িয়ে পড়ে পপ–রক, ইলেকট্রনিক বিট আর ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তির জটিল জগতে—কোথাও রাগ, কোথাও আত্মসন্দেহ, আবার কোথাও ক্লান্ত খ্যাতির ভার।
সবচেয়ে আলোচিত গানগুলোর একটি ‘বয়ব্যান্ড’। স্পন্দিত সিন্থ আর গাঢ় বেইসলাইনের ওপর দাঁড়িয়ে গানে ব্যঙ্গের সুরে চলে আসে “ইমাজিনারি বয়ফ্রেন্ড” হয়ে থাকার চাপের গল্প। জন রায়ানের সহ–রচনায় তৈরি এই গান প্রমাণ করে, হিট–মেশিন পপ ফর্মুলার ভেতর থেকেও নিজের অবস্থান ফের দখল করে নিতে জানে ৫এসওএস। অন্যদিকে ‘নং ১ অবসেশন’ গানে উঠে এসেছে মোবাইল স্ক্রিন–নির্ভর জীবনের ডোপামিনের দোলাচল; ভারী ড্রাম আর দ্রুত সিন্থ রিফের সঙ্গে সেখানে শুনতে পাওয়া যায় একই সঙ্গে উত্তেজনা ও শূন্যতার শব্দ।
অ্যালবামের মাঝের অংশে ব্যান্ডটি আরও সাহসী পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছে। ‘নটওকে’, ‘টেলিফোন বিজি’ কিংবা ‘ইভলভ’–এ স্পোকেন–ওয়ার্ড ভোকালের মিশেলে তৈরি হয়েছে ড্যামন অ্যালবার্ন–ধারার আধা–গাওয়া, আধা–বলা ধরনের এক আবহ। ভালোবাসা, আসক্তি আর আত্মধ্বংসী অভ্যাসের গল্প সেখানে কখনো চিৎকার, কখনো ফিসফিস করে উঠে আসে। সব পরীক্ষা সফল না হলেও, রোলিং স্টোন অস্ট্রেলিয়ার রিভিউতে প্রডিউসার জেসন ইভিগান ও জন রায়ানকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যান্ডটিকে নতুন জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য, যেখানে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী শোনায়।

ভালনারেবিলিটি, পরিণতি আর ফ্যানবেসের দৃষ্টিকোণ
অ্যালবামের শেষাংশে গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়, কিন্তু আবেগের দিক থেকে সেখানে ঘনত্ব বাড়ে। ‘ঘোস্ট’ গানটিকে লুক হ্যামিংসের ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে—এটি তার স্ত্রী সিয়েরার সহ–লেখায় তৈরি, যেখানে গিটার ও সিন্থের মিশ্র পটভূমিতে তিনি স্বীকার করছেন, প্রিয় মানুষটি কখনো কখনো তার নিজেরই ছায়া। নিদ্রাহীনতার মোটিফ বারবার ফিরে আসে, যার চূড়ান্ত রূপ ‘আই’ম স্কেয়ার্ড আইল নেভার স্লিপ অ্যাগেইন’—বিচ্ছেদের বেদনায় ভরপুর এক গান, তবু কোরাসে যেন বাড়তি শক্তি জোগায় ভাঙা রাতের দুশ্চিন্তাকে সামলেও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা।
যারা পুরোনো ৫এসওএস–এর পপ–পাঙ্ক এনার্জি মিস করেন, তাদের জন্য আছে ‘সিক অব মাইসেলফ’ আর ‘দ্য রকস’। এই গানগুলোতে শোনা যায় প্যানিক! অ্যাট দ্য ডিসকো–ধারার উত্তেজনাপূর্ণ, নাটকীয় সুর, তবে আধুনিক প্রডাকশন ও পরিণত লেখনী তাদের আলাদা স্বাদ দিয়েছে। অ্যালবামের শেষ গান ‘জ’ব্রেকার’ অনেকটা সুখী সমাপ্তির মতো—এখানে হ্যামিংস স্বীকার করেন, “ডার্কার পার্টস” ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে, জায়গা করে দিচ্ছে টেকসই ভালোবাসার অনুভূতিকে।
রোলিং স্টোন অস্ট্রেলিয়ার ভাষ্যে, পপ–রকের প্রায় সব কোণ ঘুরে আসা এই অ্যালবাম ৫এসওএস–কে নতুন এক পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছে। যেখানে তারা আর কেবল কিশোর ফ্যানবেসের প্রিয় মুখ নয়, বরং নিজের গল্প, ক্লান্তি, ভালোবাসা ও ভয়কে পরিষ্কার করে বলে যেতে সক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক শিল্পী। মূলধারার চার্টে যখন নরম, প্রায় একরঙা ফোক–পপ গান দখল নিয়ে আছে, সেখানে ‘এভরিওয়ান’স আ স্টার!’ মনে হয় উচ্চ ভোল্টেজ, খাঁটি পপ–রকের এক সতেজ নিশ্বাস।
মিউজিক ভিডিও লিংক:https://youtu.be/OOHndihD7Dc
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















