সারসংক্ষেপ
- পাইপলাইন প্রতিষ্ঠান ট্রান্সনেফট তেল সংরক্ষণে সীমাবদ্ধতা দিয়েছে
- তেল কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে যে কম তেল গ্রহণ করতে হতে পারে
- ইউক্রেন রাশিয়ার বন্দর ও রিফাইনারিগুলোতে ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে
- ট্রান্সনেফট এসব খবরকে ‘ভুয়া’ দাবি করছে
তেল উৎপাদন কমার শঙ্কা
রাশিয়ার প্রধান পাইপলাইন কোম্পানি ট্রান্সনেফট তেল উৎপাদকদের সতর্ক করেছে যে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রপ্তানি বন্দর ও রিফাইনারি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন কমতে পারে। মঙ্গলবার শিল্প মহল থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তবে ট্রান্সনেফট তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এই তথ্য ‘ভুয়া’। তাদের দাবি, এটি পশ্চিমাদের তথ্যযুদ্ধের অংশ, যা রাশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হচ্ছে।
ইউক্রেনের হামলার উদ্দেশ্য
আগস্ট থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে। এর লক্ষ্য মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টা দুর্বল করা এবং রাশিয়ার আয়ের উৎস সীমিত করা, যেহেতু শান্তি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অর্থনীতিতে তেলের গুরুত্ব
গত এক দশকে রাশিয়ার ফেডারেল বাজেট আয়ের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক এসেছে তেল ও গ্যাস খাত থেকে। তাই সরকার পরিচালনায় এই খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় অন্তত ১০টি রিফাইনারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে এক পর্যায়ে রাশিয়ার শোধন ক্ষমতা এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত নেমে যায়। এছাড়া বাল্টিক সাগরের উস্ত-লুগা ও প্রিমর্স্ক বন্দরও আক্রান্ত হয়।
সংরক্ষণে সীমাবদ্ধতা
রাশিয়ার উত্তোলিত তেলের ৮০ শতাংশের বেশি পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ট্রান্সনেফট সম্প্রতি সংরক্ষণ সুবিধা সীমিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ক্ষতি বাড়তে থাকলে আরও কম তেল গ্রহণ করতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হামলা অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের ৯ শতাংশ সরবরাহকারী রাশিয়াকে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হতে হবে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ট্রান্সনেফট জানিয়েছে, অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে এমন খবর প্রচার তাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে। তারা এটিকে পশ্চিমাদের তথ্যমূলক যুদ্ধের অংশ বলে অভিহিত করেছে।
জেলেনস্কির মন্তব্য
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এসব হামলাকে রাশিয়ার তেল খাতের জন্য সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর ‘নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনীয় ড্রোন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেলবন্দর প্রিমর্স্কে হামলা চালায়। এই বন্দর দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল রপ্তানি করতে পারে, যা রাশিয়ার মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশেরও বেশি। হামলার কারণে কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
শনিবার থেকে আংশিক কার্যক্রম শুরু হলেও সম্পূর্ণ মেরামত কবে হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
রপ্তানি সক্ষমতায় চাপ
আগস্টে উস্ত-লুগা টার্মিনালে হামলার পর রাশিয়ার রপ্তানি সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় সংরক্ষণে সীমাবদ্ধতা উৎপাদন বৃদ্ধির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ওপেক প্লাসের সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী সেপ্টেম্বরেই রাশিয়ার উৎপাদন কোটার বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত সংরক্ষণ ক্ষমতা ও রিফাইনারি ক্ষতির কারণে এ লক্ষ্য অর্জন ঝুঁকিতে পড়েছে।
মার্কিন ব্যাংক জেপি মর্গান জানিয়েছে, রাশিয়ার উৎপাদন বাড়ানোর সক্ষমতা হুমকির মুখে। গোল্ডম্যান স্যাকসও বলেছে, রিফাইনারি ক্ষতি উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে। তবে দুই ব্যাংকের মতে, এশীয় ক্রেতাদের চাহিদার কারণে উৎপাদন খুব বেশি কমবে না।