১০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাইটাজেনসের বিস্তার

আয়ারল্যান্ডে আতঙ্কের সূচনা

নভেম্বর ২০২৩-এর এক সকালে আয়ারল্যান্ডের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার আসক্তি-সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইমন কিনান একটি ভয়াবহ ফোনকল পান। তাঁকে জানানো হয়, গৃহহীনদের আশ্রয়কেন্দ্র ও হাসপাতালে মানুষ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে শুধু ডাবলিন ও কর্ক শহরেই ৭৭ জন অতিরিক্ত মাত্রায় নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রথমে সন্দেহ করা হয়েছিল ভেজাল হেরোইনকে, কিন্তু পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলো এক নতুন ধরনের মারাত্মক সিনথেটিক মাদক—নাইটাজেনস। এরপর থেকে সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পর্যন্ত সর্বত্র এ মাদক শনাক্ত হতে শুরু করে।

নাইটাজেনস কী?

নাইটাজেনস হলো অপিওয়েড শ্রেণির একটি নতুন গোষ্ঠী। এই পরিবারে আছে মর্ফিন, হেরোইন এবং বহুল পরিচিত ও ভয়ঙ্কর শক্তিশালী ফেন্টানিল। আমেরিকায় শুধু ফেন্টানিলেই প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, নাইটাজেনস হেরোইনের তুলনায় শত শত গুণ বেশি শক্তিশালী হতে পারে, এমনকি কিছু নাইটাজেন ফেন্টানিলের চেয়েও কয়েক ডজন গুণ বেশি ক্ষমতাশালী। সমস্যা হলো, হেরোইন ও ফেন্টানিল চিকিৎসা বিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হওয়ায় সেগুলো নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে, কিন্তু নাইটাজেনস নিয়ে প্রায় কোনো গবেষণাই নেই। তবুও ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

উৎপত্তি ও বৈজ্ঞানিক পটভূমি

নাইটাজেনস প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় না, এগুলো সম্পূর্ণভাবে ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। এর মূল কাঠামো ২-বেঞ্জিল-বেঞ্জিমিডাজোল নামক যৌগ থেকে উদ্ভূত। ১৯৫০-এর দশকে সুইস কোম্পানি কেমিশে ইন্ডাস্ট্রি বেসেল প্রথম এগুলো তৈরি করে সম্ভাব্য ব্যথানাশক হিসেবে। কিন্তু দ্রুত বোঝা যায়, এর চিকিৎসা ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ কার্যকর ডোজ আর প্রাণঘাতী ডোজের মধ্যে পার্থক্য ছিল অত্যন্ত কম। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ইঁদুরের শরীরের প্রতি কেজি ওজনে ২০০ মিলিগ্রাম মর্ফিন প্রাণঘাতী হয়, সেখানে একধরনের নাইটাজেনের ক্ষেত্রে মাত্র ১ মিলিগ্রামই যথেষ্ট। ফলে চিকিৎসা বা পশুচিকিৎসায় কখনোই অনুমোদন পায়নি।

পুনরায় আবির্ভাব

২০১৯ সালে ইউরোপের মাদকবাজারে নজরদারির সময় বিশেষজ্ঞরা ইসোটোনাইটাজেন নামের একটি নাইটাজেন ধরতে সক্ষম হন। এটি সরাসরি ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ থেকে বিক্রি হচ্ছিল। এরপর দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ইউরোপ এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে। মৃত্যুর পরিসংখ্যান খুব একটা নেই, কারণ এখনো এসব শনাক্তকরণ রুটিন প্রক্রিয়ায় হয় না। তবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই ব্রিটেনে অন্তত ৩৩৩ জনের মৃত্যু নাইটাজেনসের সঙ্গে যুক্ত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুন নাইটাজেনস আবিষ্কৃত হচ্ছে, যা নতুন ধরনের ফেন্টানিলের তুলনায়ও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

সরবরাহ-সংকটের প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞানীদের মতে, নাইটাজেনসের এই বিস্তার মূলত সরবরাহ-সংকটের ফল। ২০১০-এর মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকা নতুন ফেন্টানিল ও তার কাঁচামালের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং অন্যান্য দেশকেও একই পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। ২০১৯ সালে চীন সব ধরনের ফেন্টানিলকে নিষিদ্ধ করে। এর ফলে উৎপাদন কমে যায়। ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে আফিম চাষ নিষিদ্ধ করে, যদিও আফগানিস্তান তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদক ছিল। ইউরোপের অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা হেরোইনের সরবরাহ কমে যাওয়ার ভয়ে নাইটাজেনসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।

মানবদেহে প্রভাব

নাইটাজেনস মস্তিষ্কে প্রবেশ করার পর নিউরনের পৃষ্ঠে থাকা ‘মু রিসেপ্টর’-এ বাঁধে। এগুলো ব্যথা কমানোর সংকেত পাঠায়। হেরোইন বা ফেন্টানিলের তুলনায় নাইটাজেনস এ রিসেপ্টরকে আরও কার্যকরভাবে সক্রিয় করে, ফলে কম ডোজেই তীব্র উল্লাস ও ব্যথানাশক প্রভাব তৈরি হয়। কিন্তু একইসঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হয়ে যায়, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হতে পারে।

আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, দেহে প্রবেশ করার পর নাইটাজেনস ভেঙে আরও শক্তিশালী উপাদানে পরিণত হয়। যেমন ইসোটোনাইটাজেন ভেঙে যায় আরও বিপজ্জনক নাইটাজেনে, যা প্রভাবকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ফলে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওভারডোজ মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে যায়। সাধারণত নালোক্সন নামক প্রতিষেধক ব্যবহার করা হয়, কিন্তু নাইটাজেনস ক্ষেত্রে একাধিক ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

ভেজাল ও প্রতারণা

নাইটাজেনস পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় কারণ কম পরিমাণেই বেশি গ্রাহকের চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু ব্যবহারকারীদের জন্য তা মারাত্মক বিপদজনক। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডে যা “চাইনিজ হেরোইন” নামে বিক্রি হচ্ছিল, তাতে একফোঁটাও হেরোইন ছিল না—ছিল শুধুই নাইটাজেনস। ২০২৪ সালে সিডনির একটি সংগীত উৎসবে এমডিএমএ নামে পরিচিত এক্সট্যাসির ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছিল, পরে জানা যায় সেগুলো আসলে নাইটাজেনস।

এমনকি সামান্য পরিমাণ নাইটাজেনস যদি কোকেন বা এক্সট্যাসির মতো মাদকের সঙ্গে মিশে যায়, তাতেও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, বিশেষ করে যাদের শরীরে অপিওয়েড সহ্যক্ষমতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে তরুণরা অনলাইনে একটি ট্যাবলেট কিনে বাড়িতে সেবনের পর প্রাণ হারিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

বিশ্বের বিভিন্ন সরকার নাইটাজেনস নিষিদ্ধ করছে। তবে এর রাসায়নিক গঠন সামান্য পরিবর্তন করলেই নতুন সংস্করণ তৈরি করা যায়, যা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। এজন্য ব্রিটেন ও চীন সম্প্রতি সব ধরনের নাইটাজেনকে একই আইনি শ্রেণিতে ফেলে নিষিদ্ধ করেছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে নতুন ধরনের সিনথেটিক মাদক সামনে আসার ঝুঁকি রয়ে গেছে।

বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী মার্থে ভান্ডেপুটে সতর্ক করেছেন, “আমরা জানিই না, এরপর কী আসছে।”

নাইটাজেনসের বিস্তার

০৫:০৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আয়ারল্যান্ডে আতঙ্কের সূচনা

নভেম্বর ২০২৩-এর এক সকালে আয়ারল্যান্ডের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার আসক্তি-সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ইমন কিনান একটি ভয়াবহ ফোনকল পান। তাঁকে জানানো হয়, গৃহহীনদের আশ্রয়কেন্দ্র ও হাসপাতালে মানুষ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে শুধু ডাবলিন ও কর্ক শহরেই ৭৭ জন অতিরিক্ত মাত্রায় নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রথমে সন্দেহ করা হয়েছিল ভেজাল হেরোইনকে, কিন্তু পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলো এক নতুন ধরনের মারাত্মক সিনথেটিক মাদক—নাইটাজেনস। এরপর থেকে সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পর্যন্ত সর্বত্র এ মাদক শনাক্ত হতে শুরু করে।

নাইটাজেনস কী?

নাইটাজেনস হলো অপিওয়েড শ্রেণির একটি নতুন গোষ্ঠী। এই পরিবারে আছে মর্ফিন, হেরোইন এবং বহুল পরিচিত ও ভয়ঙ্কর শক্তিশালী ফেন্টানিল। আমেরিকায় শুধু ফেন্টানিলেই প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, নাইটাজেনস হেরোইনের তুলনায় শত শত গুণ বেশি শক্তিশালী হতে পারে, এমনকি কিছু নাইটাজেন ফেন্টানিলের চেয়েও কয়েক ডজন গুণ বেশি ক্ষমতাশালী। সমস্যা হলো, হেরোইন ও ফেন্টানিল চিকিৎসা বিজ্ঞানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হওয়ায় সেগুলো নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে, কিন্তু নাইটাজেনস নিয়ে প্রায় কোনো গবেষণাই নেই। তবুও ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

উৎপত্তি ও বৈজ্ঞানিক পটভূমি

নাইটাজেনস প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় না, এগুলো সম্পূর্ণভাবে ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। এর মূল কাঠামো ২-বেঞ্জিল-বেঞ্জিমিডাজোল নামক যৌগ থেকে উদ্ভূত। ১৯৫০-এর দশকে সুইস কোম্পানি কেমিশে ইন্ডাস্ট্রি বেসেল প্রথম এগুলো তৈরি করে সম্ভাব্য ব্যথানাশক হিসেবে। কিন্তু দ্রুত বোঝা যায়, এর চিকিৎসা ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ কার্যকর ডোজ আর প্রাণঘাতী ডোজের মধ্যে পার্থক্য ছিল অত্যন্ত কম। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ইঁদুরের শরীরের প্রতি কেজি ওজনে ২০০ মিলিগ্রাম মর্ফিন প্রাণঘাতী হয়, সেখানে একধরনের নাইটাজেনের ক্ষেত্রে মাত্র ১ মিলিগ্রামই যথেষ্ট। ফলে চিকিৎসা বা পশুচিকিৎসায় কখনোই অনুমোদন পায়নি।

পুনরায় আবির্ভাব

২০১৯ সালে ইউরোপের মাদকবাজারে নজরদারির সময় বিশেষজ্ঞরা ইসোটোনাইটাজেন নামের একটি নাইটাজেন ধরতে সক্ষম হন। এটি সরাসরি ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ থেকে বিক্রি হচ্ছিল। এরপর দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ইউরোপ এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে। মৃত্যুর পরিসংখ্যান খুব একটা নেই, কারণ এখনো এসব শনাক্তকরণ রুটিন প্রক্রিয়ায় হয় না। তবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জানিয়েছে, শুধু ২০২৪ সালেই ব্রিটেনে অন্তত ৩৩৩ জনের মৃত্যু নাইটাজেনসের সঙ্গে যুক্ত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর নতুন নাইটাজেনস আবিষ্কৃত হচ্ছে, যা নতুন ধরনের ফেন্টানিলের তুলনায়ও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

সরবরাহ-সংকটের প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞানীদের মতে, নাইটাজেনসের এই বিস্তার মূলত সরবরাহ-সংকটের ফল। ২০১০-এর মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকা নতুন ফেন্টানিল ও তার কাঁচামালের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং অন্যান্য দেশকেও একই পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। ২০১৯ সালে চীন সব ধরনের ফেন্টানিলকে নিষিদ্ধ করে। এর ফলে উৎপাদন কমে যায়। ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে আফিম চাষ নিষিদ্ধ করে, যদিও আফগানিস্তান তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদক ছিল। ইউরোপের অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা হেরোইনের সরবরাহ কমে যাওয়ার ভয়ে নাইটাজেনসের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে।

মানবদেহে প্রভাব

নাইটাজেনস মস্তিষ্কে প্রবেশ করার পর নিউরনের পৃষ্ঠে থাকা ‘মু রিসেপ্টর’-এ বাঁধে। এগুলো ব্যথা কমানোর সংকেত পাঠায়। হেরোইন বা ফেন্টানিলের তুলনায় নাইটাজেনস এ রিসেপ্টরকে আরও কার্যকরভাবে সক্রিয় করে, ফলে কম ডোজেই তীব্র উল্লাস ও ব্যথানাশক প্রভাব তৈরি হয়। কিন্তু একইসঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হয়ে যায়, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হতে পারে।

আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, দেহে প্রবেশ করার পর নাইটাজেনস ভেঙে আরও শক্তিশালী উপাদানে পরিণত হয়। যেমন ইসোটোনাইটাজেন ভেঙে যায় আরও বিপজ্জনক নাইটাজেনে, যা প্রভাবকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ফলে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওভারডোজ মোকাবিলা আরও কঠিন হয়ে যায়। সাধারণত নালোক্সন নামক প্রতিষেধক ব্যবহার করা হয়, কিন্তু নাইটাজেনস ক্ষেত্রে একাধিক ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

ভেজাল ও প্রতারণা

নাইটাজেনস পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় কারণ কম পরিমাণেই বেশি গ্রাহকের চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু ব্যবহারকারীদের জন্য তা মারাত্মক বিপদজনক। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডে যা “চাইনিজ হেরোইন” নামে বিক্রি হচ্ছিল, তাতে একফোঁটাও হেরোইন ছিল না—ছিল শুধুই নাইটাজেনস। ২০২৪ সালে সিডনির একটি সংগীত উৎসবে এমডিএমএ নামে পরিচিত এক্সট্যাসির ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছিল, পরে জানা যায় সেগুলো আসলে নাইটাজেনস।

এমনকি সামান্য পরিমাণ নাইটাজেনস যদি কোকেন বা এক্সট্যাসির মতো মাদকের সঙ্গে মিশে যায়, তাতেও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, বিশেষ করে যাদের শরীরে অপিওয়েড সহ্যক্ষমতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে তরুণরা অনলাইনে একটি ট্যাবলেট কিনে বাড়িতে সেবনের পর প্রাণ হারিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

বিশ্বের বিভিন্ন সরকার নাইটাজেনস নিষিদ্ধ করছে। তবে এর রাসায়নিক গঠন সামান্য পরিবর্তন করলেই নতুন সংস্করণ তৈরি করা যায়, যা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। এজন্য ব্রিটেন ও চীন সম্প্রতি সব ধরনের নাইটাজেনকে একই আইনি শ্রেণিতে ফেলে নিষিদ্ধ করেছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে নতুন ধরনের সিনথেটিক মাদক সামনে আসার ঝুঁকি রয়ে গেছে।

বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী মার্থে ভান্ডেপুটে সতর্ক করেছেন, “আমরা জানিই না, এরপর কী আসছে।”