০৬:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একজন গবেষক ও চিন্তাবিদের বিদায়

  • Sarakhon Report
  • ০৭:৪২:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 136

বদরুদ্দিন ওমর পরিণত বয়সেই মারা গেছেন। তারপরেও বলতে হবে আরও কিছু দিন তিনি বেঁচে থাকলে দেশের চিন্তাচেতনার জগতে আরও কিছু যোগ করতে পারতেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসবাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্যায়নমুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার মূল্যায়ন অবশ্যই বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায়ও যদি তিনি এটা করতেন তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কণ্ঠ বন্ধ করতেন না।
কারণইতিহাসরাজনৈতিক আন্দোলনস্বাধীনতা আন্দোলনের পথরেখা নিয়ে একটি সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনাসমালোচনা এমনকি তীব্র সমালোচনাও থাকে। কিন্তু কখনও তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় না। বদরুদ্দিন ওমর হয়তো আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে দেখেছেনতার অতিবাম শ্রেণীচেতনা বা বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে। সেটা যে সবাইকে মানতে হবে তা নয়। তবে এগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা হিসেবেই ধরতে হবে। সর্বোপরি মনে রাখতে হবেএগুলো তিনি তাঁর বিশ্বাস অর্থাৎ শ্রেণী চেতনাই সব” সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছেন।
কিন্তু এ সত্য সবাইকে মানতে হবে তিনি কখনও সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় মৌলবাদের পক্ষে ছিলেন না। এবং তিনিই দেশে প্রথম বুদ্ধিজীবী যিনি জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে প্রথম বলেনএই আন্দোলনের ভেতর দিয়ে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। আর যে ছাত্ররা আন্দোলনের নেতা হিসেবে বের হয়ে এসেছে তারাও ধর্মীয় মৌলবাদী।
আবার পাকিস্তান আমলে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের পরে যখন বাঙালি সংস্কৃতির আন্দোলন শুরু হয়যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চিন্তাচেতনাগত ভিত্তি তৈরি হয়এর লিটেরেচারটি তিনিই লিখেছিলেনতাঁর লেখা সংস্কৃতির সংকট” কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ তৈরির অন্যতম ভিত্তি। এই বাঙালি সংস্কৃতির লিটেরেচার লেখার জন্য সেদিন উদ্যোক্তারা অর্থাৎ ওই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী ও বাঙালি সংস্কৃতি কর্মীরা অধ্যাপক আবুল ফজলের মত মানুষের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন তা উল্লেখ না করাই ভালো। কিন্তু সেদিন সে কাজটি বদরুদ্দিন ওমরই করেছিলেন।


তাঁর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যথাভাবে উপস্থিত করা হয়নি ঠিকই তবে তিনি একটি দলিল তো তৈরি করেছেন। এবং এই গবেষণার কাজটি অনেক বড়। যদিও এখানে মূল কাঁচামাল এসেছে তাজউদ্দিন আহমদসহ কয়েক জনের ডায়েরি থেকে। তারপরেও এই মেথডিকাল গবেষণা করার কাজটি সহজ নয়। বাংলাদেশে খুব কম লেখকই এ কাজটি করতে পেরেছেন। সর্বোপরি ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য এটা একটি আকর গ্রন্থ।
বাস্তবে তাঁর মতো গবেষক ও শক্তিশালী ভাষার অধিকারী লেখকযে কোন ভাষায় কম সংখ্যক জন্মান। তিনি যদি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে না জড়াতেনহয়তো জাতি তাঁর কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পেতো। তারপরেও ভবিষ্যতের গবেষকদের ও লেখকদের তাঁকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। বরং শ্রদ্ধার সঙ্গেই তাঁকে স্মরণ করবেচর্চা করবে। অবশ্য এর জন্য আগে প্রয়োজন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সহনশীলউদারআধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।
আর সত্য হলোবর্তমান প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে মনে হয়তাঁর আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল এই দুভাগা দেশে। পাশাপাশি এটাও সত্য স্বাধীনতার ৫৫ বছরে এ দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি যেখানে বদরুদ্দিন ওমরের মতো আরও যারা নানা মতের চিন্তা ও জ্ঞান ধারণ করতেনতাঁদেরকে জাতির স্বার্থে কাজে লাগানো যেত। জাতির জন্য এ অনেক বড় দুর্ভাগ্য। সর্বোপরি তিনি এমন একটা সময় মারা গেলেন যখন দেশের আকাশে সূর্যের আলোর রেখা খুবই ক্ষীণ।

একজন গবেষক ও চিন্তাবিদের বিদায়

০৭:৪২:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বদরুদ্দিন ওমর পরিণত বয়সেই মারা গেছেন। তারপরেও বলতে হবে আরও কিছু দিন তিনি বেঁচে থাকলে দেশের চিন্তাচেতনার জগতে আরও কিছু যোগ করতে পারতেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসবাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্যায়নমুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার মূল্যায়ন অবশ্যই বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায়ও যদি তিনি এটা করতেন তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কণ্ঠ বন্ধ করতেন না।
কারণইতিহাসরাজনৈতিক আন্দোলনস্বাধীনতা আন্দোলনের পথরেখা নিয়ে একটি সমাজে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনাসমালোচনা এমনকি তীব্র সমালোচনাও থাকে। কিন্তু কখনও তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয় না। বদরুদ্দিন ওমর হয়তো আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে দেখেছেনতার অতিবাম শ্রেণীচেতনা বা বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে। সেটা যে সবাইকে মানতে হবে তা নয়। তবে এগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা হিসেবেই ধরতে হবে। সর্বোপরি মনে রাখতে হবেএগুলো তিনি তাঁর বিশ্বাস অর্থাৎ শ্রেণী চেতনাই সব” সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছেন।
কিন্তু এ সত্য সবাইকে মানতে হবে তিনি কখনও সাম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় মৌলবাদের পক্ষে ছিলেন না। এবং তিনিই দেশে প্রথম বুদ্ধিজীবী যিনি জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে প্রথম বলেনএই আন্দোলনের ভেতর দিয়ে মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী হয়েছে। আর যে ছাত্ররা আন্দোলনের নেতা হিসেবে বের হয়ে এসেছে তারাও ধর্মীয় মৌলবাদী।
আবার পাকিস্তান আমলে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের পরে যখন বাঙালি সংস্কৃতির আন্দোলন শুরু হয়যে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চিন্তাচেতনাগত ভিত্তি তৈরি হয়এর লিটেরেচারটি তিনিই লিখেছিলেনতাঁর লেখা সংস্কৃতির সংকট” কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ তৈরির অন্যতম ভিত্তি। এই বাঙালি সংস্কৃতির লিটেরেচার লেখার জন্য সেদিন উদ্যোক্তারা অর্থাৎ ওই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী ও বাঙালি সংস্কৃতি কর্মীরা অধ্যাপক আবুল ফজলের মত মানুষের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন তা উল্লেখ না করাই ভালো। কিন্তু সেদিন সে কাজটি বদরুদ্দিন ওমরই করেছিলেন।


তাঁর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যথাভাবে উপস্থিত করা হয়নি ঠিকই তবে তিনি একটি দলিল তো তৈরি করেছেন। এবং এই গবেষণার কাজটি অনেক বড়। যদিও এখানে মূল কাঁচামাল এসেছে তাজউদ্দিন আহমদসহ কয়েক জনের ডায়েরি থেকে। তারপরেও এই মেথডিকাল গবেষণা করার কাজটি সহজ নয়। বাংলাদেশে খুব কম লেখকই এ কাজটি করতে পেরেছেন। সর্বোপরি ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য এটা একটি আকর গ্রন্থ।
বাস্তবে তাঁর মতো গবেষক ও শক্তিশালী ভাষার অধিকারী লেখকযে কোন ভাষায় কম সংখ্যক জন্মান। তিনি যদি বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে না জড়াতেনহয়তো জাতি তাঁর কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পেতো। তারপরেও ভবিষ্যতের গবেষকদের ও লেখকদের তাঁকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই। বরং শ্রদ্ধার সঙ্গেই তাঁকে স্মরণ করবেচর্চা করবে। অবশ্য এর জন্য আগে প্রয়োজন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সহনশীলউদারআধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া।
আর সত্য হলোবর্তমান প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে মনে হয়তাঁর আরও কিছুদিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল এই দুভাগা দেশে। পাশাপাশি এটাও সত্য স্বাধীনতার ৫৫ বছরে এ দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি যেখানে বদরুদ্দিন ওমরের মতো আরও যারা নানা মতের চিন্তা ও জ্ঞান ধারণ করতেনতাঁদেরকে জাতির স্বার্থে কাজে লাগানো যেত। জাতির জন্য এ অনেক বড় দুর্ভাগ্য। সর্বোপরি তিনি এমন একটা সময় মারা গেলেন যখন দেশের আকাশে সূর্যের আলোর রেখা খুবই ক্ষীণ।