তরুণদের জন্য নতুন ধারা
দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসংখ্যা দ্রুত বয়সী হয়ে উঠছে, আর অ্যালকোহল পান করার প্রবণতাও কমছে। তবে তরুণ প্রজন্মের পছন্দ-অভ্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে ক্যানজাত ও রেডি-টু-ড্রিংক পানীয়। ওয়াইন শিল্পের এই অংশ অস্বাভাবিক হারে প্রসার ঘটাচ্ছে।
ইগিন সাংকোম টনিকের উত্থান
স্থানীয় ব্র্যান্ড জিনি’স ল্যাম্প সম্প্রতি বাজারে এনেছে ‘ইগিন সাংকোম টনিক’। দেশীয় ধান, আপেল ও আঙুর দিয়ে তৈরি এ পানীয়ের স্বাদ টক-মিষ্টির মাঝামাঝি— অনেকটা হোয়াইট ওয়াইনের মতো। এতে বাড়তি চিনি নেই এবং অ্যালকোহলের মাত্রা মাত্র ৪ শতাংশ, যা বিয়ারের চেয়ে কম।
এই ব্র্যান্ডের গ্লোবাল প্রচারে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বখ্যাত কে-পপ গ্রুপ বিটিএসের সদস্য জিন। তরুণদের মধ্যে কে-পপ সংস্কৃতির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার জোরদার করা হচ্ছে। ফলে বিয়ার ও সোজু শটের প্রচলিত সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে হালকা পানীয়ের সঙ্গে খাবার উপভোগের নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে।
পানীয় সংস্কৃতির বদল
জিনি’স ল্যাম্পের পরিচালক কিম ইয়েসং বলেন, “আমাদের দেশের পানীয় সংস্কৃতি এখন অনেকটাই বদলে গেছে। তরুণরা আর অফিস পার্টিতে গিয়ে পুরোনো ধাঁচের বিয়ার বা সোজু খেতে চায় না। তারা এমন কিছু খুঁজছে যার স্বাদ ভালো এবং ব্র্যান্ড পরিচিতি তাদের কাছে আকর্ষণীয়।”
কিমের মতে, সহজ স্বাদ গ্রাহকদের বারবার এই পানীয় কিনতে উৎসাহিত করবে। বর্তমানে বাজারে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো হুইস্কি-ভিত্তিক হাইবল পানীয়। তবে তিনি মনে করেন, ফলের স্বাদনির্ভর পণ্য তাদের এগিয়ে রাখবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশে অ্যালকোহল সেবনের হার কমছে। বিপরীতে ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে তা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা IWSR জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আগামী বছরগুলোতে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটবে রেডি-টু-ড্রিংক পানীয় খাতে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এ খাতই একমাত্র খাত যেখানে প্রবৃদ্ধি রেকর্ড হয়েছে, বিশেষত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। আগামী পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার ১০ শতাংশ, ভারতের ৬ শতাংশ এবং চীনের ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বাজার ও সম্প্রসারণ
দক্ষিণ কোরিয়ার কনভিনিয়েন্স স্টোরে ৫০০ মিলিলিটারের একটি ক্যান বিক্রি হচ্ছে ৪,৫০০ উনে (প্রায় ৩.২৫ মার্কিন ডলার)। তিন ক্যানের প্যাক পাওয়া যাচ্ছে ১১,০০০ উনে। ইতোমধ্যেই জাপানের লসন কনভিনিয়েন্স স্টোরে এবং হংকংয়ের ৭-ইলেভেনে বিক্রি শুরু হয়েছে। ফিলিপাইনেও বাজারজাতের প্রস্তুতি চলছে।
জাপানে সান্টরি ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের হাইবল এবং ফলের স্বাদের চু-হাই ককটেল এ পানীয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
বার্কলেস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের বিশ্লেষক লরেন্স হোয়ায়াটের মতে, রেডি-টু-ড্রিংক পানীয় জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর সহজতা— ফ্রিজ থেকে বের করেই খাওয়া যায়, আলাদা করে মেশানোর দরকার পড়ে না। তরুণদের জন্য এটি অ্যালকোহলের জগতে প্রবেশের সহজ মাধ্যম হয়ে উঠছে।
তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এ খাত থেকে মুনাফা তুলনামূলকভাবে কম। তার ভাষায়, “স্পিরিট প্রস্তুতকারকদের জন্য রেডি-টু-ড্রিংক খুব লাভজনক নয়। কিন্তু ভোক্তারা যদি এটাই চান, তবে কোম্পানিগুলোকে এ খাতে থাকতে হবেই।”