০৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ বাংলাদেশে ইস্পোর্টসের উত্থান: গেমার তরুণরা গড়ছে নতুন ক্যারিয়ার প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারত কেন সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে? স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল অনলাইন স্ক্যাম এখন ডকুমেন্টারির গল্প নয়—রোলিং স্টোন জানালো ঠকবে কি না, বুঝবেন কীভাবে কানাডা–মার্কিন সীমান্তে আরও তেল নিয়ে যেতে এনারব্রিজের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন পরিকল্পনা মাইক্রোসফটকে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ওপেনএআই—ফাঁস হওয়া তথ্য জানাল এআই দৌড়ের আসল খরচ অপরাধ আর অভিবাসন ইস্যুতে ডান দিকে সরে যাচ্ছে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছুটির দিনেও বিষাক্ত বাতাসে ঢাকা, রাজধানীবাসীর ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যাওয়া অস্বস্তি

বরফ গলাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি ঘোষণা করল আইসল্যান্ড

সামুদ্রিক স্রোত–ঝুঁকি এখন নিরাপত্তা আলোচনায়

আর্কটিক অঞ্চলে দ্রুত বরফ গলা আর গ্রিনল্যান্ড–সহ উত্তর আটলান্টিকে মিষ্টি পানি বৃদ্ধির ফলে গুরুত্বপূর্ণ সাগর স্রোত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে—এমন বৈজ্ঞানিক সতর্কতা এতদিন ছিল জলবায়ুবিদ আর গবেষকদের আলোচনায়। এবার আইসল্যান্ড প্রথম দেশ হিসেবে এই ঝুঁকিকে সরাসরি “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” হিসেবে স্বীকৃতি দিল। আশঙ্কা, আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন নামে পরিচিত সাগরস্রোত ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন হলে ইউরোপজুড়ে শীত আরও তীব্র হতে পারে, আবার আফ্রিকা, ভারত কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার মতো অঞ্চলের বর্ষা ও বৃষ্টিপাতেও বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আইসল্যান্ডের সিদ্ধান্ত দেখিয়ে দিচ্ছে—জলবায়ু সংকট এখন আর শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ফাইল নয়; প্রতিরক্ষা, জরুরি ব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্রনীতির মূল আলোচনাতেও এটি জায়গা করে নিচ্ছে।

আইসল্যান্ডের জলবায়ুমন্ত্রী অন্যান্য দেশকেও আহ্বান জানিয়েছেন নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে অনুরূপ বিশ্লেষণ যুক্ত করতে, কারণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, খাদ্য আমদানি, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি এমনকি সীমান্ত–রাজনীতিও জলবায়ু–চাপের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি এসেছে এমন সময়ে, যখন ব্রাজিলের বেলেং শহরে চলমান কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ঝড়ঝঞ্ঝা, তাপপ্রবাহ আর বন্যার ক্ষতি সামাল দিতে দরিদ্র দেশগুলোকে কতটা অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে তা নিয়ে কড়া দরকষাকষি চলছে। সেখানে আইসল্যান্ডের এই পদক্ষেপ ধনী দেশগুলোর জন্যও এক ধরনের বার্তা—জলবায়ু সংকট কেবল সমুদ্র–বেষ্টিত ছোট দ্বীপরাষ্ট্র বা উপকূলীয় অঞ্চলের মাথাব্যথা নয়, বরং নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সরাসরি হুমকি।

জলবায়ু কূটনীতি ও জ্বালানি বাস্তবতার টানাপোড়েন

তবে জলবায়ুকে জাতীয় নিরাপত্তা ভাষায় আনার প্রশ্নে মতভেদও কম নয়। কপ৩০–এ অংশ নেওয়া কিছু নেতার মতে, নিরাপত্তা ফ্রেমিং ব্যবহার করলে প্রতিরক্ষা বাজেট থেকেও জলবায়ু অভিযোজন বা অবকাঠামো সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সহজ হতে পারে। অন্যদিকে সমালোচকদের আশঙ্কা, এর সুযোগে সীমান্ত আরও কড়া হবে, অভিবাসী বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়বে, অথচ মূল সমস্যা—কার্বন নিঃসরণ কমানো—সেখানেই রয়ে যাবে। সম্মেলনে আমাজনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী প্রতিনিধিরা বন রক্ষা আর ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন, বলেছেন—কাগজে–কলমে প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তাদের কথা খুব কমই শোনা হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বলছে, শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের চাহিদা একেবারে কমে যাবে না; কিছুটা ধীরগতিতে হলেও তা বাড়তেই থাকবে, যা দেখায় অর্থনীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানির শেকড় কত গভীরে গেড়ে বসে আছে। ফলে একদিকে মহাসাগর স্রোত ভেঙে পড়ার মতো ঝুঁকির বৈজ্ঞানিক সতর্কতা, অন্যদিকে দ্রুত ট্রানজিশনে রাজনৈতিক অস্বস্তি আর পুরোনো জ্বালানি ব্যবসার অর্থনৈতিক স্বার্থ—সব মিলিয়ে কপ৩০–এর আলোচনায় স্পষ্ট এক টানাপোড়েন চলছে। আইসল্যান্ডের পদক্ষেপ সেই দ্বন্দ্বের সমাধান না দিলেও অন্তত এতটা বোঝায়—জলবায়ুকে আর দূরের “পরিবেশ সমস্যা” বলে রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই; রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, অর্থনীতি আর নাগরিক জীবনের খুব কেন্দ্রে এখন এই প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে উত্তরবাংলার জীবন: মাটি, ঘর আর স্বপ্ন একসঙ্গে হারাচ্ছে মানুষ

বরফ গলাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি ঘোষণা করল আইসল্যান্ড

০৩:২৪:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সামুদ্রিক স্রোত–ঝুঁকি এখন নিরাপত্তা আলোচনায়

আর্কটিক অঞ্চলে দ্রুত বরফ গলা আর গ্রিনল্যান্ড–সহ উত্তর আটলান্টিকে মিষ্টি পানি বৃদ্ধির ফলে গুরুত্বপূর্ণ সাগর স্রোত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে—এমন বৈজ্ঞানিক সতর্কতা এতদিন ছিল জলবায়ুবিদ আর গবেষকদের আলোচনায়। এবার আইসল্যান্ড প্রথম দেশ হিসেবে এই ঝুঁকিকে সরাসরি “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” হিসেবে স্বীকৃতি দিল। আশঙ্কা, আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন নামে পরিচিত সাগরস্রোত ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন হলে ইউরোপজুড়ে শীত আরও তীব্র হতে পারে, আবার আফ্রিকা, ভারত কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার মতো অঞ্চলের বর্ষা ও বৃষ্টিপাতেও বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আইসল্যান্ডের সিদ্ধান্ত দেখিয়ে দিচ্ছে—জলবায়ু সংকট এখন আর শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ফাইল নয়; প্রতিরক্ষা, জরুরি ব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্রনীতির মূল আলোচনাতেও এটি জায়গা করে নিচ্ছে।

আইসল্যান্ডের জলবায়ুমন্ত্রী অন্যান্য দেশকেও আহ্বান জানিয়েছেন নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে অনুরূপ বিশ্লেষণ যুক্ত করতে, কারণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, খাদ্য আমদানি, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি এমনকি সীমান্ত–রাজনীতিও জলবায়ু–চাপের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে। সিদ্ধান্তটি এসেছে এমন সময়ে, যখন ব্রাজিলের বেলেং শহরে চলমান কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে ঝড়ঝঞ্ঝা, তাপপ্রবাহ আর বন্যার ক্ষতি সামাল দিতে দরিদ্র দেশগুলোকে কতটা অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে তা নিয়ে কড়া দরকষাকষি চলছে। সেখানে আইসল্যান্ডের এই পদক্ষেপ ধনী দেশগুলোর জন্যও এক ধরনের বার্তা—জলবায়ু সংকট কেবল সমুদ্র–বেষ্টিত ছোট দ্বীপরাষ্ট্র বা উপকূলীয় অঞ্চলের মাথাব্যথা নয়, বরং নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও সরাসরি হুমকি।

জলবায়ু কূটনীতি ও জ্বালানি বাস্তবতার টানাপোড়েন

তবে জলবায়ুকে জাতীয় নিরাপত্তা ভাষায় আনার প্রশ্নে মতভেদও কম নয়। কপ৩০–এ অংশ নেওয়া কিছু নেতার মতে, নিরাপত্তা ফ্রেমিং ব্যবহার করলে প্রতিরক্ষা বাজেট থেকেও জলবায়ু অভিযোজন বা অবকাঠামো সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া সহজ হতে পারে। অন্যদিকে সমালোচকদের আশঙ্কা, এর সুযোগে সীমান্ত আরও কড়া হবে, অভিবাসী বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারি বাড়বে, অথচ মূল সমস্যা—কার্বন নিঃসরণ কমানো—সেখানেই রয়ে যাবে। সম্মেলনে আমাজনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসী প্রতিনিধিরা বন রক্ষা আর ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন, বলেছেন—কাগজে–কলমে প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তাদের কথা খুব কমই শোনা হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বলছে, শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের চাহিদা একেবারে কমে যাবে না; কিছুটা ধীরগতিতে হলেও তা বাড়তেই থাকবে, যা দেখায় অর্থনীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানির শেকড় কত গভীরে গেড়ে বসে আছে। ফলে একদিকে মহাসাগর স্রোত ভেঙে পড়ার মতো ঝুঁকির বৈজ্ঞানিক সতর্কতা, অন্যদিকে দ্রুত ট্রানজিশনে রাজনৈতিক অস্বস্তি আর পুরোনো জ্বালানি ব্যবসার অর্থনৈতিক স্বার্থ—সব মিলিয়ে কপ৩০–এর আলোচনায় স্পষ্ট এক টানাপোড়েন চলছে। আইসল্যান্ডের পদক্ষেপ সেই দ্বন্দ্বের সমাধান না দিলেও অন্তত এতটা বোঝায়—জলবায়ুকে আর দূরের “পরিবেশ সমস্যা” বলে রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই; রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, অর্থনীতি আর নাগরিক জীবনের খুব কেন্দ্রে এখন এই প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে।