০১:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই বিশ্বজুড়ে স‍‍ংকট দেখা দিয়েছে রেয়ার আর্থের মূল ধাতু ইয়ট্রিয়ামের গাজীপুরে গৃহবধূর গলা-কাটা লাশ উদ্ধার; স্বামী আশঙ্কাজনক রংপুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক সমর্থকের ঢাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. এরশাদ হালিম দুই পুরুষ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পে ৩৫টি ক্রড বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ উদ্ধার ইরান ও কাতারের পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ বাংলাদেশে উৎখাতপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ‘বাংলায়ও জঙ্গলরাজের অবসান হবে’ — মোদি ভারতের বিহার রাজ্যে মোদির জোটের ঐতিহাসিক জয়, বিপর্যস্ত বিরোধীরা

ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত

সারসংক্ষেপ

  • ফেড সুদের হার এক-চতুর্থাংশ শতাংশ কমাল
  • ২০২৫ সালের বাকি সময়ে আরও দুই দফা হার কমানোর ইঙ্গিত
  • নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান বড় কাটছাঁটের পক্ষে ভিন্ন মত দিলেন
  • শ্রমবাজারের ঝুঁকিই মূল আলোচ্য বিষয় ছিল

সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত

ওয়াশিংটন, ১৭ সেপ্টেম্বর – ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের ঝুঁকিতে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। বুধবার তারা ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো সুদের হার কমিয়েছে। মূল হার নামানো হয়েছে এক-চতুর্থাংশ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪.০০%-৪.২৫% সীমায়। নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর বৈঠকেও আরও কাটছাঁট আসতে পারে।

ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, কর্মঘণ্টা কমছে এবং নতুন চাকরির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামলাতেই নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পাওয়েল বলেন, “ঝুঁকিমুক্ত কোনো পথ নেই… আমাদের চোখ রাখতে হবে মুদ্রাস্ফীতির উপর, একইসঙ্গে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যও উপেক্ষা করা যাবে না।”

শ্রমবাজারে উদ্বেগ

পাওয়েল সতর্ক করে বলেন, নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি এখন এতটাই কম যে বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখতে যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সামান্য নিয়োগ দিচ্ছে, ফলে সামান্য ছাঁটাইও দ্রুত বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু ও তরুণ কর্মীরা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক নাটকও কম হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভর্নর লিসা কুককে অপসারণের চেষ্টা চালালেও আদালত তা আটকে দেয়। এর মধ্যে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান স্টিফেন মিরানকে ফেড বোর্ডে নিয়োগ দেন। মঙ্গলবার শপথ নেওয়ার পর মিরান বৈঠকে বড় কাটছাঁটের পক্ষে ভোট দেন। তিনি চান, সুদের হার আরও আধা শতাংশ কমানো হোক। তার জমা দেওয়া প্রক্ষেপণেও দ্রুত বড় হারে কমানোর ইঙ্গিত দেখা যায়।

তবে অন্য ট্রাম্প-নিযুক্ত গভর্নর মিশেল বোউম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার এইবার মূল সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ওয়ালার নিজেও দীর্ঘদিন ধরে শ্রমবাজারে মনোযোগ বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন।

পাওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কেবল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই কাজ করি। আজ আধা শতাংশ কাটছাঁটের ব্যাপক সমর্থন ছিল না।”

মুদ্রাস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

ফেডের নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি থাকবে ৩% পর্যায়ে, যা ২% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পাওয়েল জানান, একবারের কাটছাঁটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সামগ্রিক দিকনির্দেশনা, যা সামান্য দ্রুত গতিতে হারকে নিরপেক্ষ অবস্থায় নামিয়ে আনবে। তিনি বলেন, প্রতিটি বৈঠকে পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ন্যাটিক্সিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফার হজ মনে করেন, ফেড শেষ পর্যন্ত হারকে নিরপেক্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যদিও এতে ২০২৬ পর্যন্ত কিছুটা বেশি মুদ্রাস্ফীতি মেনে নিতে হতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

ফেডের নতুন প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে—

  • মুদ্রাস্ফীতি: ৩%
  • বেকারত্ব: ৪.৫%
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ১.৬% (জুনে ছিল ১.৪%)

নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর শেয়ারবাজার কিছুটা বাড়লেও পরে মিশ্র অবস্থায় বন্ধ হয়। ডলার সামান্য শক্তিশালী হয় এবং বাজারে অক্টোবর বৈঠকে আরেক দফা কাটছাঁটের সম্ভাবনা ৯০%-এর বেশি ধরা হচ্ছে।

কুকও বৈঠকে অংশ নেন এবং সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দেন, যদিও ট্রাম্প তাকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। আদালতের রায়ে আপাতত তিনি নিরাপদ আছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই

ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত

১২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • ফেড সুদের হার এক-চতুর্থাংশ শতাংশ কমাল
  • ২০২৫ সালের বাকি সময়ে আরও দুই দফা হার কমানোর ইঙ্গিত
  • নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান বড় কাটছাঁটের পক্ষে ভিন্ন মত দিলেন
  • শ্রমবাজারের ঝুঁকিই মূল আলোচ্য বিষয় ছিল

সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত

ওয়াশিংটন, ১৭ সেপ্টেম্বর – ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের ঝুঁকিতে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। বুধবার তারা ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো সুদের হার কমিয়েছে। মূল হার নামানো হয়েছে এক-চতুর্থাংশ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪.০০%-৪.২৫% সীমায়। নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর বৈঠকেও আরও কাটছাঁট আসতে পারে।

ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, কর্মঘণ্টা কমছে এবং নতুন চাকরির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামলাতেই নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

পাওয়েল বলেন, “ঝুঁকিমুক্ত কোনো পথ নেই… আমাদের চোখ রাখতে হবে মুদ্রাস্ফীতির উপর, একইসঙ্গে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যও উপেক্ষা করা যাবে না।”

শ্রমবাজারে উদ্বেগ

পাওয়েল সতর্ক করে বলেন, নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি এখন এতটাই কম যে বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখতে যথেষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সামান্য নিয়োগ দিচ্ছে, ফলে সামান্য ছাঁটাইও দ্রুত বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু ও তরুণ কর্মীরা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক নাটকও কম হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভর্নর লিসা কুককে অপসারণের চেষ্টা চালালেও আদালত তা আটকে দেয়। এর মধ্যে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান স্টিফেন মিরানকে ফেড বোর্ডে নিয়োগ দেন। মঙ্গলবার শপথ নেওয়ার পর মিরান বৈঠকে বড় কাটছাঁটের পক্ষে ভোট দেন। তিনি চান, সুদের হার আরও আধা শতাংশ কমানো হোক। তার জমা দেওয়া প্রক্ষেপণেও দ্রুত বড় হারে কমানোর ইঙ্গিত দেখা যায়।

তবে অন্য ট্রাম্প-নিযুক্ত গভর্নর মিশেল বোউম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার এইবার মূল সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ওয়ালার নিজেও দীর্ঘদিন ধরে শ্রমবাজারে মনোযোগ বাড়ানোর পক্ষে বলছিলেন।

পাওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কেবল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই কাজ করি। আজ আধা শতাংশ কাটছাঁটের ব্যাপক সমর্থন ছিল না।”

মুদ্রাস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

ফেডের নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি থাকবে ৩% পর্যায়ে, যা ২% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

পাওয়েল জানান, একবারের কাটছাঁটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সামগ্রিক দিকনির্দেশনা, যা সামান্য দ্রুত গতিতে হারকে নিরপেক্ষ অবস্থায় নামিয়ে আনবে। তিনি বলেন, প্রতিটি বৈঠকে পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ন্যাটিক্সিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টোফার হজ মনে করেন, ফেড শেষ পর্যন্ত হারকে নিরপেক্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাবে, যদিও এতে ২০২৬ পর্যন্ত কিছুটা বেশি মুদ্রাস্ফীতি মেনে নিতে হতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

ফেডের নতুন প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে—

  • মুদ্রাস্ফীতি: ৩%
  • বেকারত্ব: ৪.৫%
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: ১.৬% (জুনে ছিল ১.৪%)

নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর শেয়ারবাজার কিছুটা বাড়লেও পরে মিশ্র অবস্থায় বন্ধ হয়। ডলার সামান্য শক্তিশালী হয় এবং বাজারে অক্টোবর বৈঠকে আরেক দফা কাটছাঁটের সম্ভাবনা ৯০%-এর বেশি ধরা হচ্ছে।

কুকও বৈঠকে অংশ নেন এবং সিদ্ধান্তের পক্ষে ভোট দেন, যদিও ট্রাম্প তাকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। আদালতের রায়ে আপাতত তিনি নিরাপদ আছেন।