০৫:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে তদন্ত বিস্তৃত করল দক্ষিণ কোরিয়া প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪০) শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা ইভি আমদানি বাড়ায় মানদণ্ড কঠোর করছে ভিয়েতনাম মুদ্রাস্ফীতি কমলেও সুদহার নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা মরুভূমিতে হঠাৎ বন্যা: ওমানে প্রাণঘাতী বৃষ্টির নতুন বাস্তবতা চীনের বিনিয়োগে ঐতিহাসিক মোড়, তিন দশকের ধারাবাহিকতা ভাঙার মুখে অর্থনীতি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা প্রত্যাহারের দাবি সম্পাদক পরিষদের সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর পাঁচ দিনের রিমান্ডে

মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান

নির্বাচনী ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো

প্রায় এক বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জীবনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ধাক্কা খান। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং প্রথমবারের মতো জোট সরকার গঠন করতে হয়। তখনই প্রশ্ন ওঠে, ৭৫ বছর বয়সে পৌঁছাতে যাওয়া মোদি কি অবসর নেবেন? বিজেপিতে এই বয়সটিকে অনেক সময় অনানুষ্ঠানিক অবসরের সীমা ধরা হয়।

মার্কিন চাপ ও মোদির বিব্রতকর পরিস্থিতি

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করেন। পরে উভয়পক্ষ সম্পর্ক মেরামতে উদ্যোগী হলেও এটি মোদির জন্য বড় ধরনের বিব্রতকর ঘটনা ছিল। কারণ তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন।

জন্মদিনে শক্ত অবস্থান

তবে ৭৫তম জন্মদিনে মোদির অবস্থান অনেকটাই স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে। তিনি জোটসঙ্গীদের আস্থা টেনে নিয়েছেন এবং তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করার পথে রয়েছেন। এমনকি ২০২৯ সালেও নির্বাচনে লড়ার আইনি কোনো বাধা নেই।

দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ মিলান বৈষ্ণবের মতে, উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা কেবল গুজব। বিজেপির ভেতরে মোদির বাইরে অন্য কোনো শক্তিশালী কেন্দ্র নেই। তিনি দলটিকে নিজের ছাঁচে রূপ দিয়েছেন।

একের পর এক সংকটেও অটল

নির্বাচনী ধাক্কা, পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘাত, দুর্বল অর্থনীতি—সব মিলিয়ে নানা সংকটেও মোদি ক্ষমতার দড়ি শক্ত করে ধরে রেখেছেন। রুপির দরপতন, শেয়ারবাজারে ধীর গতি ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে।

আরএসএস-এর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সম্প্রতি বলেছিলেন, নেতাদের ৭৫ বছরে অবসর নেওয়া উচিত। এতে মোদির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়। যদিও পরে তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করেন। আরএসএস মোদিকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে না, কারণ এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে অভ্যন্তরীণ পরামর্শে তাদের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিজেপি সভাপতি নির্বাচনও এ কারণে বিলম্বিত হয়েছে।

জোট রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার

সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর মোদি জোটসঙ্গীদের মন্ত্রিত্ব ও প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে পাশে রেখেছেন। তিনি এবার অর্থনৈতিক নীতি প্রাধান্য দিয়েছেন—আয়কর কমানো ও ভ্যাট ছাড় দিয়েছেন যাতে শুল্কের প্রভাব কমানো যায়।

সমর্থন এখনো উচ্চস্তরে

এক জরিপে দেখা গেছে, আগস্টে ৫৮ শতাংশ মানুষ মোদির কর্মক্ষমতাকে ভালো বলেছেন, যা আগের বছরের সঙ্গে প্রায় সমান। ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ দিল্লির অভ্যন্তরে উল্টো মোদিকে দৃঢ় নেতার ভাবমূর্তি দিয়েছে।

চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাবনা

ভারতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের কোনো সীমা নেই। অনেকেই মনে করেন, সুস্থ থাকলে ২০২৯ সালে চতুর্থবার লড়বেন মোদি। যদিও তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি, তবে ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করেছেন।

মোদির বয়স ও অর্থনৈতিক চাপে উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা বাড়লেও, দল ও জোটের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ অটুট। আরএসএস-এর সঙ্গে টানাপোড়েন থাকলেও তারা মোদিকেই সমর্থন করছে। সমালোচনা ও সংকট সত্ত্বেও মোদি এখনো ভারতের প্রধান শক্তি হিসেবে অটল অবস্থান ধরে রেখেছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে তদন্ত বিস্তৃত করল দক্ষিণ কোরিয়া

মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান

১২:২৫:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নির্বাচনী ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো

প্রায় এক বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জীবনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ধাক্কা খান। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং প্রথমবারের মতো জোট সরকার গঠন করতে হয়। তখনই প্রশ্ন ওঠে, ৭৫ বছর বয়সে পৌঁছাতে যাওয়া মোদি কি অবসর নেবেন? বিজেপিতে এই বয়সটিকে অনেক সময় অনানুষ্ঠানিক অবসরের সীমা ধরা হয়।

মার্কিন চাপ ও মোদির বিব্রতকর পরিস্থিতি

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে মন্তব্য করেন। পরে উভয়পক্ষ সম্পর্ক মেরামতে উদ্যোগী হলেও এটি মোদির জন্য বড় ধরনের বিব্রতকর ঘটনা ছিল। কারণ তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিলেন।

জন্মদিনে শক্ত অবস্থান

তবে ৭৫তম জন্মদিনে মোদির অবস্থান অনেকটাই স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে। তিনি জোটসঙ্গীদের আস্থা টেনে নিয়েছেন এবং তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করার পথে রয়েছেন। এমনকি ২০২৯ সালেও নির্বাচনে লড়ার আইনি কোনো বাধা নেই।

দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা

কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের বিশেষজ্ঞ মিলান বৈষ্ণবের মতে, উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা কেবল গুজব। বিজেপির ভেতরে মোদির বাইরে অন্য কোনো শক্তিশালী কেন্দ্র নেই। তিনি দলটিকে নিজের ছাঁচে রূপ দিয়েছেন।

একের পর এক সংকটেও অটল

নির্বাচনী ধাক্কা, পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের সংঘাত, দুর্বল অর্থনীতি—সব মিলিয়ে নানা সংকটেও মোদি ক্ষমতার দড়ি শক্ত করে ধরে রেখেছেন। রুপির দরপতন, শেয়ারবাজারে ধীর গতি ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে।

আরএসএস-এর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সম্প্রতি বলেছিলেন, নেতাদের ৭৫ বছরে অবসর নেওয়া উচিত। এতে মোদির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়। যদিও পরে তিনি মন্তব্য প্রত্যাহার করেন। আরএসএস মোদিকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছে না, কারণ এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে অভ্যন্তরীণ পরামর্শে তাদের মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিজেপি সভাপতি নির্বাচনও এ কারণে বিলম্বিত হয়েছে।

জোট রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার

সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর মোদি জোটসঙ্গীদের মন্ত্রিত্ব ও প্রকল্পের বরাদ্দ দিয়ে পাশে রেখেছেন। তিনি এবার অর্থনৈতিক নীতি প্রাধান্য দিয়েছেন—আয়কর কমানো ও ভ্যাট ছাড় দিয়েছেন যাতে শুল্কের প্রভাব কমানো যায়।

সমর্থন এখনো উচ্চস্তরে

এক জরিপে দেখা গেছে, আগস্টে ৫৮ শতাংশ মানুষ মোদির কর্মক্ষমতাকে ভালো বলেছেন, যা আগের বছরের সঙ্গে প্রায় সমান। ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ দিল্লির অভ্যন্তরে উল্টো মোদিকে দৃঢ় নেতার ভাবমূর্তি দিয়েছে।

চতুর্থ মেয়াদের সম্ভাবনা

ভারতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের কোনো সীমা নেই। অনেকেই মনে করেন, সুস্থ থাকলে ২০২৯ সালে চতুর্থবার লড়বেন মোদি। যদিও তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি, তবে ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করেছেন।

মোদির বয়স ও অর্থনৈতিক চাপে উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা বাড়লেও, দল ও জোটের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ অটুট। আরএসএস-এর সঙ্গে টানাপোড়েন থাকলেও তারা মোদিকেই সমর্থন করছে। সমালোচনা ও সংকট সত্ত্বেও মোদি এখনো ভারতের প্রধান শক্তি হিসেবে অটল অবস্থান ধরে রেখেছেন।