ভালোবাসার আগে অর্থনীতি
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিয়ে ছিল মূলত অর্থনৈতিক চুক্তি। পরিবার গড়ার মাধ্যমে আর্থিক স্থিতি ও উন্নতির সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণরা বলছে, আর্থিক নিরাপত্তা আর বিয়ের পর আসা বিষয় নয়—এটি এখন বিয়ের আগে পূর্ণ করতে হবে এমন একটি শর্ত।
নতুন প্রজন্মের মানসিকতা
রায়ান ও আমান্ডা ডোনা এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেছেন। তাদের কাছে বিয়ে মানে ছিল বন্ধু-পরিবারকে জানানো যে তারা জীবনের এক স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তারা বিয়ের আগেই অনেক লক্ষ্য পূরণ করেছিলেন—চাকরিতে পদোন্নতি, নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে বাড়ি কেনা, এমনকি একটি কুকুর দত্তক নেওয়া।
এই ধারণাকে বলা হয় “ক্যাপস্টোন মডেল অব ম্যারেজ”। আগে প্রচলিত ছিল “করনারস্টোন” ধারা, যেখানে মানুষ ২০-এর গোড়ায় বিয়ে করে একসাথে ক্যারিয়ার গড়ত, সঞ্চয় করত এবং ঘরবাড়ি তৈরি করত। এখন বিয়ের আগে শিক্ষাগত ও পেশাগত সাফল্য অর্জনকেই শর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিয়ের বয়স বাড়ছে
মার্কিন জনশুমারি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বিয়ের মধ্যম বয়স এখন পুরুষের জন্য ৩০ এবং নারীর জন্য ২৯। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৮ ও ২৬। গবেষকরা বলছেন, এই নতুন চিন্তাধারাই বিয়ের বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তবে এর ফলে অনেকে মনে করছেন, যদি নির্দিষ্ট মানে না পৌঁছানো যায়—বাড়ি, ভালো বিয়ে আয়োজন বা নিরাপদ ক্যারিয়ার—তাহলে বিয়ে তাদের জন্য নয়।
স্থিতিশীল বিয়ে, কমছে তালাক
বেশি বয়সে বিয়ে করলে এবং সঙ্গী বাছাইয়ে সচেতন হলে দাম্পত্য স্থিতিশীল হয়। এতে বিবাহবিচ্ছেদও কমছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২২ থেকে ৪৫ বছর বয়সী অবিবাহিতদের প্রথম বিয়ের হার ৯% কমেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বিয়ের হার তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও কম শিক্ষিতদের ক্ষেত্রে এই হার দ্রুত কমছে। আয়ের শীর্ষ এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে বিবাহিত মানুষের সংখ্যা সামান্য কমেছে, কিন্তু নিম্ন আয়ের অংশে পতন অনেক বেশি।
বিয়ে একধরনের মর্যাদার প্রতীক
গবেষক ক্রিস্টা ওয়েস্ট্রিক-পেইন বলেন, এখন বিয়ে এক ধরনের “স্ট্যাটাস সিম্বল”। মানুষ চায় বিয়ে করার আগে ডিগ্রি থাকুক, স্থিতিশীল চাকরি থাকুক, বাড়ি কেনার সামর্থ্য থাকুক এবং জীবনসঙ্গীও সেই মানে পৌঁছাক।
অর্থনৈতিক চাপ ও দেরি
ওহাইওর ৩৪ বছর বয়সী ইউজিন হপার বলেন, সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে পড়াশোনার খরচ মেটাতে গিয়ে এবং পরে চাকরির দৌড়ে পিছিয়ে থাকার কারণে তিনি বিয়ে অনেক দেরিতে ভেবেছেন। ক্যারিয়ারে স্থিতি আসার পরই তিনি প্রস্তুত বোধ করেছেন, তবে এতদিন একা থাকার কারণে সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কল্পনা করা এখন তার কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে।
পুরুষদের অবস্থান দুর্বল
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পুরুষ ও নারীর অর্থনৈতিক অবস্থার পার্থক্যও বিয়ে দেরি হওয়ার কারণ। নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে গেলেও অনেক পুরুষ পিছিয়ে পড়ছে। আগে পুরুষদের জন্য আয় উপার্জনকারী হওয়াই যথেষ্ট ছিল, এখন আর সেটি প্রযোজ্য নয়।
শিক্ষাগত ও সামাজিক অমিল
শিক্ষিত নারীরা সাধারণত শিক্ষিত বা উচ্চ আয়ের পুরুষদের সঙ্গেই বিয়ে করছে। এতে কম শিক্ষিত নারীদের সামনে বিকল্প কমে যাচ্ছে।
পিতামাতার সম্পদের প্রভাব
কোনো ব্যক্তির বিয়ে করার সক্ষমতা তার পিতামাতার আর্থিক অবস্থার ওপরও নির্ভর করে। গবেষণা বলছে, উচ্চ আয়ের পরিবারের ৩৭ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৫৯% বিবাহিত, কিন্তু নিম্ন আয়ের পরিবারের একই বয়সী মানুষের মধ্যে মাত্র ৩০% বিবাহিত।
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, বিয়ে এখন আর কেবল ভালোবাসা বা সামাজিক দায়িত্ব নয়। এটি হয়ে উঠছে আর্থিক স্থিতি ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। তবে এই উচ্চ মানসিক ও অর্থনৈতিক শর্ত পূরণ করতে না পারলে অনেক তরুণ-তরুণী বিয়ে বিলম্বিত করছে কিংবা একেবারেই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।