০৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ বাংলাদেশে ইস্পোর্টসের উত্থান: গেমার তরুণরা গড়ছে নতুন ক্যারিয়ার প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারত কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে? স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল অনলাইন স্ক্যাম এখন ডকুমেন্টারির গল্প নয়—রোলিং স্টোন জানালো ঠকবে কি না, বুঝবেন কীভাবে কানাডা–মার্কিন সীমান্তে আরও তেল নিয়ে যেতে এনারব্রিজের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন পরিকল্পনা মাইক্রোসফটকে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ওপেনএআই—ফাঁস হওয়া তথ্য জানাল এআই দৌড়ের আসল খরচ অপরাধ আর অভিবাসন ইস্যুতে ডান দিকে সরে যাচ্ছে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছুটির দিনেও বিষাক্ত বাতাসে ঢাকা, রাজধানীবাসীর ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যাওয়া অস্বস্তি

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বেঁচে থাকার শেষ ভরসা ছাদজুড়ে সোলার প্যানেল

গ্যাস সংকট, নিষেধাজ্ঞা আর ভেঙে পড়া গ্রিডের মাঝেও আলো জ্বলে
মিয়ানমারের বিদ্যুৎব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধ, অর্থসংকট ও নিষেধাজ্ঞার চাপে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অনলাইন প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি করতে থাইল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা এলাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়ে দিলে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে আরও ঘন ঘন লোডশেডিং শুরু হয়। মিয়াওয়াডির মতো সীমান্তশহরে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সরকারি অফিসগুলো জরুরি সেবায় ব্যাঘাত ঠেকাতে ছাদে দ্রুত সোলার প্যানেল বসাতে শুরু করে। ছোট দোকান থেকে শুরু করে বরফ কারখানা পর্যন্ত বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খাবার সংরক্ষণ ও ডিজিটাল পেমেন্ট চালু রাখতে ডিজেলের বদলে সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছে। স্থানীয়দের বর্ণনায়, আগে যেখানে গর্জন করত জেনারেটর, সেখানে এখন তিন–চতুর্থাংশ মানুষের বাড়িতেই কোনো না কোনোভাবে সোলার প্যানেল আর ব্যাটারি জুড়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে মিয়ানমারের চালু উৎপাদনক্ষমতা ২০১৫ সালের স্তরে নেমে এসেছে। গৃহযুদ্ধের সশস্ত্র সংঘর্ষ, বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মিলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণ কার্যত অচল করে দিয়েছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিও থামিয়ে দিয়েছে সামরিক সরকার। এই শূন্যতায় চীনা কারখানার সস্তা সোলার প্যানেল বাজারে ঢল নামার সুযোগ পেয়েছে; বছরজুড়ে শুধু ২০২৫-এর প্রথম নয় মাসেই এ ধরনের প্যানেল আমদানি বহু গুণ বেড়েছে। সাধারণ পরিবারের জন্য সৌর প্যানেল, ইনভার্টার ও ব্যাটারি মিলিয়ে একটি প্যাকেজ এখনও সস্তা নয়, তবু জ্বালানি–খরচসহ ছোট ডিজেল জেনারেটরের তুলনায় এটি এককালীন কম ব্যয়বহুল সমাধান হয়ে উঠছে।

জলবায়ু নয়, টিকে থাকার রাজনীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভঙ্গুর বিদ্যুৎ অবকাঠামো থাকা বহু নিম্ন–আয়ের দেশেই এখন গ্রিডের বাইরে যাওয়ার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের মতো দেশেও গ্রিড বিদ্যুৎ অনিশ্চিত হওয়ায় ছাদভিত্তিক সোলার সিস্টেমে ঝুঁকছে পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে মিয়ানমারে মানুষ বিষয়টি জলবায়ু নীতি বা “সবুজ শক্তি”র আলোচনায় নয়, স্রেফ টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, সরকার যখন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, তখন সোলারই একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ।

এ পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও কম নয়। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল গ্রাহকরা যখন নিজেদের মতো করে সোলারে চলে যান, তখন জাতীয় গ্রিডে অবশিষ্ট গ্রাহকদের ওপর ব্যয়ভার বাড়ে, ফলে ভাড়া আরও চড়া হয়ে ওঠে। এতে সোলার কিনতে সক্ষম ও অক্ষম মানুষের ফারাক আরও স্পষ্ট হয়। একই সঙ্গে হাজার হাজার ছোট সিস্টেম যোগ হওয়ায় ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা, গ্রিডের ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা করাও জটিল হয়ে যায়। তবু মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের কাছে এসব হিসাব অনেক দূরের কথা। তাদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো রাতে কিছুটা আলো, ফ্রিজে ওষুধ ঠান্ডা রাখা আর মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া—যা বহু ক্ষেত্রে সরকার নয়, বরং সূর্যের আলো থেকেই আসছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ

যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বেঁচে থাকার শেষ ভরসা ছাদজুড়ে সোলার প্যানেল

০৩:৩৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গ্যাস সংকট, নিষেধাজ্ঞা আর ভেঙে পড়া গ্রিডের মাঝেও আলো জ্বলে
মিয়ানমারের বিদ্যুৎব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধ, অর্থসংকট ও নিষেধাজ্ঞার চাপে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে অনলাইন প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি করতে থাইল্যান্ড সীমান্তঘেঁষা এলাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়ে দিলে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে আরও ঘন ঘন লোডশেডিং শুরু হয়। মিয়াওয়াডির মতো সীমান্তশহরে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সরকারি অফিসগুলো জরুরি সেবায় ব্যাঘাত ঠেকাতে ছাদে দ্রুত সোলার প্যানেল বসাতে শুরু করে। ছোট দোকান থেকে শুরু করে বরফ কারখানা পর্যন্ত বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খাবার সংরক্ষণ ও ডিজিটাল পেমেন্ট চালু রাখতে ডিজেলের বদলে সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করছে। স্থানীয়দের বর্ণনায়, আগে যেখানে গর্জন করত জেনারেটর, সেখানে এখন তিন–চতুর্থাংশ মানুষের বাড়িতেই কোনো না কোনোভাবে সোলার প্যানেল আর ব্যাটারি জুড়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে মিয়ানমারের চালু উৎপাদনক্ষমতা ২০১৫ সালের স্তরে নেমে এসেছে। গৃহযুদ্ধের সশস্ত্র সংঘর্ষ, বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকট ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মিলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন রক্ষণাবেক্ষণ কার্যত অচল করে দিয়েছে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিও থামিয়ে দিয়েছে সামরিক সরকার। এই শূন্যতায় চীনা কারখানার সস্তা সোলার প্যানেল বাজারে ঢল নামার সুযোগ পেয়েছে; বছরজুড়ে শুধু ২০২৫-এর প্রথম নয় মাসেই এ ধরনের প্যানেল আমদানি বহু গুণ বেড়েছে। সাধারণ পরিবারের জন্য সৌর প্যানেল, ইনভার্টার ও ব্যাটারি মিলিয়ে একটি প্যাকেজ এখনও সস্তা নয়, তবু জ্বালানি–খরচসহ ছোট ডিজেল জেনারেটরের তুলনায় এটি এককালীন কম ব্যয়বহুল সমাধান হয়ে উঠছে।

জলবায়ু নয়, টিকে থাকার রাজনীতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভঙ্গুর বিদ্যুৎ অবকাঠামো থাকা বহু নিম্ন–আয়ের দেশেই এখন গ্রিডের বাইরে যাওয়ার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের মতো দেশেও গ্রিড বিদ্যুৎ অনিশ্চিত হওয়ায় ছাদভিত্তিক সোলার সিস্টেমে ঝুঁকছে পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে মিয়ানমারে মানুষ বিষয়টি জলবায়ু নীতি বা “সবুজ শক্তি”র আলোচনায় নয়, স্রেফ টিকে থাকার কৌশল হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, সরকার যখন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, তখন সোলারই একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ।

এ পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও কম নয়। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল গ্রাহকরা যখন নিজেদের মতো করে সোলারে চলে যান, তখন জাতীয় গ্রিডে অবশিষ্ট গ্রাহকদের ওপর ব্যয়ভার বাড়ে, ফলে ভাড়া আরও চড়া হয়ে ওঠে। এতে সোলার কিনতে সক্ষম ও অক্ষম মানুষের ফারাক আরও স্পষ্ট হয়। একই সঙ্গে হাজার হাজার ছোট সিস্টেম যোগ হওয়ায় ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা, গ্রিডের ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা করাও জটিল হয়ে যায়। তবু মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের কাছে এসব হিসাব অনেক দূরের কথা। তাদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো রাতে কিছুটা আলো, ফ্রিজে ওষুধ ঠান্ডা রাখা আর মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া—যা বহু ক্ষেত্রে সরকার নয়, বরং সূর্যের আলো থেকেই আসছে।