০১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’ মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মামলা বোয়িং ও হানিওয়েলের বিরুদ্ধে “ভারতের আরবান কোম্পানির শেয়ার বাজারে অভিষেক: প্রথম দিনেই ৭৪% উল্লম্ফন, বাজারমূল্য ছুঁল ৩ বিলিয়ন ডলার” ভারতের চালের মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ, গমেও চার বছরের রেকর্ড ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত: এই সপ্তাহান্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জাপান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না যে সাক্ষাৎকারটি নেয়নি মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান

জুলাই শহীদ বা জুলাই যোদ্ধা আসলে কারা, তালিকা নিয়ে কেন বিতর্ক উঠেছে?

গণঅভ্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাঁচই অগাস্ট বিকেলে যশোরের একটি অভিজাত হোটেলে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যেখানে একজন বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন নিহতদের মধ্যে অনেকে ওই হোটেলটিতে হামলা করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন।

এদের মধ্যে ২৪ জনের নাম অন্তর্ভূক্ত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই শহীদের তালিকায়। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে একজনের নাম বাতিল করে বাকিদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই শুরু করেছে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচই অগাস্ট বিকেলে হামলা হয় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ওই হোটেলে। ভাঙচুর-লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ১৪ তলা ভবনটিতে।

সেদিন ওই এলাকায় কর্মরত ছিলেন এমন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের খবরে শহরের নানা প্রান্তে মিছিল বেরিয়েছিল। হামলা, ভাঙচুরও চালানো হয়েছিল অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী জানান, “দড়াটানা থেকে শহরের গাড়িখানা মোড়ে আসা একটি মিছিলে মোটর বাইকে চড়ে কয়েকজন অংশ নেন। হোটেলটির সামনে আসতেই দেখলাম, ওই মোটর বাইকের কয়জন নেমে হোটেলের মধ্যে ঢুকে গেলো। এরপরই বাইরে থাকা উৎসুক অনেকেই হোটেলে ঢুকে চেয়ার, টেবিল মাথায় নিয়ে বের হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আগুন দেয়ার পর শুরুতে ফায়ার সার্ভিসকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে, ভিতরে নিজেদের লোক আটকা পড়েছে শুনে কয়েক ঘণ্টা পর তারাই ফায়ার সার্ভিসকে প্রবেশের জায়গা করে দেয়।”

এক্ষেত্রে এমন ঘটনায় যারা আহত বা নিহত হয়েছেন তাদেরকে জুলাই যোদ্ধা বা শহীদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা কতটা ন্যায়সঙ্গত? তালিকা প্রকাশের পর এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কেবল যশোরের এই ঘটনা নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতের তালিকায় থাকা অনেকের নাম নিয়ে সম্প্রতি আবারো প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে অংশ না নেওয়া অনেকের নামই রাখা হয়েছে এই তালিকায়। যারা সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন।

এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসে ২০ হাজার করে টাকা ভাতা পাবেন। এসব পরিবারকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

অন্যদিকে আহত তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ক্যাটেগরি অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা পাবেন। এছাড়া অঙ্গহানি হলে সেজন্য এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ সহায়তা পাবেন। এছাড়া চিকিৎসা সহায়তা, সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার, পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর ওই হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে আবারো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

নানা আলোচনা-সমালোচনার থাকায় জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা পুনরায় যাচাই করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সরকার নিজেই এই তালিকা করলেও সেখানে জুলাই আন্দোলনে অংশ না নিয়েও যাদের নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে সরকার।

তালিকা নিয়ে প্রশ্ন কেনো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

৮৩৪ জনের নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে সেখানে যুক্ত করা হয় আরও ১০ জনের নাম। গত ৩০শে জুন প্রকাশিত সরকারি গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ছিল ৮৪৪ জন।

তবে সরাসরি জুলাই আন্দোলনে যুক্ত না থাকা এবং চারজনের নাম গেজেটে দুইবার উল্লেখ থাকায় গত তেসরা অগাস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই তালিকা থেকে আটজনের নাম বাতিল করে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন।

অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের প্রথম তালিকায় ১২ হাজার ৪৩ জনের নাম থাকলেও গত পহেলা জুলাই আরও ১ হাজার ৭৫৭ জনের নাম যুক্ত করা হয়। সবশেষ সরকারি গেজেট অনুযায়ী, বর্তমানে আহত ব্যক্তিদের মোট সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০০ জন।

সরকারি তরফে যাচাই বাছাই করে এই তালিকা তৈরি করা হলেও সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, অভ্যুত্থানে অংশ না নিয়েও অনেকের নাম এখনো রয়ে গেছে এই তালিকায়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক ই আজম বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মি. আজম বলছেন, কারা এই তালিকায় থাকতে পারবেন সে বিষয়ে অধ্যাদেশে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যোদ্ধা ও শহীদ পরিচয় কীভাবে সংজ্ঞায়িত হবে সে বিষয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে।

“জুলাই যোদ্ধা” অর্থ জুলাই গণ অভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা উক্ত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আক্রমণে আহত ছাত্র-জনতা।

এছাড়া “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ” অর্থ “তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা উক্ত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আক্রমণে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি।”

“এর বাইরে কারো এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই,” বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

তবে প্রকাশিত তালিকায় এর বাইরেও অনেকের নামই রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

তালিকা নিয়ে সরকার যা বলছে

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত এবং নিহতদের তালিকা নিয়ে প্রশ্নটি নতুন নয়। নানা মহলের সমালোচনার মুখে এর আগে শহীদের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম বাতিলও করা হয়েছিল।

গত ২২শে জুন তালিকা পুনরায় যাচাইয়ে জেলা প্রশাসকদের একটি চিঠি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের এই মন্ত্রণালয়টি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের তালিকা, সহায়তা ও ভাতাসহ সকল দায়িত্বে রয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, গেজেটে অন্তর্ভুক্ত শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র এবং আহত ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু “আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও অনেকের নাম তালিকায় এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য তালিকা আবার যাচাই করে প্রকৃত শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের নাম নিশ্চিত করতে” নির্দেশ দেওয়া হয়।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “মিনিস্ট্রি থেকে আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আবারও আমরা সর্বশেষ যে পরিপত্র আছে তার আলোকে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আমরা প্রতিবেদন পাঠানোর পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”

এদিকে এই তালিকা নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যেখানে ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়ে পুনরায় যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া “ভূয়া প্রমাণিত হলে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে” বলেও জানানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফারুক ই আজম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা চলমান প্রক্রিয়া। জুলাই শহীদদের প্রত্যেকের ব্যাপারেই পৃথকভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। একইভাবে জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করা হবে।”

যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব তালিকায় নাম উঠিয়েছেন তাদেরকে দেয়া সব অর্থ সহায়তা ফেরত নেওয়া হবে বলেও জানান মি. আজম।

BBC News বাংলা

বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’

জুলাই শহীদ বা জুলাই যোদ্ধা আসলে কারা, তালিকা নিয়ে কেন বিতর্ক উঠেছে?

১১:৩৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গণঅভ্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাঁচই অগাস্ট বিকেলে যশোরের একটি অভিজাত হোটেলে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যেখানে একজন বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন নিহতদের মধ্যে অনেকে ওই হোটেলটিতে হামলা করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন।

এদের মধ্যে ২৪ জনের নাম অন্তর্ভূক্ত হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই শহীদের তালিকায়। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে একজনের নাম বাতিল করে বাকিদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই শুরু করেছে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচই অগাস্ট বিকেলে হামলা হয় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ওই হোটেলে। ভাঙচুর-লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ১৪ তলা ভবনটিতে।

সেদিন ওই এলাকায় কর্মরত ছিলেন এমন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের খবরে শহরের নানা প্রান্তে মিছিল বেরিয়েছিল। হামলা, ভাঙচুরও চালানো হয়েছিল অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী জানান, “দড়াটানা থেকে শহরের গাড়িখানা মোড়ে আসা একটি মিছিলে মোটর বাইকে চড়ে কয়েকজন অংশ নেন। হোটেলটির সামনে আসতেই দেখলাম, ওই মোটর বাইকের কয়জন নেমে হোটেলের মধ্যে ঢুকে গেলো। এরপরই বাইরে থাকা উৎসুক অনেকেই হোটেলে ঢুকে চেয়ার, টেবিল মাথায় নিয়ে বের হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আগুন দেয়ার পর শুরুতে ফায়ার সার্ভিসকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে, ভিতরে নিজেদের লোক আটকা পড়েছে শুনে কয়েক ঘণ্টা পর তারাই ফায়ার সার্ভিসকে প্রবেশের জায়গা করে দেয়।”

এক্ষেত্রে এমন ঘটনায় যারা আহত বা নিহত হয়েছেন তাদেরকে জুলাই যোদ্ধা বা শহীদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা কতটা ন্যায়সঙ্গত? তালিকা প্রকাশের পর এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কেবল যশোরের এই ঘটনা নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতের তালিকায় থাকা অনেকের নাম নিয়ে সম্প্রতি আবারো প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে অংশ না নেওয়া অনেকের নামই রাখা হয়েছে এই তালিকায়। যারা সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন।

এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসে ২০ হাজার করে টাকা ভাতা পাবেন। এসব পরিবারকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

অন্যদিকে আহত তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা ক্যাটেগরি অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাতা পাবেন। এছাড়া অঙ্গহানি হলে সেজন্য এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ সহায়তা পাবেন। এছাড়া চিকিৎসা সহায়তা, সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার, পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর ওই হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে আবারো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

নানা আলোচনা-সমালোচনার থাকায় জুলাই যোদ্ধা ও শহীদদের তালিকা পুনরায় যাচাই করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সরকার নিজেই এই তালিকা করলেও সেখানে জুলাই আন্দোলনে অংশ না নিয়েও যাদের নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে সরকার।

তালিকা নিয়ে প্রশ্ন কেনো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

৮৩৪ জনের নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে সেখানে যুক্ত করা হয় আরও ১০ জনের নাম। গত ৩০শে জুন প্রকাশিত সরকারি গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ছিল ৮৪৪ জন।

তবে সরাসরি জুলাই আন্দোলনে যুক্ত না থাকা এবং চারজনের নাম গেজেটে দুইবার উল্লেখ থাকায় গত তেসরা অগাস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই তালিকা থেকে আটজনের নাম বাতিল করে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন।

অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের প্রথম তালিকায় ১২ হাজার ৪৩ জনের নাম থাকলেও গত পহেলা জুলাই আরও ১ হাজার ৭৫৭ জনের নাম যুক্ত করা হয়। সবশেষ সরকারি গেজেট অনুযায়ী, বর্তমানে আহত ব্যক্তিদের মোট সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০০ জন।

সরকারি তরফে যাচাই বাছাই করে এই তালিকা তৈরি করা হলেও সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, অভ্যুত্থানে অংশ না নিয়েও অনেকের নাম এখনো রয়ে গেছে এই তালিকায়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফারুক ই আজম বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মি. আজম বলছেন, কারা এই তালিকায় থাকতে পারবেন সে বিষয়ে অধ্যাদেশে স্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যোদ্ধা ও শহীদ পরিচয় কীভাবে সংজ্ঞায়িত হবে সে বিষয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এ সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে।

“জুলাই যোদ্ধা” অর্থ জুলাই গণ অভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা উক্ত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আক্রমণে আহত ছাত্র-জনতা।

এছাড়া “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ” অর্থ “তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা উক্ত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আক্রমণে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি।”

“এর বাইরে কারো এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই,” বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

তবে প্রকাশিত তালিকায় এর বাইরেও অনেকের নামই রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

তালিকা নিয়ে সরকার যা বলছে

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত এবং নিহতদের তালিকা নিয়ে প্রশ্নটি নতুন নয়। নানা মহলের সমালোচনার মুখে এর আগে শহীদের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম বাতিলও করা হয়েছিল।

গত ২২শে জুন তালিকা পুনরায় যাচাইয়ে জেলা প্রশাসকদের একটি চিঠি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের এই মন্ত্রণালয়টি জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের তালিকা, সহায়তা ও ভাতাসহ সকল দায়িত্বে রয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, গেজেটে অন্তর্ভুক্ত শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র এবং আহত ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু “আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও অনেকের নাম তালিকায় এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য তালিকা আবার যাচাই করে প্রকৃত শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের নাম নিশ্চিত করতে” নির্দেশ দেওয়া হয়।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “মিনিস্ট্রি থেকে আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আবারও আমরা সর্বশেষ যে পরিপত্র আছে তার আলোকে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আমরা প্রতিবেদন পাঠানোর পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”

এদিকে এই তালিকা নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যেখানে ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়ে পুনরায় যাচাইয়ের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া “ভূয়া প্রমাণিত হলে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে” বলেও জানানো হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফারুক ই আজম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা চলমান প্রক্রিয়া। জুলাই শহীদদের প্রত্যেকের ব্যাপারেই পৃথকভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। একইভাবে জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করা হবে।”

যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব তালিকায় নাম উঠিয়েছেন তাদেরকে দেয়া সব অর্থ সহায়তা ফেরত নেওয়া হবে বলেও জানান মি. আজম।

BBC News বাংলা