রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত আগমনকে ঘিরে দিল্লিতে জোরদার কূটনৈতিক নড়াচড়া শুরু হয়েছে। প্রতিরক্ষা, শক্তি ও বাণিজ্য সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাই এই সফরের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির পরিবর্তন ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও দৃশ্যমান করে তুলেছে।
পুতিনের ভারত সফর
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দিল্লিতে দুই দিনের সরকারি সফরে পৌঁছান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে পালাম বিমানবন্দরে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানান এবং নিজ গাড়িতে একসঙ্গে যাত্রা করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীকী বার্তা দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি পুতিনের প্রথম ভারত সফর, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ একটি মুহূর্ত।
পুতিনের সঙ্গে সফরে রয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আন্দ্রে বেলাউসভ। তাদের আলোচনায় বড় সামরিক চুক্তি—বিশেষ করে S-400 আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, পাশাপাশি রাশিয়ার Su-57 পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান উৎপাদনে সম্ভাব্য সহযোগিতা—প্রধান গুরুত্ব পেতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
ভারত-রাশিয়ার বাণিজ্য গত বছর ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও এই প্রবাহ রাশিয়ার পক্ষেই বেশি সুবিধাজনক, কারণ ভারতের সস্তা কাঁচা তেল আমদানি এই ভারসাম্যকে বড়ভাবে নির্ধারণ করছে। ভারতের রফতানি ছিল ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা তুলনামূলকভাবে খুব কম। দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
মোদী-পুতিন বৈঠকে শক্তি বা প্রতিরক্ষা খাতে নতুন বড় চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা—বিশেষ করে ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়টি—জটিলতায় পড়তে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে।

হায়দ্রাবাদ হাউসে কূটনৈতিক অভ্যর্থনা
রুশ প্রেসিডেন্টকে ভারতের প্রধান কূটনৈতিক কেন্দ্র—ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউসে—স্বাগত জানানো হবে। একসময় হায়দ্রাবাদের নবাবদের বাসভবন এই প্রাসাদ এখন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফর, বৈঠক ও কূটনৈতিক আয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
হায়দ্রাবাদ হাউসের স্থাপত্যে ইউরোপীয় ও মুঘল নকশার মিশ্রণ দেখা যায়। স্থপতি এডউইন লুটিয়েন্স ১৯২০-এর দশকে এর নকশা নির্মাণ করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর এই ভবনটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, শি চিনপিংসহ বহু বিশ্বনেতা এখানকার আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের কূটনৈতিক গুরুত্ব
পুতিনের এই সফর দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করছে। বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে হায়দ্রাবাদ হাউসে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়—ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও ভারসাম্যেরও প্রতীক।
#পুতিন_মোদী_সাক্ষাৎ #ভারত_রাশিয়া_সম্পর্ক #কূটনীতি #প্রতিরক্ষা_চুক্তি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















