শৈশব ও বেড়ে ওঠা
নাইজেরিয়ার কোগি স্টেটে ১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন মের্সি জনসন। তাঁর পরিবার সামরিক পটভূমি থেকে আসায় শৈশবে তাঁকে বিভিন্ন সামরিক ব্যারাকে ঘুরে ঘুরে থাকতে হয়েছে। কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর শৈশব ছিল স্বপ্নময়। ছোটবেলায় তিনি নাটক ও নাচের প্রতি ভীষণ আগ্রহী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণই তাঁকে অভিনয়ের জগতে প্রবেশের শক্ত ভিত তৈরি করে।
অভিনয়জীবনের শুরু
২০০৪ সালে The Maid চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর অভিনয়জীবন শুরু হয়। ছবিতে একজন গৃহকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি রাতারাতি আলোচনায় আসেন। এই ছবিই তাঁকে Nollywood-এর দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনি একে একে রোমান্স, কমেডি, অ্যাকশন এবং পারিবারিক ড্রামা—প্রতিটি ধারার ছবিতে নিজের স্বকীয়তা প্রমাণ করেন।
অভিনয়শৈলীর বৈশিষ্ট্য
মের্সি জনসনের অভিনয়শৈলীকে বলা হয় স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত। তিনি চরিত্রকে নিজের ভেতরে ধারণ করে সংলাপ বলার জন্য বিখ্যাত। হাস্যরসাত্মক চরিত্র হোক বা দুঃখভরা কোনো ভূমিকা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি আবেগকে দর্শকের মনে পৌঁছে দিতে সক্ষম। তাঁর সংলাপের উচ্চারণে গ্রামীণ ও নগর জীবনের মিল পাওয়া যায়, যা দর্শকের কাছে বাস্তব মনে হয়।
সমালোচক মতামত
চলচ্চিত্র সমালোচকেরা মের্সিকে Nollywood-এর “Versatile Actress” হিসেবে উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে Dumebi the Dirty Girl ছবির পর অনেকেই মন্তব্য করেন—“মের্সি জনসন এমন এক অভিনেত্রী যিনি শুধু চরিত্র অভিনয় করেন না, বরং চরিত্রে বসবাস করেন।” আবার 30 Days in Atlanta ছবির সময় আন্তর্জাতিক সমালোচকরা তাঁর অভিনয়কে আফ্রিকান সিনেমাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার শক্তি হিসেবে আখ্যা দেন।
সামাজিক অবদান
অভিনয়ের বাইরে মের্সি জনসন মানবিক কাজেও সক্রিয়। তিনি নারী শিক্ষা ও শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। তাঁর পরিচালিত দাতব্য ফাউন্ডেশন দুঃস্থ পরিবার ও স্কুলের শিশুদের সহায়তা করে। এছাড়া তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সচেতনতা প্রচারে জড়িত।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
মের্সি জনসন তাঁর ক্যারিয়ারে একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
- • Africa Movie Academy Award: Best Actress in a Leading Role (২০১৩, Dumebi the Dirty Girl)
- • Nollywood Movies Award: Best Actress of the Year
- • Africa Magic Viewers’ Choice Awards: বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন ও বিজয়ী
- • ২০১৮ সালে নাইজেরিয়ান সরকার তাঁকে Most Outstanding Actress হিসেবে সম্মানিত করে।
এই পুরস্কারগুলো তাঁর বহুমুখী প্রতিভা ও ধারাবাহিক সফলতার প্রমাণ বহন করে।
পারিবারিক জীবন
মের্সি জনসন ২০১১ সালে প্রিন্স ওদিয়ানসন ওকোজির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের চারটি সন্তান রয়েছে। ব্যস্ত অভিনয়জীবনের পাশাপাশি তিনি একজন মা ও স্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই তিনি পারিবারিক ছবি ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা ভক্তদের কাছে তাঁকে আরও কাছের মানুষ করে তুলেছে।
Nollywood-এ অবস্থান
Nollywood-এ নারী অভিনেত্রীদের মধ্যে মের্সি জনসনের অবস্থান বিশেষভাবে শক্তিশালী। ২০০০-এর দশকে যখন নাইজেরিয়ার চলচ্চিত্র শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন মের্সির মতো অভিনেত্রীরাই সেই সাফল্যের নেতৃত্ব দেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নারী তারকারাও বাণিজ্যিকভাবে সফল ও শিল্পমানের দিক থেকেও সমান প্রভাবশালী হতে পারেন। তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু নাইজেরিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত।
চারটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র
১. The Maid (২০০৪)
এই ছবিতে একজন অবহেলিত গৃহকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করে মের্সি জনসন Nollywood-এ নিজের পরিচয় তৈরি করেন। ছবিটি তাঁকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়।
২. Dumebi the Dirty Girl (২০১৩)
এটি একটি কমেডি ছবি। এখানে তিনি অদ্ভুত, হাস্যকর কিন্তু প্রাণবন্ত চরিত্রে অভিনয় করে দর্শককে হাসির জোয়ারে ভাসান। এই চরিত্র তাঁকে সেরা কমেডি অভিনেত্রীর খেতাব এনে দেয়।
৩. 30 Days in Atlanta (২০১৪)
আফ্রিকার অন্যতম সফল বাণিজ্যিক সিনেমা। এখানে মের্সির অভিনয় অভিবাসী জীবনের টানাপোড়েন ও সাংস্কৃতিক সংঘাতকে বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তোলে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ে এই ছবির মাধ্যমেই।
৪. Baby Oku in America (২০১১)
একটি পরিবারকেন্দ্রিক কমেডি, যেখানে বিদেশে বসবাসরত নাইজেরিয়ান জীবনের নানা টানাপোড়েন হাস্যরসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। মের্সির প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকদের কাছে ছবিটিকে অবিস্মরণীয় করে তোলে।
মের্সি জনসন Nollywood-এর এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর স্বাভাবিক অভিনয়শৈলী, শক্তিশালী উপস্থিতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও সামাজিক অবদান তাঁকে শুধু একজন তারকাই নয়, বরং সমাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ তিনি শুধু নাইজেরিয়ার নয়, বরং পুরো আফ্রিকান চলচ্চিত্র অঙ্গনের গর্ব।