০১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
দুই বিচারকের পদত্যাগে পাকিস্তানে সাংবিধানিক সংকট তীব্রতর গভীর অতলে দেশের অর্থনীতি: ইনক্লুসিভ ইলেকশান ছাড়া বের হবার কোন পথ নেই বিশ্বজুড়ে স‍‍ংকট দেখা দিয়েছে রেয়ার আর্থের মূল ধাতু ইয়ট্রিয়ামের গাজীপুরে গৃহবধূর গলা-কাটা লাশ উদ্ধার; স্বামী আশঙ্কাজনক রংপুরে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী শোডাউনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক সমর্থকের ঢাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. এরশাদ হালিম দুই পুরুষ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পে ৩৫টি ক্রড বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ উদ্ধার ইরান ও কাতারের পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ বাংলাদেশে উৎখাতপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ‘বাংলায়ও জঙ্গলরাজের অবসান হবে’ — মোদি

কারখানা ভাঙচুর–মামলায় অর্থনীতিতে সংকট

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভয়ের পরিবেশ

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক মামলা, কারখানা ভাঙচুর, দখল, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যাঁদের অনেকে এখনো ফেরেননি। এর ফলে শিল্পকারখানা স্থবির হয়ে পড়ছে, শ্রমিকরাও পড়ছেন সংকটে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আবারও ব্যবসায়ীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। এটি অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আস্থাহীনতায় বেসরকারি খাত

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্থিরতার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আশা এখন ম্লান। মামলা ও হয়রানির কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে। তাদের মতে, নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ ছাড়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয়। শুধু টাকা থাকলেই বিনিয়োগ হয় না, দরকার পরিবেশ ও আস্থা।”

শিল্পাঞ্চলে সহিংসতা ও ক্ষতি

আগস্টের শুরু থেকে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বিজিএমইএর তথ্যমতে, অন্তত ৪০০টির বেশি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক স্থানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

একজন মালিক বলেন, “কারখানা পাহারা দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি, দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করেছে।”

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, “অনেক মালিক দেশ ছেড়ে গেছেন। আবার অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। নিরাপত্তা, সুদের হার, জ্বালানি সংকটের মতো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ দরকার।”

মামলার খড়্গ ও উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলার বড় অংশই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অসাধু মহল মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে। এতে অর্থনীতির চাকায় বড় বাধা তৈরি হচ্ছে।

বিনিয়োগ স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের সংকট

  • বেকারত্ব: দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার। হার বেড়ে হয়েছে ৪.৬৩ শতাংশ।
  • ঋণপ্রবৃদ্ধি: বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৫২ শতাংশ, যা খুবই কম।
  • আমদানি কমেছে: মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলা ২৫ শতাংশ কমেছে।
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩.৯৭ শতাংশে। আগের বছর ছিল ৪.২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজাহেরি বলেন, “বিনিয়োগ হচ্ছে না, ব্যাংকঋণের চাহিদা নেই, কারখানা বন্ধ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না এলে আস্থা ফিরবে না।”

সরকারের পদক্ষেপ ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা

সরকার ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা মনে করেন, প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দৃশ্যমান বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

তাঁরা দাবি করছেন—

  • হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার
  • কারখানা ও ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা
  • দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি
  • নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান

অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “মামলা ও হয়রানির কারণে উদ্যোক্তারা বড় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি আসছে না।”

বিআইআইএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর মনে করেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা পুনরুদ্ধার। সরকারকে কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে তারা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর।”

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বেসরকারি খাত। এই খাতকে হয়রানি ও মামলার চাপ থেকে মুক্ত করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না করলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত হবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

দুই বিচারকের পদত্যাগে পাকিস্তানে সাংবিধানিক সংকট তীব্রতর

কারখানা ভাঙচুর–মামলায় অর্থনীতিতে সংকট

১১:৩৭:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভয়ের পরিবেশ

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে একের পর এক মামলা, কারখানা ভাঙচুর, দখল, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যাঁদের অনেকে এখনো ফেরেননি। এর ফলে শিল্পকারখানা স্থবির হয়ে পড়ছে, শ্রমিকরাও পড়ছেন সংকটে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আবারও ব্যবসায়ীদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে। এটি অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আস্থাহীনতায় বেসরকারি খাত

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্থিরতার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আশা এখন ম্লান। মামলা ও হয়রানির কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমছে। তাদের মতে, নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ ছাড়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয়। শুধু টাকা থাকলেই বিনিয়োগ হয় না, দরকার পরিবেশ ও আস্থা।”

শিল্পাঞ্চলে সহিংসতা ও ক্ষতি

আগস্টের শুরু থেকে গাজীপুর, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বিজিএমইএর তথ্যমতে, অন্তত ৪০০টির বেশি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক স্থানে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

একজন মালিক বলেন, “কারখানা পাহারা দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি, দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করেছে।”

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, “অনেক মালিক দেশ ছেড়ে গেছেন। আবার অনেককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। নিরাপত্তা, সুদের হার, জ্বালানি সংকটের মতো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ দরকার।”

মামলার খড়্গ ও উদ্দেশ্যমূলক হয়রানি

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব মামলার বড় অংশই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অসাধু মহল মামলা বাণিজ্য শুরু করেছে এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে। এতে অর্থনীতির চাকায় বড় বাধা তৈরি হচ্ছে।

বিনিয়োগ স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানের সংকট

  • বেকারত্ব: দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার। হার বেড়ে হয়েছে ৪.৬৩ শতাংশ।
  • ঋণপ্রবৃদ্ধি: বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৫২ শতাংশ, যা খুবই কম।
  • আমদানি কমেছে: মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলা ২৫ শতাংশ কমেছে।
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৩.৯৭ শতাংশে। আগের বছর ছিল ৪.২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজাহেরি বলেন, “বিনিয়োগ হচ্ছে না, ব্যাংকঋণের চাহিদা নেই, কারখানা বন্ধ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না এলে আস্থা ফিরবে না।”

সরকারের পদক্ষেপ ও ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা

সরকার ব্যবসায়ীদের আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা মনে করেন, প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দৃশ্যমান বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

তাঁরা দাবি করছেন—

  • হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার
  • কারখানা ও ব্যবসায়ীর নিরাপত্তা
  • দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল নীতি
  • নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান

অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “মামলা ও হয়রানির কারণে উদ্যোক্তারা বড় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি আসছে না।”

বিআইআইএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর মনে করেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা পুনরুদ্ধার। সরকারকে কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে তারা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর।”

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বেসরকারি খাত। এই খাতকে হয়রানি ও মামলার চাপ থেকে মুক্ত করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি না করলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত হবে না।