জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষিতে রূপান্তর
কোরিয়ার জলবায়ু বিশ্ব গড়ের চেয়ে দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশটির কৃষিজ মানচিত্রও বদলাচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত শতকে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা প্রতি দশকে প্রায় ০.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে তাপপ্রবাহ, শীতপ্রবাহ ও শক্তিশালী টাইফুন বেড়েছে, যা কৃষিক্ষেত্রে নতুন ফসলের সুযোগ তৈরি করছে।
এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রশাসন (RDA) নতুন ফসল নিয়ে গবেষণা করছে। গত বছর তারা ১৭টি সম্ভাব্য ফসলের তালিকা প্রকাশ করে—এর মধ্যে আছে করলা, আর্টিচোক, ঢেঁড়স, ভারতীয় পালং, কলমি শাক, চায়োট, যাম বিন, হলুদ, আম, জলপাই, অ্যাভোকাডো, লিচু, ড্রাগন ফল, পাইন্যাপল গুয়াভা, প্যাশন ফল, পেঁপে এবং কফি। এর অনেকগুলোই এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে।
RDA শেফদের সঙ্গে নিয়ে এসব নতুন ফসল দিয়ে রেসিপি তৈরি করছে এবং অনেক খাদ্যপ্রেমী ইতিমধ্যেই অনলাইনে তাদের রান্নার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। নিচে কিছু সহজ রেসিপি তুলে ধরা হলো।
১. পুরভরা করলা
করলার উৎপত্তি আফ্রিকায় হলেও এটি চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রান্নায় বহুল ব্যবহৃত। এতে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস প্রচুর পরিমাণে থাকে।
উপকরণ:
২টি করলা, ৪৫০ গ্রাম কিমা করা শুকরের মাংস, ১ টেবিল চামচ সয়াসস, ১ টেবিল চামচ অয়েস্টার সস, ১ টেবিল চামচ কুচানো আদা, ২ চা চামচ কুচানো রসুন, আধা চা চামচ লবণ, আধা চা চামচ সাদা গোলমরিচ গুঁড়া, ১টি ছোট পেঁয়াজ (কুচানো), ১ টেবিল চামচ গাজর (কুচানো), আধা কাপ ময়দা।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. করলা রিং আকারে কেটে ভেতরের বীজ ফেলে দিন। ফুটন্ত পানিতে সামান্য সেদ্ধ করে তিতা কমান। পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন।
২. কিমার সঙ্গে সব উপকরণ মিশিয়ে নিন।
৩. মিশ্রণটি করলার ভেতরে ভরে স্টিমারে রান্না করুন।
২. কলমি শাক ভাজি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচিত শাক এখন কোরিয়ার রান্নায়ও জায়গা করে নিয়েছে। কেউ কেউ এটি দিয়ে কিমচিও বানাচ্ছেন। এতে ভিটামিন এ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান প্রচুর থাকে।
উপকরণ:
২০০ গ্রাম কলমি শাক, ৪ কোয়া রসুন (বাটা), ১ টেবিল চামচ অয়েস্টার সস, ১ টেবিল চামচ চিকেন স্টক, ১ চা চামচ ফিশ সস, সামান্য লাল মরিচ।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. শাকের গোড়া ও শক্ত ডাঁটা ফেলে দিন।
২. রসুন ও মরিচ ভেজে নিন, তারপর শাক দিয়ে ভাজুন।
৩. সামান্য নরম হলে চিকেন স্টক, অয়েস্টার সস ও ফিশ সস দিয়ে নেড়ে পরিবেশন করুন।
৩. কাঁচা পেঁপের সালাদ
পেঁপের উৎপত্তি মধ্য আমেরিকায় হলেও কোরিয়ায় স্মার্ট ফার্ম প্রযুক্তির কারণে এখন দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে উত্তরের গিয়ংগি প্রদেশেও চাষ হচ্ছে। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান ও ত্বক সুরক্ষার গুণ রয়েছে।
উপকরণ:
২ ও আধা কাপ কাঁচা পেঁপে (কুচানো), ২ কোয়া রসুন, ১টি কাঁচা মরিচ, ২ টেবিল চামচ চিনি, ২ টেবিল চামচ ফিশ সস, ১টি লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ শুকনা চিংড়ি, ২ টেবিল চামচ ভাজা বাদাম, আধা কাপ টমেটো (কাটা)।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. পেঁপে খোসা ছাড়িয়ে কুচিয়ে পানিতে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, তারপর ঝরিয়ে নিন।
২. রসুন ও মরিচ একসঙ্গে বাটুন।
৩. এতে চিনি, ফিশ সস, লেবুর রস, শুকনা চিংড়ি ও বাদাম মিশিয়ে নিন।
৪. এবার পেঁপে ও টমেটো দিয়ে সবকিছু হালকা করে বাটুন ও পরিবেশন করুন।
৪. ঢেঁড়সের আচার
ঢেঁড়স বা লেডিস ফিঙ্গার পূর্ব আফ্রিকার উদ্ভিদ। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত এটি রান্নায় ব্যবহার হয়। এখন কোরিয়াতেও পাওয়া যাচ্ছে। এতে ভিটামিন সি ও কে১ প্রচুর আছে এবং ফলিক অ্যাসিড থাকায় গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ উপকারী।
উপকরণ:
২/৩ কাপ পানি, ১/৩ কাপ ভিনেগার, ১ চা চামচ লবণ, ১ টেবিল চামচ আচারের মসলা, রসুন, মরিচ, শসা পাতা (ডিল), টাটকা ঢেঁড়স।
প্রস্তুত প্রণালি:
১. পানি, ভিনেগার ও লবণ ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন।
২. ঢেঁড়সে লবণ মেখে বাইরের সূক্ষ্ম লোম ঝেড়ে নিন।
৩. কাচের বোতলে ঢেঁড়সের সঙ্গে মসলা, রসুন, মরিচ ও ডিল ভরে দিন।
৪. উপর থেকে ঠান্ডা ভিনেগার মিশ্রণ ঢেলে বোতল সিল করুন। তিন দিন রেখে তারপর পরিবেশন করুন।
এই নতুন সবজি ও ফল কেবল কোরিয়ার খাদ্য সংস্কৃতিকে বৈচিত্র্যময় করছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতাকেও সামনে আনছে।