০৬:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ বাংলাদেশে ইস্পোর্টসের উত্থান: গেমার তরুণরা গড়ছে নতুন ক্যারিয়ার প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারত কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে? স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল অনলাইন স্ক্যাম এখন ডকুমেন্টারির গল্প নয়—রোলিং স্টোন জানালো ঠকবে কি না, বুঝবেন কীভাবে কানাডা–মার্কিন সীমান্তে আরও তেল নিয়ে যেতে এনারব্রিজের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন পরিকল্পনা মাইক্রোসফটকে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ওপেনএআই—ফাঁস হওয়া তথ্য জানাল এআই দৌড়ের আসল খরচ অপরাধ আর অভিবাসন ইস্যুতে ডান দিকে সরে যাচ্ছে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছুটির দিনেও বিষাক্ত বাতাসে ঢাকা, রাজধানীবাসীর ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যাওয়া অস্বস্তি

থাইল্যান্ডে প্লাবিত রেস্তোরাঁয় পায়ের কাছে মাছ; বন্যাকে সুযোগে বদলে দিল ‘পা জিত’

বন্যার পানিতেই নতুন ধরনের ডাইনিং অভিজ্ঞতা

ব্যাংককের পশ্চিমে নাখন পাঠুম প্রদেশের এক ছোট্ট রেস্তোরাঁ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত ভাইরাল। নাম তার ‘পা জিত’। থা চিন নদীর পানি যখন বাড়ে, তখন নদীর মাছ সরাসরি ঢুকে পড়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে। মেঝেতে হাঁটু নয়, হাঁটু–এর নিচু পর্যন্ত পানি, আর সেই পানির মাঝেই টেবিল–চেয়ারের ফাঁক গলে ছুটে বেড়াচ্ছে নানা রকম মাছ। খেতে বসা মানুষের পায়ের সাথে আলতো ধাক্কা খেয়ে চলে যাচ্ছে তারা। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এমন অভিজ্ঞতা নিতে এখন আশপাশের জেলা থেকে ভিড় জমাচ্ছেন কৌতূহলী ক্রেতারা।

রেস্তোরাঁটির মালিক পনকমল প্রাংপ্রেমপ্রি জানান, প্রায় চার বছর আগে প্রথমবার এভাবে পানি ঢুকে পড়লে তিনি ভেবেছিলেন ব্যবসা বোধহয় শেষ। রান্নাঘর বাঁচিয়ে রাখা, গ্যাস–লাইন কাজ করছে কি না—এসব নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা, তখনই এক ক্রেতা পানির ভেতরে মাছের ভিডিও তুলে অনলাইনে পোস্ট করেন। সেই ভিডিও দেখেই শুরু হয় ভিড়; মানুষ আসে শুধু এই অদ্ভুত দৃশ্যটা নিজের চোখে দেখবে বলে। আজ পা জিতের সবচেয়ে বড় পরিচয়—খাবারের সঙ্গে ফ্রি ‘রিভার শো’।

A flooded restaurant in Thailand brings delight with swimming fish among  diners | Louisiana First News

এখন কর্মীদের জন্যও বদলে গেছে কাজের ধরণ। কেউ কেউ কোমর পর্যন্ত ওয়েডার পরে গরম নুডলস বা মাছের ঝোল নিয়ে টেবিল থেকে টেবিলে হাঁটেন। ক্রেতাদের আগে থেকেই জানানো হয়, স্যান্ডেল পরে আসাই ভালো, আর মোবাইল বা ব্যাগ হাতের কাছেই রাখতে হবে যাতে পানিতে না পড়ে। শিশুদের জন্য ছোট বালতিতে করে খাবার দেওয়া হয়, তারা মাছের দিকে খাবার ছুড়ে দেখে কীভাবে দল বেঁধে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। এক–একটা দুপুর যেন ছোট্ট মেলার মতো—হাসাহাসি, ক্যামেরার ক্লিক, আর পানিতে মাছের ছুটোছুটির শব্দ।

জলবায়ু পরিবর্তন, ঝুঁকি আর মানিয়ে নেওয়ার গল্প

তবে আনন্দ আর কৌতূহলের পেছনে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা—থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা। থা চিন নদী দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষায় উপচে পড়ে, কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, এখন বৃষ্টি ও পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের ফলে প্লাবনের পরিমাণ ও ঘনত্ব দুটোই বেড়েছে। অনেক গ্রামে এর মানে জমির ক্ষতি, ঘরবাড়ি ভাঙা, জীবিকার সংকট। পা জিতের গল্প আলাদা, কারণ তারা এই অনিবার্য পানিকে মেনে নিয়ে ব্যবসাকেই অন্য রূপ দিয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক। পানি বেশি বেড়ে গেলে বা স্রোত দ্রুত হলে রেস্তোরাঁর ভেতরে বসা নিষিদ্ধ করা হয়। খাবার যেন দূষিত না হয়, সে জন্য নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে। তবু, যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই এটিকে ঝুঁকির জায়গা হিসেবে না দেখে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন।

Diners Make Reservations to Eat in Floodwaters at Thai Restaurant - Newsweek

ব্যাংকক ও আশপাশের এলাকার অনেক পরিবার বলছে, শিশুদের নিয়ে এখানে আসা যেন ছোট্ট এক ‘লাইভ নেচার ক্লাস’। বইয়ের ছবি নয়, চোখের সামনে নদীর মাছ কীভাবে স্রোতের সাথে ওঠানামা করে, তারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছে। পরিবেশবিদেরা একদিকে সতর্ক করছেন—এভাবে বন্যাকে স্বাভাবিক উৎসব বানিয়ে ফেললে দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা চাপা পড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে স্বীকারও করছেন, মানুষের মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এমন জায়গাগুলো ভূমিকা রাখে।

পনকমলের কাছে হিসাবটি সহজ—নদীকে সম্মান করা, ক্রেতাদের নিরাপদ রাখা, আর ভালো খাবার পরিবেশন করা। তিনি জানেন, ভাইরাল দৃশ্যের আড়ালে থা চিন নদীর ওপর নির্ভর করে চলছে কৃষি, মাছধরা ও তার নিজের জীবিকাও। পানি কখনো হুমকি, আবার কখনো আশীর্বাদ। পা জিতের ভেতরে সাঁতার কাটা মাছ সেই দ্বৈত বাস্তবতারই এক ঝলক, যা দেখাচ্ছে—জলবায়ু বদলে গেলে মানুষও নতুন উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ

থাইল্যান্ডে প্লাবিত রেস্তোরাঁয় পায়ের কাছে মাছ; বন্যাকে সুযোগে বদলে দিল ‘পা জিত’

০৩:২৩:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বন্যার পানিতেই নতুন ধরনের ডাইনিং অভিজ্ঞতা

ব্যাংককের পশ্চিমে নাখন পাঠুম প্রদেশের এক ছোট্ট রেস্তোরাঁ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত ভাইরাল। নাম তার ‘পা জিত’। থা চিন নদীর পানি যখন বাড়ে, তখন নদীর মাছ সরাসরি ঢুকে পড়ে রেস্তোরাঁর ভেতরে। মেঝেতে হাঁটু নয়, হাঁটু–এর নিচু পর্যন্ত পানি, আর সেই পানির মাঝেই টেবিল–চেয়ারের ফাঁক গলে ছুটে বেড়াচ্ছে নানা রকম মাছ। খেতে বসা মানুষের পায়ের সাথে আলতো ধাক্কা খেয়ে চলে যাচ্ছে তারা। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এমন অভিজ্ঞতা নিতে এখন আশপাশের জেলা থেকে ভিড় জমাচ্ছেন কৌতূহলী ক্রেতারা।

রেস্তোরাঁটির মালিক পনকমল প্রাংপ্রেমপ্রি জানান, প্রায় চার বছর আগে প্রথমবার এভাবে পানি ঢুকে পড়লে তিনি ভেবেছিলেন ব্যবসা বোধহয় শেষ। রান্নাঘর বাঁচিয়ে রাখা, গ্যাস–লাইন কাজ করছে কি না—এসব নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা, তখনই এক ক্রেতা পানির ভেতরে মাছের ভিডিও তুলে অনলাইনে পোস্ট করেন। সেই ভিডিও দেখেই শুরু হয় ভিড়; মানুষ আসে শুধু এই অদ্ভুত দৃশ্যটা নিজের চোখে দেখবে বলে। আজ পা জিতের সবচেয়ে বড় পরিচয়—খাবারের সঙ্গে ফ্রি ‘রিভার শো’।

A flooded restaurant in Thailand brings delight with swimming fish among  diners | Louisiana First News

এখন কর্মীদের জন্যও বদলে গেছে কাজের ধরণ। কেউ কেউ কোমর পর্যন্ত ওয়েডার পরে গরম নুডলস বা মাছের ঝোল নিয়ে টেবিল থেকে টেবিলে হাঁটেন। ক্রেতাদের আগে থেকেই জানানো হয়, স্যান্ডেল পরে আসাই ভালো, আর মোবাইল বা ব্যাগ হাতের কাছেই রাখতে হবে যাতে পানিতে না পড়ে। শিশুদের জন্য ছোট বালতিতে করে খাবার দেওয়া হয়, তারা মাছের দিকে খাবার ছুড়ে দেখে কীভাবে দল বেঁধে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। এক–একটা দুপুর যেন ছোট্ট মেলার মতো—হাসাহাসি, ক্যামেরার ক্লিক, আর পানিতে মাছের ছুটোছুটির শব্দ।

জলবায়ু পরিবর্তন, ঝুঁকি আর মানিয়ে নেওয়ার গল্প

তবে আনন্দ আর কৌতূহলের পেছনে রয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা—থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা। থা চিন নদী দীর্ঘদিন ধরেই বর্ষায় উপচে পড়ে, কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, এখন বৃষ্টি ও পানি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের ফলে প্লাবনের পরিমাণ ও ঘনত্ব দুটোই বেড়েছে। অনেক গ্রামে এর মানে জমির ক্ষতি, ঘরবাড়ি ভাঙা, জীবিকার সংকট। পা জিতের গল্প আলাদা, কারণ তারা এই অনিবার্য পানিকে মেনে নিয়ে ব্যবসাকেই অন্য রূপ দিয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক। পানি বেশি বেড়ে গেলে বা স্রোত দ্রুত হলে রেস্তোরাঁর ভেতরে বসা নিষিদ্ধ করা হয়। খাবার যেন দূষিত না হয়, সে জন্য নিয়মিত পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে। তবু, যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশই এটিকে ঝুঁকির জায়গা হিসেবে না দেখে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন।

Diners Make Reservations to Eat in Floodwaters at Thai Restaurant - Newsweek

ব্যাংকক ও আশপাশের এলাকার অনেক পরিবার বলছে, শিশুদের নিয়ে এখানে আসা যেন ছোট্ট এক ‘লাইভ নেচার ক্লাস’। বইয়ের ছবি নয়, চোখের সামনে নদীর মাছ কীভাবে স্রোতের সাথে ওঠানামা করে, তারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছে। পরিবেশবিদেরা একদিকে সতর্ক করছেন—এভাবে বন্যাকে স্বাভাবিক উৎসব বানিয়ে ফেললে দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা চাপা পড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে স্বীকারও করছেন, মানুষের মানসিকভাবে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এমন জায়গাগুলো ভূমিকা রাখে।

পনকমলের কাছে হিসাবটি সহজ—নদীকে সম্মান করা, ক্রেতাদের নিরাপদ রাখা, আর ভালো খাবার পরিবেশন করা। তিনি জানেন, ভাইরাল দৃশ্যের আড়ালে থা চিন নদীর ওপর নির্ভর করে চলছে কৃষি, মাছধরা ও তার নিজের জীবিকাও। পানি কখনো হুমকি, আবার কখনো আশীর্বাদ। পা জিতের ভেতরে সাঁতার কাটা মাছ সেই দ্বৈত বাস্তবতারই এক ঝলক, যা দেখাচ্ছে—জলবায়ু বদলে গেলে মানুষও নতুন উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে।