২০২০ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে ২৭ বছরে পা রেখেছিলেন শিভম ডুবে। ওই দিন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে ভারতের খেলা ছিল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় বিরাট কোহলি তাঁকে পাঠান ৫ নম্বরে, যেন জন্মদিনের উপহার। টিম সাউদির বল সোজা গ্যালারির দ্বিতীয় স্তরে পাঠিয়ে ম্যাচ শেষ করেছিলেন ডুবে। সেদিন কোচ রবি শাস্ত্রী উচ্ছ্বাসে বলেছিলেন, “কী শট ছিল! ইউভির ছায়া আছে, বস, ইউভির ছায়া আছে।”
কিন্তু খুব বেশি দিন জায়গা ধরে রাখতে পারেননি ডুবে। সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে রান না পাওয়ায় তিনি বাদ পড়েন। এরপর দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় জাতীয় দলে দেখা মেলেনি তাঁর। তবে এই বিরতিকে কাজে লাগিয়ে ডুবে নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলেন।
আইপিএলে ঘুরে দাঁড়ানো
চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সি তাঁর ভাগ্য বদলায়। মাঝের সারিতে স্পিনারদের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম কুড়ান। তিনি হয়ে ওঠেন সীমাহীন ছক্কাবাজ, যাঁর কাছে বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য কোনো ব্যাপার নয়।
দুই মৌসুম ধরে এমন প্রভাব রাখেন যে ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিশ্চিতভাবেই জায়গা পান প্রথম একাদশে।

পরিসংখ্যানের আলোকে
টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৮ ইনিংসে ডুবের রান ৫৪৬, গড় ৩০.৩৩ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৫৭। ক্যারিয়ারের সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান আরও উজ্জ্বল—১৭৩ ম্যাচে গড় ৩১.০৬ এবং স্ট্রাইক রেট ১৪১.৯৫। সাধারণত ৪ থেকে ৭ নম্বর অবস্থানে ব্যাট করে এমন সাফল্য বিরল।
শুধু ব্যাট হাতে নয়, এখন তিনি দলের এক কার্যকর মিডিয়ামপেসারও হয়ে উঠেছেন। যদিও খুব বেশি ওভার করার সুযোগ পাননি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাঁকে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করছে দল।
ফিল্ডিংয়ে ধীরগতি, কিন্তু বল হাতে চমক
ডুবেকে অনেক সময় মাঠে ধীর মনে হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইয়ে ম্যাচে শুরুর দিকে ফিল্ডিংয়ে ভুল করেন। তবে ইনিংস বিরতির পর অধিনায়ক তাঁকে আক্রমণে আনেন। সেটিই ছিল টার্নিং পয়েন্ট।
সাইম আয়ুবকে তুলে নিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান তিনি। তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান দেন, কোনো বাউন্ডারি দেননি। সেই ম্যাচে তাঁর স্পেল ভারতের পক্ষে গতি পাল্টে দেয়।
বোলিং দক্ষতায় উন্নতি

ডুবে নেটে নিয়মিত বল করেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে। নিজেকে কেবল ব্যাটসম্যান ভাবা বাদ দিয়ে এখন সমান গুরুত্ব দেন বোলিংয়েও। তাঁর উচ্চতা ও শরীরের গঠন তাঁকে বাড়তি বাউন্স এনে দেয়। গতি ও বৈচিত্র যোগ করে নিজেকে কার্যকর বোলারে রূপান্তরিত করেছেন।
বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও বোলিংয়ে তখন তাঁকে খুব একটা ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু সূর্যকুমার যাদব অধিনায়ক হওয়ার পর এবং গৌতম গম্ভীর কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁকে বোলিংয়েও আস্থা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোয় তিনি নিয়মিত উইকেট তুলছেন।
অধিনায়কের আস্থা
সূর্যকুমার যাদব বলেন, “ডুবে নেটে সবসময় কঠোর পরিশ্রম করে। আজকের ম্যাচে পুরো কোটার ওভার করতে পেরে সে খুব খুশি হয়েছে। পরিকল্পনা পরিষ্কার ছিল, বল হাতে দায়িত্ব নিয়েছে। সুযোগ পেলেই সে দলের জন্য কিছু এনে দিতে প্রস্তুত থাকে।”
নীরব নায়ক
শিভম ডুবে হয়তো সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবেন না। কিন্তু তিনি নীরবে নিজের অবদান রেখে চলেছেন। দলের প্রয়োজনীয় সময়ে ব্যাট ও বল দুই হাতে দায়িত্ব নিতে পারছেন। তাঁর যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে—সংগ্রাম, ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল একদিন ফিরেই আসে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















